৮০ গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কা

বেশ কিছু পোশাক কারখানায় আগষ্ট মাসের বেতন-ভাতা এখনও পরিশোধ করা হয়নি। এর ফলে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে দাখিল করা গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে বাণিজ্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে ২৫ সেপ্টেম্বর চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা ২-এর উপসচিব মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পোষাক শিল্প রপ্তানী আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জিডিপিতে অবদান ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রসন এবং বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে আর্থিক সংকট, উৎপাদনে সীমাবদ্ধতা, সঠিক অবকাঠামোর অভাব, নেতিবাচক প্রভাব, কাজের অর্ডার কম বা না পাওয়া বা অর্ডার বাতিল হওয়ার কারণে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের অনেক সময় বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করতে পারে না বা পরিশোধ করে না।

এছাড়াও হঠাৎ ফ্যাক্টরী অন্যত্র স্থানান্তর, কোন প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই শ্রমিক ছাঁটাই, গার্মেন্টস বন্ধ করে দিয়ে কর্তৃপক্ষের ফ্যাক্টরীতে অনুপস্থিত থাকা ও মোবাইল ফোন বন্ধ রাখার কারণে শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।

করোনা পরবর্তী সময়ে পোশাকের ক্রয়াদেশ ভালো ছিল। পোশাকের ব্যাপক চাহিদার কারণে পোশাক রপ্তানী
পরিস্থিতির স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রুশ ব্যাংকের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়াসহ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প পণ্য রপ্তানি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

অনেক গার্মেন্টস মালিক রাশিয়ার সাথে অর্থ লেনদেনে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় অর্ডার অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুত করার পরও তা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী গার্মেন্টসের ফেব্রিক্সসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি আমদানি সংকট, কাজের অর্ডার কম বা না পাওয়া কিংবা বাতিল ইত্যাদি কারণে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও সাব-কন্ট্রাক্টের গার্মেন্টসগুলোর উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় কিছু কিছু গার্মেন্টস মালিক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সময়মত পরিশোধে ব্যর্থ হয়। এছাড়া যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে পোশাক বিক্রির গতি কমে যাওয়ায় তারা প্রতিশ্রুত ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিচ্ছে কিংবা পিছিয়ে দিচ্ছে। ফলে পোশাক রপ্তানী কিছুটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সরকার, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে শ্রমিকরা যেন তাদের বেতন-বোনাসসহ অন্যান্য ভাতাদি সঠিকভাবে ও সময়মত পায় সে বিষয়টির প্রতি নজরদারী বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। মালিকপক্ষ কোন ফ্যাক্টরী বন্ধ করলে বা শ্রমিক ছাঁটাই করলে সেটা পূর্বেই যথাযথ প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ শ্রম আইন অনুযায়ী করা আবশ্যক।

এছাড়া যে সকল গার্মেন্টস মালিক সময়মত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে সে সকল গার্মেন্টসগুলোকে
চিহ্নিত করে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুসন্ধান পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। উপরোক্ত বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ‘ছকে’ উল্লিখিত গার্মেন্টসগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি নিয়মিতভাবে পরিশোধের ব্যবস্থা করা। পণ্যের বহুমুখীকরণসহ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিম ইউরোপের দেশ ব্যতীত অন্যান্য দেশে বাজার গবেষণা ও স্টাডির মাধ্যমে নতুন বাজার সৃষ্টিতে উদ্যোগী হওয়া। মাঝারি, ক্ষুদ্র ও সাব-কন্ট্রাক্ট রুগ্ন কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের আর্থিক ও কারিগরি প্রণোদনাসহ বিজিএমইএ বিকেএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয় কর্তৃক দ্রুত নীতিমালা প্রণয়ন পূর্বক বিদেশী অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে অসম
প্রতিযোগিতা পরিহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে বিদেশী ক্রেতাদের অর্ডার ও পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য লবিং জোরদার করা।

শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধে হঠাৎ করে শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধ না করে শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা লে-অফ ও শ্রমিক ছাঁটাইসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পোশাক কারখানায় কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ নিরাপদ কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করা । শ্রমিক অসন্তোষসহ কোনরূপ অপ্রীতিকর ঘটনার আগাম তথ্য পাওয়া গেলে তা পূর্বেই প্রশাসন, মালিক-শ্রমিক নেতাদের সমন্বয়ে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।