৪৪ বছরের রাজনীতির ‘পুরস্কার’: মঞ্জু

প্রায় চার যুগ ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় নজরুল ইসলাম মঞ্জু। দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন খুলনার রাজনীতিতে। সবশেষ দলের কাউন্সিলে হয়েছেন খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। কিন্তু সম্প্রতি খুলনা মহানগরের ঘোষিত কমিটির সমালোচনা করে তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে হারালেন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ।

দলের পক্ষ থেকে তাকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলা হলেও মঞ্জুর দাবি, ‘আমি দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে বিএনপি করি। বিএনপির কর্মী আমি। কখনো শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিনি। দলের সব কর্মসূচি সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। খুলনায় সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সাহসী পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছি।’

বিএনপির রাজনীতিতে নিজের যুক্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে মঞ্জু বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপিতে এসেছি। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে থেকে রাজনীতি করেছি। দলের দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছি। বিএনপি আজ ৪৪ বছরের রাজনীতির ‘পুরস্কার’ আমাকে দিয়েছে।’

শনিবার মঞ্জুকে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এসব কথা বলেন তিনি।

এর আগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলে তিনি জবাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য হয়নি বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে। একই দিনে তার জায়গায় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

খুলনা অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অব্যাহতির খবরে বিএনপিতেও ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর দলের কেন্দ্রীয় কিছু নেতা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেন। শীর্ষ নেতাদের ‘ভুল’ বুঝিয়ে শেষ পর‌্যন্ত তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আপনার মতো আমিও শুনেছি। দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে আর কিছু বলার সুযোগ নেই।’

গত ৯ ডিসেম্বর অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক, তরিকুল ইসলাম জহিরকে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও মো. শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করে খুলনা মহানগরীর নতুন কমিটি দেয় বিএনপি। প্রায় ২৯ বছর পর নগর কমিটির নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়ে ১২ ডিসেম্বর অনুসারীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সেখানে তিনি নতুন কমিটি পুনর্মূল্যায়ন করার আহ্বান জানান। এই সংবাদ সম্মেলনের পরই শোকজ করা হয় তাকে।

মঞ্জুর অভিযোগ, ‘কারও সঙ্গে আলোচনা না করে হঠাৎ খুলনায় দুটি কমিটি দেওয়া হয়েছে। মহানগর ও জেলায় যাদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে, খুলনায় তাদের অবদান কী? তারা কি আমাদের থেকে অনেক বেশি যোগ্য? এই কথাগুলোই আমি বলেছিলাম। তিন মাস আগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২৯ পৃষ্ঠার দরখাস্ত দিয়েছি। সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। উল্টো অ্যাকশন নেয়া হয়েছে।’

অব্যাহতির বিষয়টি অবগত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে মঞ্জু বলেন, ‘খুলনায় দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম চলছে, এটা আমি লিখিতভাবেও জানিয়েছিলাম। প্রথমত, এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমি দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে বিএনপি করি।’

নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মত, দল গঠনে তিনি অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিকার পাননি। বরং দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বলেন, ‘আমি তো অন্যায় কিছু করিনি। দলের জন্য যা কিছু ভালো মনে হয়েছে, তা-ই করেছি। এই সিদ্ধান্তের কারণে ভবিষ্যতে নিষ্ঠাবান, ত্যাগী নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হলো, নেতাকর্মীদের আস্থার সংকটও সৃষ্টি হলো।’

দলের অব্যাহতির সিদ্ধান্তে নতুন কিছু চিন্তা করছেন কি না, এমন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘খুলনায় বিএনপিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্ত আমার প্রতি আবিচার। বিএনপির রাজনীতি করেই আমি তৈরি হয়েছি। বিএনপির কারণেই আজ আমি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিএনপি করে যাব। আমি বিএনপির কর্মী। বিএনপি ছাড়া কোনো কথা নেই। এখন বিএনপিতে আছি, আগামীতেও বিএনপিতে থাকব।’

বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করায় মঞ্জুকে অব্যাহতি!