২৫ জীবন বাঁচানো পারভেজকে পদক দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

কুমিল্লার গৌরীপুরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাদে পড়া বাসের যাত্রীদের জীবন বাঁচানো পুলিশ সদস্য পারভেজ মিয়াকে পুরস্কৃত করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার পুলিশ সপ্তাহে তার হাতে কাজের জন্য পুলিশের সর্বোচ্চ পুরস্কার বাংলাদেশ পুলিশ পদক বা বিপিএম তুলে দেয়া হবে।

পুরস্কার হিসেবে পারভেজ মিয়া পাবেন নগদ এক লাখ টাকা। এ ছাড়া পুরো চাকরিজীবনে মাসে বেতনের অতিরিক্ত দেড় হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
পারভেজ মিয়া প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ২৫ থেকে ২৬ জনের। পুরস্কারের এই অর্থ তার কাছে গৌণ। সেই দিনের সেই স্মৃতি তাকে এখনো গর্বিত করে। মানুষের সেবার জন্য শপথ নিয়েই পুলিশ বাহিনীতে আসা তার। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর চেয়ে বড় কাজ আর হতে পারে না বলে তিনি মনে করেন।

পারভেজ মিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। তার বাবা দেশবাসীকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে অস্ত্র হাতে যে যুদ্ধ করেছেন, সেখান থেকেই মানবসেবার আদর্শ গ্রহণ করেছেন তিনি।

বিপিএম পুরস্কার দেয়া হয় দুটি শ্রেণিতে। একটি সাহসিকতায় এবং অপরটি সেবায়। পারভেজ মিয়া পাচ্ছেন সাহসিকতায়। পুলিশ সদরদপ্তর বলছে, অন্যের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলার মতো সাহসী কাজের স্বীকৃতি না দিলে সেটা হবে অন্যায়।

২০১৭ সালের ৭ জুলাই শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গৌরীপুরে প্রায় ৩০ থেকে ৩৪ জন যাত্রী নিয়ে ‘মতলব এক্সপ্রেস’ নামে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ডোবায় পড়ে যায়। এ সময় সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল পারভেজ মিয়া।

পারভেজ তাকিয়ে দেখেন পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত ডোবায় ডুবে যাচ্ছে বাসটি। হাতে সময় নেই, কিছু চিন্তা না করেই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন ডোবায়। গাড়ির জানলার কাঁচ ভেঙে ভেতর গিয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ২৫ থেকে ২৬ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। পারভেজ যাদেরকে উদ্ধার করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিল পাঁচ থেকে ছয় মাস বয়সী একটি শিশুও।

এখানেই শেষ নয়, রেকার দিয়ে গাড়ি ওপরে তোলার পর পারভেজ ময়লা পানিতে ডুব দিয়ে ভালো করে দেখেন ভেতরে কোনো যাত্রী আছে কিনা। এভাবেই তিনি নিশ্চিত হন সবাইকে বাঁচানো গেছে।

যাত্রীদেরকে উদ্ধার করতে যেয়ে বাম হাত ও বুকে প্রচ- ব্যথাও পান পারভেজ মিয়া। কিন্তু এর জন্য তার মনে আক্ষেপ নেই এতকুটু।

পারভেজ মিয়ার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার হোসেনদি গ্রামে। তিনি নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার থেকে ৪২তম ব্যাচে প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৬ সালে পুলিশে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে উত্তরায় হাইওয়ে পুলিশের সদরদপ্তরে কর্মরত।

পারভেজের এই বীরত্বে গোটা কুমিল্লার পুলিশই গর্বিত। তার এই কাজের খবর গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর পর কুমিল্লার পুলিশ সুপার তাকে ১০ হাজার টাকা এবং হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন।

পরে পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ডেকে এনে পারভেজ মিয়াকে নগদ এক লাখ টাকা ও একটি মোটর সাইকেল উপহার দেন।

এবার পারভেজ মিয়া পুরস্কার নেবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। এই খবর এরই মধ্যে জেনেছেন তিনি। আর এ জন্য তার আনন্দের সীমা নেই।

পারভেজ মিয়া বলেন, ‘পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম পাচ্ছি বলে সত্যিই আমি খুবই আনন্দিত। আমার চাকরি জীবনের শুরুতে যে সম্মান পাচ্ছি তা আমার ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে আরো ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।’

‘আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধ। তার নীতি ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার জীবন গড়ে তুলেছি। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া আমার কর্তব্য। আমার কর্তব্য পালনে আমাকে এভাবে সম্মানিত করা হবে তা ভাবিনি।’

হাইওয়ে পুলিশের উপমহাপরদর্শক (ডিআইজি) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘পারভেজ জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত ডোবার পানিতে তলিয়ে যাওয়া গাড়ির ভিতরে থাকা যাত্রীদের প্রাণ রক্ষা করে। তার সাহস ও মানবিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ সে এবার পুলিশ সপ্তাহে বিপিএম পাচ্ছে।’