চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড শীত; কম্বল চায় ওরা…

চুয়াডাঙ্গায় গরমের সময় যেমন গরম বেশি তেমনী শীতের সময়ও বেশি শীত। মূলত প্রাকৃতিক উপায়ে কার্তিক মাস থেকে শীত শুরু হলেও এক কাপড়েই স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছিল সব শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু অগ্রহায়ণ মাস শুরু হওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পর থেকে পুরোপুরি শীতের অনুভূতি থাকলেও গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ঠাণ্ডার তীব্রতা।

রীতি অনুসারে এ শীতকাল থাকবে আগামী পৌষ-ফাল্গুন পর্যন্ত। এখন থেকে দিন যতই যাচ্ছে ততই শীতও বাড়ছে চুয়াডাঙ্গায়। আবহাওয়া চিত্রে আগামী দিনগুলোতেও শীতের তীব্র ঠাণ্ডায় কাহিল হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষ। এতে করে ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছে শিশু বৃদ্ধসহ সব বয়সীরাও। আবার অনেক জায়গায় ঠাণ্ডার কবল থেকে একটু স্বস্তি পেতে আগুন জ্বালিয়ে গরমের উষ্ণতাপ গ্রহণও করছে শীতে কাহিল হওয়া মানুষ।

এদিকে, বিশেষ করে এখন শীতের পোশাক জ্যাকেট সোয়েটারসহ দুই-তিনটা কাপড় না পরে বাইরে বের হওয়ার কোন অবস্থা নেই চুয়াডাঙ্গায়। সন্ধ্যার পর থেকেই আস্তে আস্তে লোকশূন্য হয়ে পড়তে শুরু করেছে বাজারঘাটে। তবে শীতের কাঁপুনিতে বিপাকে পড়েছে রাতে রিক্সা-ভ্যান অটোবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা। শীতের তীব্রতায় বাইরে লোকজনের খুব একটা আনাগোনা না থাকায় ভাড়াও তেমন একটা হচ্ছেনা বলেও দাবি তাদের। আবার বিভিন্ন পেশার দিনমজুররাও পড়েছে বিপাকে। পেটের তাগিদে বাজারে আসলেও তেমন কোন কাজ পাচ্ছেনা তারা।

রিক্সাচালক রবিউল হক বলেন, শীতে খুব একটা প্যাসেঞ্জার না থাকলেও ঠাণ্ডার সাথে হিমেল বাতাসে কাবু হয়ে পড়ছি আমরা। রিকসা চালাতেও খুবই কষ্ট হচ্ছে আমাদের। আমরা গরীব মানুষ তাই কম্বল বা গরম কাপড় কেনার সাধ্য নেই। যদি সরকার আমাদের কম্বল দিতো তাহলে গাঁয়ে দিয়ে রিকসা চালালে অনেকটা কষ্ট কমে যেত।

অপরদিকে, দিনে বা রাতের হিমেল বাতাসে ঠাণ্ডার তীব্রতা বাড়ায় চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষের মধ্যে পড়েছে শীতের প্রভাব। সকাল সকাল লেপের মধ্যে ঢুকে পড়ছে মানুষ। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেনা তারা। এ শীতের দাপটটা বেড়েছে মাত্র সপ্তাহখানেক ধরে। যার কারণে চুয়াডাঙ্গার ফুটপাতসহ শহরের বিভিন্ন মার্কেট শপিংমলে গিয়ে গরম কাপড় কেনার ধুম পড়েছে মধ্য ও উচ্চবিত্ত মানুষের মধ্যে। কিন্তু বিপাকে পড়েছে গরীব অসহায় খেটেখাওয়া মানুষসহ রাত জাগা পাহারাদাররা।

পাহারাদারদের অনেকেই বলছেন, আমরা এখনও কম্বল পাইনি। শীত ঠেকানোর তেমন কোন জাম্পার বা কম্বলও আমাদের নেই। গত কয়েক বছর আগে পেয়েছিলাম সেটাও নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বেশিরভাগ পাহারাদারই কষ্ট করে কর্ম দায়িত্ব পালন করছি। প্রতি বছরেই সরকারী কম্বল আসে। কিন্তু অনেকই পায় আবার অনেকই পায়না। আমরা সরকারী কম্বল পেলে ঠাণ্ডার কষ্ট থেকে বাঁচতে পারতাম।

এক ট্রাক চালক বলেন, দিন যতই যাচ্ছে শীত যেন ততই শরীরে বিঁধছে। পড়তে শুরু করেছে কুয়াশাও। এতে করে আমাদের রাস্তায় চলাচল করতেও কিছুটা ব্যঘাত ঘটছে ভোর সকাল রাতে।

আরেক পাহারাদার বলছে, আমাদের সারা রাত জেগে দোকান পাহারা দিতে হয়, রাত যত গভীর হয় ঠান্ডাও তত বাড়তে থাকে। কম্বল না থাকায় কষ্ট নিয়েই কর্মদায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে আমাদের। এতে কর্তব্য পালনেও কিছুটা ব্যঘাত ঘটছে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের কম্বল খুব দরকার।

গত বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল (১৬ ডিসেম্বর) শুক্রবারও সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সারা দেশের রেকর্ড। (১৭ ডিসেম্বর) শনিবার চুয়াডাঙ্গার সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অনুভূত হয়েছে। শৈত্ব প্রবাহের মধ্যেদিয়ে চলতে হবে আগামী কয়েকদিন।

আবহাওয়া সূত্র মতে এখন তাপমাত্রার পারদ প্রতিদিনই কমতে থাকবে। তাই বাড়বে শীতের তীব্রতা। তবে সকাল গড়িয়ে সূর্যের দেখা মিললেও হিম বাতাসের কারণে কাজে আসছেনা সূর্যটাও।
সকাল আর সন্ধ্যায় কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে দু-তিনদিন ধরে। বেলা বাড়লেও কুয়াশা দূর হচ্ছেনা সহজে। মিটমিটে রোদ যদুবা দেখা যাচ্ছে তাতে গাঁয়ে উত্তাপ হচ্ছেনা। আবার বিকেল গড়াতে না গড়াতে শুরু হচ্ছে শীতের তীব্রতা। এতে করে ঠাণ্ডায় বের হওয়া যাচ্ছে না শীতের আক্রমণ থেকে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া সূত্র থেকে আরও জানান, শৈত্বপ্রবাহের সাথে বাতাস হওয়ায় প্রচুর ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। তবে আগামী দিনগুলোতে কনকনে শীত প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান।

এদিকে, রিক্সাচালকসহ যারা রাত জেগে দোকান অফিস আদালত পাহারা দেয় তাদের অনেকের দাবি, শীতের সময় অনেকটা এগিয়ে এলেও সরকারী কম্বল এখনও আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবে শুনেছি সরকার থেকে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। এই শীতের মধ্যেও রাত জেগে কষ্ট করে পাহারা দিতে হচ্ছে পৌর এলাকার বড়বাজার পুরাতন গলি রেলবাজারসহ বিভিন্ন বাজারের পাহারাদারদেরা। শীতের শুরু থেকেই যদি সরকারী কম্বল পাওয়া না যায় তাহলে শীত কমে গেলে সে কম্বল কোন কাজে আসবে না বলেও মন্তব্য তাদের।

এদিকে, সুশীল সমাজের নাগরিক বাংলাদেশ ক্যাব অ্যাসোসিয়েশনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. মানিক আকবর বলেন, শীত ভালোভাবেই শুরু হয়ে গেছে। এতে করে দিনের বেলার চেয়ে যারা রাত জেগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পাহারা দেয়, পেটের দায়ে যারা রাতে রি·া চালায়, ঘরবাড়ী ভালো পোশাক না থাকায় বাসটার্মিনাল, রেলস্টেশন এলাকায় থাকা গরীব অসহায়রা তীব্র শীতের মধ্যেও কষ্টে রাতিযাপন করছে। সেসকল মানুষকে চিহ্নিত করে সবার আগে দ্রুত তাদের মাঝে সরকারী কম্বল বিতরণ করা উচিৎ। সব মানুষের চেয়ে ওইসকল মানুষ সবথেকে বেশি কষ্টে দিন যাপন করে। তবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ মানবিকের জায়গা থেকে ওই সকল মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এখনই কম্বল শীতবস্ত্র উচ্চবিত্তশালীদেরও দেয়া উচিত বলেও মনে করেন জেলার সচেতন মানুষ।

কম্বল বিতরণের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খাঁন বলেন, শীতের কম্বল ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে উপজেলায় উপজেলায়। বিজয় দিবসের বিভিন্ন কার্যক্রম থাকায় কিছুদিন দিতে পারেনি। এখন থেকে গরীব অসহায়দের মাঝে ডিসেম্বর মাসজুড়েই বিতরণ করা হবে কম্বল।