হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের ৭ সিলেটি পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্রবাস জুড়ে তোলপাড়
বাংলাদেশে পরিচালিত হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী হঠাৎ করে ৭ জন সিলেটি পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রাহকের পলিসির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলায় গ্রেফতার হাওয়ায় সিলেটসহ প্রবাস জুড়ে তোলাপড় সৃষ্টি হয়েছে। ৭ পচিালকের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ হোমল্যান্ড কোম্পানীকে একটি মহলে সিলেটি ৭ পরিচালকে বাদ দিয়ে তাদের দখলে নিতে বিভিন্ন জায়গায় মামলা করে হয়রাণী করা হচ্ছে।
সুত্রে উল্লেখ্য যে, ১১ পরিচালকের মধ্যে কেবল সিলেটের ৭ পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টিকে অনেকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন গোঠা সিলেটবাসী। এদিকে, গ্রেফতারকৃত ৭ পরিচালককে ২৯ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) মাগুরার আদালতে তোলা হবে। মাগুরার বিশিষ্ট আইনজীবী শফিকুজ্জামান বাচ্চু এই মামলাকে ‘হাস্যকর ও বেআইনি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। চেয়ারম্যান,এমডি, জি এম ছাড়া কেবল পরিচালকদের গ্রেফতারের ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ বলে মনে করেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করেছেন। তাদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা দেশে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সোস্যাল মিডিয়ায় অনেক প্রবাসী মন্তব্য করেছেন।
সূত্রমতে, ২৯ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) মাগুরার শালিখার আমলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সুমনা পালের আদালতে গ্রেতারকৃত ৭ পরিচালককে তোলা হবে। এজন্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বেলা ১টার দিকে মাগুরা জেলা কারাগারে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।
মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ওই আদালতে ৭ পরিচালকের জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আসামিদেরকে ২৯ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) স্বশরীরে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, প্রায় ১৪ লাখ টাকার বীমা দাবি না দেয়ায় হোমল্যান্ড লাইফের ৭ পরিচালকের বিরুদ্ধে মাগুরার আদালতে ৪টি মামলা করা হয়। কোম্পানির এজিএম থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি দেশের বীমাখাতেও ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুারেন্সে চলা ‘লুটপাট ও অনিয়মে’র বিরুদ্ধে সিলেটের প্রবাসী পরিচালকরা বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। এজন্যে তাদেরকে ‘মামলার ভয়’ দেখিয়ে কোম্পানি থেকে বের করে দিয়ে কোম্পানি দখলে নেয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে তাদের এই মামলার আয়োজন করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে মোহাম্মদ জুলহাস দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ মামলায় তার নাম নেই। নেই এমডির নামও। বিষয়টি প্রবাসী বিনিয়োগকারীদেরকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে।
সূত্র মতে, এক মামলার বাদী আজর আলী নিজেকে হোমল্যান্ড লাইফের একজন পলিসি হোল্ডার বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। তার মামলা নং-২২৭/২২। গত ২ আগস্ট তিনি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৯ জনকে সাক্ষী করা হলেও তাদের কারো পিতার নাম ও ঠিকানা নেই। আরেক মামলার বাদী নায়েব আলী। তার মামলা নং ২২৮/২২। এই মামলায় ১৫ জনকে সাক্ষী করা হলেও তাদের কারো পিতার নাম ও ঠিকানা নেই। আরেকটি মামলার বাদী সৈয়দ মোফাক্কার আলী রিন্টু। মামলা নং-২২৯/২২। এই মামলায়ও ৩৯ জনকে সাক্ষী করা হলেও তাদের কারো পিতার নাম ও ঠিকানা এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি। মো. হাবিবুর রহমানের দায়ের করা মামলায় (মামলা নং-২৩০/২২) ৪৫ জনকে সাক্ষী করা হলেও তাদের কারো পিতার নাম ও ঠিকানা নেই। ৪টি মামলার বাদী ৪ জন হলেও ঘটনাস্থল মাগুরার শালিখার থানাধীন হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির আঞ্চলিক কার্যালয় বলা হয়। অথচ ওই কার্যালয়ের ম্যানেজার বা দায়িত্ব প্রাপ্ত কাউকেই আসামি করা হয়নি।
আইনজীবী যা বলেন : মাগুরার সিনিয়র আইনজীবী শফিকুজ্জামান বাচ্চু এ বিষয়ে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্ব) সন্ধ্যায় বলেন, মামলা হবে ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান, এমডির বিরুদ্ধে। কিন্তু তা না করে শুধুমাত্র কয়েক জনকে আসামি করা হয়েছে। ১১ পরিচালকের মধ্যে সিলেটের ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি হাস্যকর, এটি বেআইনি মামলা। সাক্ষীদের পিতার নাম ও ঠিকানা নেই, আসামিদের পিতার নাম ও ঠিকানা নেই-এই মামলা টিকবে না বলে মন্তব্য এ আইনজীবীর। খারিজ হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ মামলাটি করিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের গ্রেফতারের বিষয়টি সংসদে তুলবেন এমপি মানিক : সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, যে সকল প্রবাসী বিনিয়োগকারীদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাংলাদেশ ও লন্ডনে তাদের সকলেই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। একসাথে ৭ জন পরিচালককে গ্রেফতারের বিষয়টি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, কোম্পানির চেয়ারম্যান, এমডি, জিএমকে আসামি না করার বিষয়টিও রহস্যজনক। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলক কিছু হয়ে থাকলে প্রবাসীরা বিনিয়োগে বিমুখ হয়ে পড়বেন। তাদের অনেককে আমি ব্যক্তি গতভাবেও চিনি-জানি। বিষয়টি আমি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করব।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন’র উদ্বেগ : প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ সিলেটীদের বৃহত্তম সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন, ঢাকা।
এসোসিয়েশনের সভাপতি সি এম কয়েস সামি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রবাস থেকে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিঃ এর গত ২১ সেপ্টেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ নিতে লন্ডন থেকে ঢাকায় এসেছিলেন প্রবাসী ৭ পরিচালক। সেখান থেকেই গ্রাহকের পলিসির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীরা যদি কোন চক্রান্তের শিকার হয়ে থাকেন সেই বিষয়টি উদঘাটনে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুবিচার প্রত্যাশা করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মতিঝিল থানা পুলিশ মতিঝিলের এল্লাল চেম্বারের কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে কোম্পানির ভাইস-চেয়ারম্যান জামাল মিয়া, পরিচালক যথাক্রমে আব্দুর রব, কামাল মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল আহাদ, জামাল উদ্দিন মখদ্দুস ও আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে মাগুরার ৪ মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। ৭ জনের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান জামাল মিয়া ও পরিচালক কামাল মিয়া হলেন সহোদর। তাদের বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায়। পরিচালক আব্দুল আহাদ ও আব্দুল হাই হলেন সহোদর। তাদের বাড়ি বিশ্বনাথ উপজেলায়। পরিচালক জামাল উদ্দিন মখদ্দুস সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মন্ডলপুর গ্রামের বাসিন্দা। পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা।
অপর পরিচালক আব্দুর রবের ঠিকানা জানা যায়নি। গ্রেফতারকৃত সকলই ব্রিটিশ নাগরিক এবং বাংলাদেশ ও লন্ডনে তাদের অনেক গুলো সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে উঠেছেন প্রবাসীরা। বিষয়টি প্রবাসী বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন