‘১০ গুণ দামে ডাল-সবজি খেলে চালে আপত্তি কেন?’

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রশ্ন রেখে বলেছেন, খাবার টেবিলে বসে ডাল, সবজি, মাছ-মাংস খাচ্ছেন। এগুলোর দাম তো পাঁচ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। তাহলে চালের দাম নিয়ে এত আপত্তি কেন? কৃষকের স্বার্থের কথা কেন বিবেচনা করছেন না? রোববার সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।

খাদ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ কমিটির অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেবলমাত্র ভোক্তার কথা বিবেচনা করলে চলবে না। ডাল, সবজি, মাছ-মাংসসহ প্রত্যেকটি জিনিসের দাম ৫ গুণ, ৭ গুণ এমনকি ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর চালের বাড়তি দাম নিয়ে আপত্তি করছেন, কৃষকদের স্বার্থ চিন্তা করবেন না, এটাতো হতে পারে না।’

দাম না পেলে কৃষক চাল উৎপাদন বন্ধ করে দেবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তখন শুধুমাত্র আমদানি নির্ভর হতে হবে। কাজেই কৃষকের কথা সবাইকে বিবেচনা করতে হবে। তাদের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত ২০ বছরের মধ্যে এবার চালের মজুদ সর্বোচ্চ। এই মহূর্তে ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪৭ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।’

এত মজুদ থাকার পরও চালের দাম কমছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সংগ্রহ করি মোটা চাল। ঢাকার বাজারে মোটা চাল প্রতিকেজি দাম ৪২ টাকা। মফস্বলে এটি ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা। এর বেশি কোথাও নেই।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সরু চালের দাম একটু বেশি। সেটা ৫০ থেকে ৬২ টাকার মধ্যে। তবে আমরা যেটা ডিল করি অর্থাৎ মোটা চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।’

তাহলে সরু চালের দাম কমাতে কারা কাজ করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওটা তো খায় বড় লোকেরা, অফিসারেরা। আমি সবসময় ভোক্তার সঙ্গে কৃষকদের কথাও চিন্তা করতে বলি। কৃষকদের অবশ্যই উৎপাদন খরচ আসতে হবে।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এখন কিন্তু গ্রামের অনেক কৃষক তার ধানী জমিতে পুকুর করেছে। এজন্য তাদের আবার ধান উৎপাদনে ফেরাতে প্রণোদনা দিতেই হবে। এখন তো দিন দিন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কামলা খরচও বেড়েছে। এজন্য তাদের বাড়তি টাকা দিতে হবে।’

এ সময় মন্ত্রী জানান, ঢাকায় মোটা চালের দাম প্রতিকেজি ৪২.৪৪ টাকা, রাজশাহী বিভাগে ৩৭ টাকা, রংপুর বিভাগে ৩৭ টাকা, চট্টগ্রামে ৩৭ টাকা, সিলেটে ৩৬ টাকা, খুলনা বিভাগে ৪০ টাকা এবং বরিশাল বিভাগে ৩৮ টাকা।

তিনি আরও জানান, সরকার এবার বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কেজি প্রতি ৩৮ টাকা করে চাল ও ২৬ টাকা কেজি দরে বোরো ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আতপ চাল ৩৭ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করা হলেও এবার অভ্যন্তরীণভাবে কোনো গম সংগ্রহ করা হবে না।

সরকার নির্ধারিত দামে মিল মালিকেরা চাল বিক্রি করবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গতবছর আগাম বন্যার কারণে আমরা বোরো সংগ্রহ করতে পারিনি। এবার আমন সংগ্রহের টার্গেট ছিল ৩ লাখ মেট্রিক টন, হয়েছে ৬ লাখ মেট্রিক টনের উপরে। বোরো সংগ্রহের টার্গেট ১০ লাখ মেট্রিক টন, আশা করছি, ১২ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।’