২০১৮ সালের পুরোটাই ভোট উৎসবে থাকবে বাংলাদেশ

গোলাম রাব্বানী : ২০১৮ সালের পুরোটাই ভোট উৎসবে থাকবে বাংলাদেশ। এই ডিসেম্বরে রংপুর সিটি নির্বাচনের পর বাকি পাঁচ সিটিতে ভোট হবে আগামী বছর।

প্রথমে গাজীপুর, মাঝামাঝিতে চার সিটি, এর পরই হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ ছাড়া বছরজুড়েই থাকবে স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনও। আর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে সংসদ নির্বাচন করার জন্য অক্টোবরে চূড়ান্ত করা হবে ভোটের দিনক্ষণ। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে হতে পারে তফসিল।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ভোট (একাদশ সংসদ নির্বাচন) হবে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতম একটি। রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব সামাল দিয়ে কীভাবে এই নির্বাচন করবে তা নিয়ে চিন্তিত নির্বাচন কমিশনও।

এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা, নির্বাচনী আইন সংস্কার, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, সংলাপে পাওয়া দলগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নসহ নানা জটিলতা নিয়েও ভাবছে বর্তমান কমিশন। সব জটিলতা কাটিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান কমিশনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া ২০১৮ সালকে ভোট চ্যালেঞ্জের বছর বলেও আখ্যায়িত করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন কমিশন বলছে, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত রয়েছে তারা। আগামী বছর ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সংসদের আগে ছয় সিটি নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল ও জনগণের আস্থা অর্জন করতে চায় তারা।

আগামী বছর অক্টোবরে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ইসি। তবে তার আগে ছয় সিটি ও আটকে থাকা পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনও শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী বছর হবে ভোটের বছর। বছরজুড়েই থাকবে সিটি, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এরপর শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। এসব নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশন নানামুখী জটিলতায় আছে। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনের আগে স্বল্পসময়ে বিভিন্ন আইন সংস্কার, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, সংলাপের সুপারিশ বাস্তবায়ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, সংসদ নির্বাচনের আগে ছয় সিটি নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। সিটি নির্বাচন নৌকা-ধানের শীষের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। জনগণের কাছে কোন প্রতীকের কেমন কদর, তাও প্রমাণ হবে এ নির্বাচনে। তাই সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নে ব্যাপক হিসাব-নিকাশ করছে প্রধান দুই দল। সেই সঙ্গে দুই দলের শরিকদের সঙ্গে চলছে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছরের মে থেকে অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের অগ্রাধিকারমূলক কাজের চাপ থাকবে; নভেম্বরে তফসিলের আয়োজন চলবে। সে ক্ষেত্রে এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়াসাপেক্ষে ছয় সিটি নির্বাচনের প্রস্তাব থাকছে।

জুনের মধ্যে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন শেষ করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছেন বলে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব নির্বাচন শেষ করার লক্ষ্যে যথাসময়ে কাজ শুরু করা হবে। গাজীপুরের ভোটও মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাকি চার সিটি করপোরেশন এক দিনেই করা যেতে পারে আগের মতোই।

এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, সব দলকে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে মাঠ প্রশাসনের পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসির কাছে। সিইসি বলেন, ইসির স্বল্পসংখ্যক নিজস্ব কর্মকর্তা দিয়ে ভোট আয়োজন সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের ১০-১২ লাখ লোকবলকে মাঠে থাকতে হয়।

ভোটের সময় নিয়ন্ত্রণ আমাদের থাকে; ইসির নিয়ন্ত্রণ আছে ও থাকবে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য নতুন করে আইনেরও পরিবর্তনের দরকার নেই; বিদ্যমান আইন প্রয়োগই যথেষ্ট। তা করতে পারলেই ভোটে শৃঙ্খলা থাকবে।

সিটি নির্বাচনের দিনক্ষণ : রংপুর সিটি নির্বাচন হয়েছিল ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর। সে হিসাবে আগামী ২১ ডিসেম্বর এ সিটিতে ভোট হবে।

গাজীপুর সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। আইন অনুযায়ী, এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। আগামী বছরের ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সিলেট সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। ফলে আগামী বছরের ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

খুলনা সিটিতে ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। আগামী বছরের ৩০ মার্চ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে এবং ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। রাজশাহী সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর। আগামী বছরের ৯ এপ্রিলে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে এবং ৫ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

বরিশাল সিটিতে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর। আগামী বছরের ২৭ এপ্রিলে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে এবং ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

ভোট হবে দুই শতাধিক ইউপি ও পৌরসভায় : আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই আইনি জটিলতা নিরসন করে ১৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও ৩৫ পৌরসভায় ভোট করার চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যে ইউপি ও পৌরসভায় নির্বাচন করতে বাধা নেই তা দ্রুত শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়। এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবগঠিত ৩৬ ওয়ার্ডে ভোট করারও প্রস্তুতি চলছে। বিডি প্রতিদিন