৩০ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের ‘বিজয়’-‘হত্যা’ নাকি ‘কালো’ দিবস ?

।। এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক কখনোই থেমে থাকে না। স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচন নিয়েই জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনমনে তৈরী হয়েছে না হতাশা। সেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি ৩০ ডিসেম্বর। ২০১৮ সালের এইদিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধিন ১৪ দল ও মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে। অন্যদিকে নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধিন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের চরম ভরাডুবি হয়। কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটের ফল বর্জন করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানায় বিএনপি ও তার মিত্ররা। দিনটিকে সরকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ ও বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করবে। বামপন্থী দলগুলো ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর এই কর্মসূচী নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আসলে ৩০ ডিসেম্বর কি ? গণতন্ত্রের বিজয়, গণতন্ত্র হত্যা নাকি কালো দিবস। সরকারী দলের বন্ধুরা কি সত্যিই সে দিন গনতন্ত্রের বিজয় ঘটাতে পেরেছিলেন নাকি গণতন্ত্রকে আরো বেশী বিতর্কিত করে ফেলেছিলেন ? একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর পরই যে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানকার চিত্র দেখলে কি গনতন্ত্রের বিজয় বলা যায় ? তার পর থেকে গত ২৮ ডিসেম্বরের কয়েকটি পৌর নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি কি প্রমান করে গণতন্ত্রের বিজয়ের কথা ? বরং ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পর থেকে দেশের জনগন ভোট নিয়ে সকল আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যা গণতন্ত্রের জন্য শুভ বিষয় নয়।

বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতা ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক মনে করেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের ঘটনায় মাধ্যমে সরকার ও নির্বাচন কমিশন জনগনের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তারা যে অপরাধ করেছে তা গনতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।’ বাম গণতান্ত্রিক জোট বলেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক কলঙ্কিত নির্বাচন। এমন কলঙ্কজনক নির্বাচন দেশের ইতিহাসে আর হয়নি। নজিরবিহীন ভুয়া ভোটের এই নির্বাচনের আগের দিনই বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রশাসনের সহায়তায় ভোট ডাকাতি হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, একটি সুষ্ঠু অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে যে পরিবেশ থাকা দরকার, তা ছিল না বললেই চলে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ভোটের দিন ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গায় যে ভাবে সংঘাত–সংঘর্ষ হয়েছে, বিরোধী দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের উপর হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে, তাতে ভোটের পরিবেশই শুধু ব্যাহত হয়নি, নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। নির্বাচন এক ধরনের যুদ্ধ হলেও সেটা মারামারি-কাটাকাটি-রক্তপাত-আগুন লাগানোর লড়াই নয়, সেই যুদ্ধ জনগণের আস্থা অর্জনের। এ ক্ষেত্রে শাসকদল নেতা-কর্মী–সমর্থকদের থেকে সহনশীলতা প্রত্যাশিত। কিন্তু সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা শুরু থেকেই ছিলেন বেপরোয়া। তাদের উপরেও হামলা হয়েছে কিন্তু সরকারি দলের উপর হামলার প্রতিটি ঘটনায় বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশ প্রশাসন বাড়াবাড়িও করেছে। কিন্তু যেখানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, সেখানে তাদের ভূমিকা ছিল নীরব।

বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচন তাই জনগনের মনে কোন ধরনের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করে নাই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হলেও কোনও ভাবেই সুষ্ঠু বা অবাধ নির্বাচন হয়নি। গণতন্ত্রপ্রিয় বাংলাদেশের মানুষ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশাই করেছিলেন, কিন্তু নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীনদল তাতে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচনটি হয়েছে, তা আমাদের ইতিহাসে বিরল ও ব্যতিক্রম হয়ে থাকবে। এ রকম নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ আর দ্বিতীয়বার প্রত্যক্ষ করেনি। বাংলাদেশে সামরিক শাসন কাঠামোর মধ্যে একাধিক নির্বাচন হয়েছে, পর পর দুই সেনা শাসক নিজেদের অবৈধ শাসনকে জায়েজ করার জন্য গণভোট করেছেন; যাতে শাসক একমাত্র প্রার্থী, আর কেউ প্রার্থী ছিলেন না। এ ধরনের গণভোটের ফলাফল আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। দুই সেনা শাসক জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ গণভোটে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অনেকের মতে, ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামরিক শাসকদের সেই গণভোটকেও হার মানিয়েছে।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তারা রাতে ব্যালটে সিল মেরে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে অভিযোগ করেছে। জোটসঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।”

১৪ দলীয় জোট শরিক বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদের বক্তব্য ছিল, “দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণ উদ্দীপনা ও আশা নিয়ে অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনের পরে বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়েছে গোটা জাতি। এর মূল কারণ হচ্ছে প্রশাসনের এক শ্রেণির অতি উৎসাহী অংশ ভোটের পূর্ব রাত্রেই ভুয়া ভোটের মাধ্যমে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখাসহ নানা অনিয়ম সংঘটিত করেছে। এ কলঙ্কিত ঘটনার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এ কলঙ্কেতর দাগ মুছতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে।” নির্বাচন চলাকালীন অনিয়মনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ।

এখন প্রশ্ন থেকেই যায় এত কিছু পরও কি ৩০ ডিসেম্বরকে সরকারী দল যে গনতন্ত্রের বিজয় দিবস পালনের ঘোষনা দিয়েছে তা কতটা যৌক্তিক ও নৈতিক।

অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয় ও তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে যাবে না। ভোটের ফলাফল বর্জন, নতুন নির্বাচনের দাবী করেছিল। জাতীয় নির্বাচনের পরপরই অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছিল। কিন্তু, তারা তাদের কোন কথাই রাখে নাই। অল্প সময়ের ব্যবধানে তারা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। গণফোরামের ২ এমপি সহ বিএনপি’র ৬ এমপি শপথ গ্রহন করে। ভাগে সংরক্ষিত আসনের একজন মহিলা এমপি বানায়। সকল উপনির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে শুরু করে। যদিও ঐ নির্বাচনগুলোতে বিএনপি তেমন কোন প্রভাবই বিস্তার লাভ করতে পারছে না। তাদের মুখে কি গণতন্ত্র হত্যার কথা মানায় ? ৩০ ডিসেম্বর ‘গনতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করা কতটুকু নৈতিকতার পরিচয় দেয় ?

তবে, এটি সত্য যে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন পর অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকে শুরু করে সকল উপনির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচনে ছিল ভোটার সংকট। প্রার্থী, প্রিজাইডিং অফিসার, সাংবাদিক সবাই ভোটারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। প্রশ্ন দেখা দিলো কেন এমন হলো?

রাজনৈতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের প্রতি দেশের মানুষের অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। দিনে দিনে ভোটারের সংখ্যা কমেছে। মানুষের আগ্রহ কমেছে রাজনীতির প্রতি। রাজনীতির পরিবেশ না পেয়ে অনেকেই রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ছেন। এটা গণতন্ত্রের জন্য কখনোই শুভ হতে পারে না। তাদের মতে, মানুষের মনের মধ্যে একটা কথা, আমি গেলেই কী, না গেলেই কী? এই রকম ধারণা যখন জন্মে তখন ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকেনা। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, যদি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হয় সেখানে গিয়ে মানুষ কাকে ভোট দেবে? আর তৃতীয়ত, ভোটের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দাবি অনুযায়ী তাদের কারও ৪০ শতাংশ কারও ৩৫ শতাংশ ভোট আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে দেখা যাচ্ছে ২ থেকে ১০ শতাংশ ভোট পড়ছে। নির্বাচনে মানুষের অনাগ্রহ হচ্ছে গণতন্ত্রের দুর্বলতা।

পৃথিবীর সব দেশে নির্বাচনের চরিত্র মোটামুটি এক। কিন্তু বাংলাদেশে যে ১১টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটির বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি কেউই। নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিকদের এই অবিরাম যুদ্ধ কবে শেষ হবে? আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে বলে তত্ত্বাবধায়ক বা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা মানতে চাইছে না। কিন্তু তারা যদি কখনো বিরোধী দলে যায়, তখন ১৯৯৫-৯৬ সালের মতো একই দাবিতে মাঠে নামবে না, সে কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। কেননা রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।

সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষন করলে মনে হয়, ভোটের দিন মানে ছুটির দিন। ভোটের উৎসবে শরিক হওয়া নিয়ে মানুষের খুব আগ্রহ না থাকলেও ছুটির দিনটিকে কেউ হেলায় হারাতে চায়না। গাড়ি বন্ধ থাকায় বাতাসে দূষণও কম থাকে। বড় দূরত্বে না হলেও পাড়ায়-মহল্লায় ঘোরাঘুরি করে, চায়ের আড্ডা বা পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে ভোটের দিনটি অনেকের ভালোই কাটে। ভোটের উৎসব না হলেও ছুটির দিনের উৎসবটি অন্তত জমে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোট দিতে পারেনি এমন অভিযোগ রয়েছে। ঐ নির্বাচনে নিজের ভোট দিতে না পারায় এখন ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বলা যায়, জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব এর পরের সব নির্বাচনে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে যত যা-ই বলা হোক না কেন, নির্বাচনগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ধারাবাহিকভাবে কমছে। যখন ভোটাররা দেখেন তাদের ভোট আগেই হয়ে যায়, তখন তারা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ আর পায় না। এটাই স্বাভাবিক। এই অবস্থা চলতে থাকলে গণতন্ত্র শেষ হয়ে যাবে। পরিণতি ভালো হবে না। যারা ভোটার উপস্থিতি ছাড়াই নির্বাচিত হচ্ছেন তাদের কোনো নৈতিক মানদন্ড থাকবে না। প্রথম ধাপেই গণতন্ত্র বাধাগ্রস্থ হলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে কিভাবে?

এভাবে নির্বাচনের বিষয়ে ভোটাররা আগ্রহ হারালে, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ দেশের ওপর নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে রাজনৈতিক দল শুধু নির্বাচন নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলবে। এটা সবার জন্য যেমন, আওয়ামী লীগের জন্যও তেমন প্রযোজ্য। মনে রাখতে হবে গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকলে কেউ সংগঠন, আন্দোলন, ভোট নিয়ে এগোতে পারে না। গণতন্ত্র চাইলে অবশ্যই নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার আনতেই হবে।

[লেখক : রাজনীতিক ও কলাম লেখক, মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও আহŸায়ক, কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন]