৬ বছর আগে নিহত ছাত্রদল নেতাও মামলার আসামি!

সিলেটে আবারও বিএনপি নেতকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। আর এবার ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০১২ সালে খুন হওয়া ছাত্রদল নেতা মাহমুদ হোসেন শওকতকে।

মো. ফাহিম আহমদ হামীম নামের এক ব্যক্তি গত ২৩ ডিসেম্বর (রোববার) আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. একে আবদুল মোমেনের প্রচারণায় হামলার অভিযোগ এনে বিস্ফোরক আইনে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় আলোচিত এ মামলাটি করেন।

মামলার ঘটনাস্থল কানিশাইল খেয়াঘাট এলাকায় গিয়ে আশপাশের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তারা দোকানে ছিলেন। ওই সময়ের মধ্যে খেয়াঘাট এলাকায় কোনো ককটেল হামলার শব্দ তারা পাননি। তবে হয়রানির ভয়ে ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশে রাজি হননি।

এদিকে মামলার আসামিদের বেশিরভাই হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে নগরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডের নুরে আলা কমিউনিটি সেন্টারে সিলেট মহানগর বিএনপির জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া ১২০ আসামির নাম উল্লেখসহ দায়ের করা মামলাটির ২৭ নম্বরে নাম রয়েছে ছয় বছর আগে নিহত তৎকালীণ ছাত্রদল নেতা মাহমুদ হোসেন শওকতের নাম। মামলায় বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামিও করা হয়েছে।

জানা গেছে, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছাত্রদলের তৎকালীন নেতা মাহমুদ হোসেন শওকত ২০১২ সালের ২২ মার্চ দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে নগরের উপশহরে খুন হন। আর তাকেই ২৩ ডিসেম্বর বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় (নম্বর-৩১ (১২) ১৮) আসামি করা হয়।

মামলার বাদী সিলেট নগরের নাইওরপুর মৌবন ১২/১ বাসার বাসিন্দা মো. ফাহিম আহমদ হামীম এজাহারে উল্লেখ করেন, কোতোয়ালি থানার কানিশাইল খেয়াঘাটের সামনে ২৩ ডিসেম্বর রোববার রাত ৯টায় খেয়াঘাটের সামনে রিকশাযোগে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. মোমেনের নৌকা প্রতীকের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ফাহিম। এ সময় আসামিরা তার পথরোধ করে রিকশা থেকে প্রচার মাইক খুলে নেন। বাধা দিলে আসামিরা তাকে গালিগালাজ, মারধরসহ হত্যার হুমকি দেন এবং তার চারপাশে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।

বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে কোতোয়ালি থানার টহল পুলিশ এগিয়ে এলে আসামিরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাল স্কচটেপ মোড়ানো দু’টি ককটেল উদ্ধার করে বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন মামলার বাদী।

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হুসাইন, ঘটনার দিন লন্ডন থেকে দেশে ফেরা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক, সহ-সভাপতি, সিটি কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন শামীম ও মহানগর বিএনপির সহসভাপতি হুমায়ন কবীর শাহীন, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী, ১ নম্বর ওয়াড কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদি, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা রেজাউল করিম নাচন ও জেলা ছাত্রদল সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন।

এ বিষয়ে মহানগর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত চৌধুরী সাদেক বলেন, ২৩ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মহানগর বিএনপির জরুরি সভা চলছিল নগরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডের নুরে আলা কমিউনিটি সেন্টারে। যা মামলার ঘটনাস্থল থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে। ওই সভায় মহানগর বিএনপির পদধারী সব নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। আমি নিজে ওই সভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলাম। অথচ আমরা সবাই ওই ‘গায়েবি’ মামলার আসামি হলাম।

তিনি আরও বলেন, এর চেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো আজ থেকে ছয় বছর আগে খুন হওয়া ছাত্রদল নেতা মাহমুদ হোসেন শওকতকে আসামি করেছে আওয়ামী লীগ। এতে প্রমাণ হয় আওয়ামী সরকার মিথ্যা মামলা ও দমনপীড়ন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম মিয়া বলেন, মামলাটি একজন বাদী হয়ে দায়ের করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে এজাহারের সব কিছু খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকলে তদন্ত করে তাদের নাম বাদ দেয়া হবে।