১২০০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল হচ্ছে বিএসএমএমইউতে

দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিপজ্জনক রূপ নেওয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনভেশন সেন্টারে করা হচ্ছে এক হাজার দুইশ’ শয্যাবিশিষ্ট ফিল্ড হাসপাতাল।

শনিবার (১০ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হল পরিদর্শন শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান।

জাহিদ মালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সংশ্লিষ্ট সব হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুক্রবার (৯ জুলাই) সারা দিন ঘুরে দেখেছেন রাজধানীর কোন কোন স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল করা যায়। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেশন সেন্টারে আমরা ১০০০ থেকে ১২০০ শয্যার হাসপাতাল দ্রুত সময়ের মধ্যেই করতে পারব। বিএসএমএমইউয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে সুন্দর অবকাঠামো রয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ হাসপাতালটি আমি মনে করি বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে তৈরি হবে। এটি ফাইভ স্টার স্ট্যান্ডার্ড বিল্ডিং। এখানে হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলেই হবে। সব সুযোগ-সুবিধা এখানে থাকবে।

তিনি বলেন, গত ১০ দিনে কমপক্ষে ৯০ হাজার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি রোগী বেড়েছে ৮ গুণ। শতকরা ৮০ ভাগ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালগুলো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী তৈরি করে না। যেখান থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে যেমন অলিগলি, চায়ের দোকান, বাজার- সেখানেই নজর দিতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। এ ভাইরাস থেকে মুক্তির উপায় হলো একে নিয়ন্ত্রণ করা।

সারা দেশে রোগীর চাপ বেড়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক আরও বলেন, বাইরের রোগী এখন ঢাকাতে চলে আসছে। সে কারণে ঢাকাতে চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী, সিলেটে, রংপুরসহ প্রায় প্রতিটি বিভাগে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। সে কারণে জেলা পর্যায়ে নতুন করে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সংকট সামলাতে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আড়াই হাজার কনসেনট্রেটেড অক্সিজেন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ১৮ শ হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা।

উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলেই সংক্রমণ কমছে না। মানুষ মাস্ক পরে না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে না। রোগীরা হাসপাতালে আসছে ৭০ ভাগ ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ডোজ টিকা, চীনের ওষুধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের ৫০ লাখ ডোজ সিনোভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার বায়োএনটেকের ৬০ লাখ ডোজ টিকাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রায় পৌনে ২ কোটি টিকা আগামী এক-দুই মাসের মধ্যেই পাওয়া যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে। সরকারের প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ হাসপাতাল চালু করা হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।