৪ বছরের শিশুকে স্কুলের বাথরুমে ডেকে দুই শিক্ষকের ধর্ষণ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার একটি অভিজাত স্কুলে চার বছর বয়সী এক ছাত্রীর ওপরে তারই দুই শিক্ষক যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্রীটির ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে নির্যাতনের ঘটনার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পরে সন্ধ্যায় দুই শিক্ষক – অভিষেক রায় ও মুহম্মদ মফিজুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দক্ষিণ কলকাতার জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন নামের বেসরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক বিভাগের ওই ছাত্রী বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বাড়ি যাওয়ার পরেই তার মা লক্ষ্য করেন যে তার যৌনাঙ্গ থেকে অবিরাম রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরে তিনিই প্রথম সন্দেহ করেন যে শিশুটির ওপরে যৌন নির্যাতন চালানো হয়ে থাকতে পারে।
থানায় অভিযোগ জানানোর পর রাতেই মেয়েকে নিয়ে কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে যান শিশুটির বাবা-মা। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সকালে ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই স্কুলে ভিড় জমান অভিভাবকরা- শুরু হয় বিক্ষোভ।
এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে, সন্ধ্যা পর্যন্তও অভিভাবকরা স্কুলে ভিড় করে বিক্ষোভ করছিলেন। পুলিশ বলছে, কয়েকজনের ছবির মধ্যে থেকে ওই শিশুটি দু’জন শিক্ষককে চিহ্নিত করেছে।
সে জানিয়েছে চকোলেট দেয়ার কথা বলে স্কুলের বাথরুমে নিয়ে গিয়ে তার ওপরে অত্যাচার চালায় ওই দুই শিক্ষক। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে উল্লেখ্য করে স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা শর্মিলা নাথ বলছেন, ‘বিষয়টা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। আমাদের দয়া করে একটু সময় দিন। পুলিশ নিশ্চয়ই তাদের তদন্ত শেষ করে আমাদের জানাবে। কথা দিচ্ছি, পুলিশের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার পরে আমরা অভিভাবকদের সঙ্খোলাখুলি জানাব সব কিছু।’
ঘটনাচক্রে এই একই স্কুলে বছর তিনেক আগেও একটি ছাত্রীর ওপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। তখনো স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে ক্লোজড সার্কিট টিভি, নারী সহায়িকা নিয়োগের মতো নানা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল।
তবে স্কুল কর্তৃপক্ষও যেমন স্বীকার করছেন তেমনই অভিভাবকরাও বলছেন, কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয় নি। আবারো একই অভিযোগ ওঠায় স্কুলে মেয়েদের পাঠাতেই এখন ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা।
এক ছাত্রীর বাবা বলছিলেন, ‘আজ এই বাচ্চাটির সঙ্গে একটা ঘটনা হয়েছে, কাল যে আমার মেয়ের সঙ্গে হবে না, তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে?’
অপর এক ছাত্রীর মা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুলের দায়িত্বে আমরা বাচ্চাদের ছেড়ে দিই। এই যদি তাদের দায়িত্ববোধ হয়, কীসের ভরসায় মেয়েকে স্কুলে পাঠাব?’
‘সকাল থেকে খবরটা শুনে আমি বিষয়টা নিতে পারছি না, অসুস্থ লাগছে।’ বলছিলেন এক ছাত্রীর বাবা।
দেশটিতে স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষক নন এমন কর্মীদের দ্বারা ছাত্রীদের যৌন হেনস্থার ঘটনা এই প্রথম নয়। ব্যাঙ্গালোর শহরে এরকমই এক নির্যাতনের ঘটনায় সারা শহর জুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল।
দু’দিন আগেই অরুণাচল প্রদেশের একটি স্কুলে ৮৯ জন ছাত্রীকে পোশাক খুলিয়ে শাস্তি দেয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। কন্যা-শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
যেদিন জি ডি বিড়লা স্কুলের চার বছর বয়সী এই ছাত্রীর ওপরে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠল, ঠিক তার আগের দিনই জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো বা এন সি আর বি জানিয়েছে, বিগত এক বছরে শিশুদের ওপরে যৌন হেনস্থার ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্রাইয়ের কর্মকর্তা অভিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এ যেন একটা অদ্ভুত সমাপতন। কাল সন্ধ্যাবেলায় আমরা এন সি আর বি-র সদ্য প্রকাশিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করছিলাম যেখানে বলা হয়েছে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে শিশুদের ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
আর আজ সকালে এই ঘটনা সামনে এল। তথ্য থেকেই প্রমাণিত যে শিশুরা তাদের পরিচিত-ঘনিষ্ঠদের কাছেই সবথেকে নিরাপদ, এই মিথটা ভেঙ্গে যাচ্ছে। ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি যৌন হেনস্থার শিকার হয় শিশুরা।’
অভিক আরো জানান, ‘যতক্ষণ না এ ধরনের ঘটনা আটকানোর জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, ততক্ষণ হয়তো জি ডি বিড়লাই এই তালিকায় শেষ নাম নয়। আরো ঘটতে পারে এরকম।’
জি ডি বিড়লা স্কুলের ছাত্রীটির ওপরে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজস্ব তদন্ত শুরু করেছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী বলছেন, যে শিক্ষক এই কাজ করতে পারেন, তাকে কঠোরতম শাস্তি দেয়া দরকার। সূত্র: বিবিসি
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন