আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবো : শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবো। আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে তারুণ্যের শক্তিতেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হবে। এ তারুন্যকেই আমরা উপযুক্তভাবে তৈরি করতে চাই, স্মার্ট তরুণ সমাজ হিসেবে, দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়তে চাই।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকালে মাদারীপুরের কালকিনিতে সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে নির্বাচনি জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ১৫ বছরে বদলে গেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, যুব সমাজের জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছি। কম্পিউটার ও ডিজিটাল ডিভাইস এগুলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলদেশ গড়ব, দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম।

“অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবদিকেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়ন করেছে। এই হলো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সাল। এই ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবো।”

কালকিনির জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, “টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশের ধারাবাহিক একটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, নৌকা মার্কা আছে বলেই এই উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও জেলা পর্যায়ে এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে-রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের যা যা প্রয়োজন।” এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চান আওয়ামী লীগ প্রধান।

পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আবুল হোসেন যখন যোগাযোগ মন্ত্রী তখন হঠাৎ বিশ্ব ব্যাংক একটা অভিযোগ নিয়ে আসলো, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। তখন পদ্মা সেতু নির্মাণ এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কেউ দুর্নীতি করবে, এটা কখনই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। “মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছিল, আমাদের একটি ব্যাংকের এমডি, সে পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বয়স হয়েছে, তারপরও পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বসে বসে সেই ব্যক্তিই এই ষড়যন্ত্র করেছিল। তখন বিশ্ব ব্যাংক বললো দুর্নীতি হয়েছে। ঠিক তখনই আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি, তোমরা প্রমাণ করো। বিশ্ব ব্যাংক পরে কিন্তু প্রমাণ করতে পারে নাই।”

তিনি বলেন, এই দুর্নীতির অভিযোগে কানাডার আদালতে মামলা হয়েছিল। সেই আদালত পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো দুর্নীতি হয় নাই। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, এই সেতু করবো নিজেদের টাকায়। এই ঘোষণা দিয়ে বেশি লোকের সমর্থনই পাইনি। তখন জিদ ধরে বসেছিলাম, নিজের টাকা ছাড়া পদ্মা সেতু করব না। “আল্লাহর রহমতে নিজের টাকায় আজ পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মা সেতুর সুফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খুব অল্পসময়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারে। নৌকা মার্কা জয়যুক্ত হয়েছে বলেই সম্ভব।”

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপসহ অনেকেই। মাদারীপুর সদরের একাংশ, কালকিনি ও ডাসার উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-০৩ সংসদীয় আসন। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ বিভিন্ন দলের ছয় প্রার্থী। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে এক নজর দেখতে নেতাকর্মীরা শনিবার সকাল থেকে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে-গেয়ে জনসভায় আসেন মানুষ। বিকালে সড়ক পথে ছোটবোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে মাদারীপুরে কালকিনিতে আসনে প্রধানমন্ত্রী। পরে সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে জনসভায় যোগ দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির আগমনে সড়ক থেকে জনসভার মাঠ, সবখানেই ছিল বর্ণিল সাজ। লোকে লোকারণ্য ছিল সমাবেশস্থল। শেখ হাসিনার আগমনে ব্যানার, প্লে কার্ড হাতে বেশি উচ্ছ্বসিত নারী কর্মী ও নেত্রীরা। সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে সংসদেও নারীদের কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান আগতরা। পাশাপাশি জেলায় মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি এলাকাবাসীর। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত ফোর লেইনের দাবিও জানান দলীয় নেতাকর্মীরা।