পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় রাহাত হত্যা মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় মেধাবী ছাত্র রাহাত হত্যাকান্ডে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ।

মঠবাড়িয়া থানা পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক (সাব ইন্সপেক্টর) রাসেল মোল্লা ২৬ আগস্ট মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।

রাহাত হত্যা মামলায় ১২ জন এজাহারনামীয় ও ১০/১৫ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে এজাহারভুক্ত ৩ নং আসামিসহ ৩ জনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া আসামিদের মধ্যে রয়েছে সাজ্জাদুর রহমান ওরফে বাবু (২৩), রুম্মান ফরাজী (২১) এবং রাসেল কবিরাজ (৩২)।এছাড়াও সন্দিগ্ধ গ্রেপ্তারকৃত আসামি ওহেদুজ্জামান চুন্নু (৪৮) ও সেন্টু হাওলাদারের (৫১) নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

চার্জশিটে অভিযুক্ত ৯ জনের মধ্যে রয়েছে সাব্বির খান (২০) ,রফিকুল ইসলাম (১৮), মোঃ রায়হান ওরফে রনি খান (২০),আলাউদ্দিন খান (১৯),জাহিদ হাসান ওরফে জাহিদ বেপারী (১৭), শাওন মাল (১৭),মোঃ শাওন মিয়া (১৬),মোঃ আসাদুল হক ওরফে আসাদ ফরাজী (১১) এবং আব্দুর রহমান ওরফে নাদিম (১৭)।

এ মামলার ১ নং আসামি জাহিদ হাসান ওরফে মোঃ জাহিদ বেপারী (১৭ বছর ৮ মাস ১২ দিন) ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে। সে মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর বড় মাছুয়া গ্রামের মোঃ খোকন বেপারীর ছেলে। পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ও ক্রোকী পরোয়ানা ইস্যু করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

অভিযুক্ত আসামি সাব্বির খানকে গ্রেফতার করে এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি, মোঃ রায়হান ওরফে রনি খানকে গ্রেফতার করে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর, আলাউদ্দিন খানকে গ্রেফতার করে এ বছরের ২৯ জানুয়ারি বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রফিকুল ইসলাম ২৭ এপ্রিল স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়ে জামিনে রয়েছে।

বয়স ১৮ বছরের নিচে থাকায় আইনের সংঘাতে শিশু আসামি শাওন মাল,আসাদ ফরাজী ও নাদিমকে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিশু আসামি শাওন মিয়া (১৬ বছর ৫ মাস ২ দিন) ২০২২ সালের ২৫ মে বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে।

এ মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ আসামি মোঃ আসাদুল হক ওরফে আসাদ ফরাজী। তার বয়স ১১ বছর ৯ মাস ২৯ দিন।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিনা এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়ে থাকলে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে কিনা তা জানা যায়নি। এছাড়াও এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী একাধিক উল্লেখ করা হলেও মূল পরিকল্পনাকারী কে তা জানা যায়নি।

নিহত রাহাত হাওলাদার (১৯) ১০ নং হলতা গুলিয়াখালী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড উত্তর গুলিয়াখালী গ্রামের মোঃ সাহা জালাল হাওলাদারের পুত্র এবং ডৌয়াতলা ওয়াজেদ আলী খান ডিগ্রি কলেজে অধ্যায়নরত ছিল।জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মেধাবী ছাত্র রাহাত নৌ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল।

স্থানীয় এক মাদ্রাসা ছাত্রীর সাথে রাহাতের বন্ধু তরিকুল ইসলাম শুভ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এদিকে আসামি সাব্বির খানও ওই ছাত্রিকে পছন্দ করত।এ নিয়ে শুভ ও সাব্বিরের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্ধর সৃষ্টি হয়। ঘটনার ৪/৫ দিন আগে শুভ তার বন্ধুদের নিয়ে সাব্বির খানের বাড়ির কাছে গিয়ে সাব্বিরকে হুমকি দিয়ে আসে।এতে সাব্বির খান ও তার দলীয় লোকজন অপমানবোধ করে।আর এ অপমানের প্রতিশোধ নিতেই শুভ ও তার বন্ধু রাহাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

ঘটনার দিন ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর টিয়ারখালী মজিদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শেখ রাসেল স্মৃতি মিনিবার ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলা দেখে রাহাত তার বন্ধুদের নিয়ে পিক আপ গাড়িতে বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়।আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পথে ওৎ পেত থেকে পিক আপ গাড়ির গতিরোধ করে প্রথমে শুভকে গাড়ি থেকে টেনে নিচে নামায়।এরপর জাহিদ বেপারী তার হাতে থাকা ছোড়া দিয়ে শুভকে খুনের উদ্দেশ্যে আঘাত করতে থাকে।এ সময় রাহাত দ্রুত তার বন্ধুকে উদ্বারের চেষ্টা করলে উক্ত আঘাত রাহাতের বুকের বাম পাশে লেগে গুরুতর জখম হয়।আসামি সাব্বির চাইনিজ কুড়াল দিয়ে খুনের উদ্দেশ্যে রাহাতের মাথায কোপ দিলে তা কপালের ডান পাশে লেগে গুরুতর জখম হয়। এছাড়াও অন্যান্য আসামিরা শুভ ও তার সাথে থাকা বন্ধুদের ওপর হামলা করে।

ভিকটিম রাহাত ও অন্য জখমীদের মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার রাহাত হাওলাদারকে মৃত্যু ঘোষণা করে ।এ ঘটনায় রাহাতের বাবা শাহাজালাল বাদি হয়ে পরের দিন মঠবাড়িয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।