৭ রোহিঙ্গাকে ‘মৃত্যুকূপে’ ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত

অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে মিয়ানমারে পাঠাতে বুধবার সাত রোহিঙ্গা সদস্যকে বাসে চড়িয়ে সীমান্তে নিয়ে গেছে ভারতীয় পুলিশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিপীড়িত এ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশটি এই প্রথম এমন কোনো উদ্যোগ নিয়েছে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইনে নির্যাতনের শিকার হয়ে ৪০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো এ সাত রোহিঙ্গা ২০১২ সাল থেকে ভারতীয় কারাগারে আটক ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার অবৈধ রোহিঙ্গাদের দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। কাজেই তাদের শনাক্ত করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আসামের পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বসকার জয়টি মাহান্ত বলেন, বৃহস্পতিবার ওই সাত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হবে। আমরা সব অবৈধ বিদেশিকে তাদের নিজ দেশে পাঠিয়ে দেব। এটি এখন নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ।

তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের জোর করে ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

জাতিসংঘের বর্ণবাদবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টার টেনডিই আচিউম বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য, নির্যাতন, ঘৃণা ও ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন স্বীকার করতে ভারত সরকারের আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব রোহিঙ্গা নিজ দেশে নির্যাতনের শিকার। কাজেই তাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিতে হবে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর মতো নিরাপদ নয়।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে গত বছরের আগস্টে তল্লাশিচৌকিতে হামলার পর সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এর পর প্রাণ বাঁচাতে দলে দলে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, এ দফায় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের প্রায় সবাই অভিযোগ করেছেন, মিয়ানমারের সেনারা রাখাইনে অভিযানের নামে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে।

মিয়ানমারের এই সামরিক কর্মকাণ্ডকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। তারা বলছে, গত বছরের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এর পর সামরিক বাহিনী জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে।

গত বছর ভারতে অবস্থানকারী সব রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। তবে বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট হলে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের না তাড়ানোর রায় হয়।