কে হবেন উবারের নতুন সিইও?
অনেক চেষ্টা করেও নিজের পদত্যাগ ঠেকাতে পারেননি অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সিসেবা নেটওয়ার্ক উবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ট্রাভিস কালানিক। ২০ জুন তিনি পদত্যাগ করেছেন। মায়ের মৃত্যুর কারণে দীর্ঘ ছুটির প্রস্তাব দিলেও তাঁর বোর্ড সেটি মানেনি। ফলে উবারের সহপ্রতিষ্ঠাতাকে প্রধান নির্বাহীর পদটি ছেড়ে দিতে হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রায় সাত হাজার কোটি ডলারের বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্টার্টআপের নতুন শীর্ষ নির্বাহী কে হবেন?
কালনিকের যে পতন হবে, সেটি বোঝা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসী আইনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পরপরই তিনি তোপের মুখে পড়েন। তবে, তিনি সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন উবারে নারী কর্মীদের ব্যাপারে ভিন্ন কর্মপরিবেশের কারণে। বলা বাহুল্য, সেটি নারীদের জন্য ভালো নয়। সাবেক কর্মী সুসান ফাওলারের অভিযোগের পর এখন প্রমাণিত যে উবারের কর্মপরিবেশ মেয়েদের জন্য মোটেই ভালো ছিল না। দেশের বাইরেও উবারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে, যা শেষ পর্যন্ত কালানিক সামাল দিতে পারেননি। তবে, উবারের বিনিয়োগকারীরা কালানিককে বোর্ডে জায়গা দিতে সম্মত হয়েছে।
কালানিকের পর এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্টার্টআপের শীর্ষ নির্বাহী কে হবেন, তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। কোনো স্টার্টআপের শীর্ষ নির্বাহীর পদ পূরণ নিয়ে এমন জল্পনা-কল্পনার কোনো নিকট অতীত ইতিহাস পাওয়া যাবে না।
রাতারাতি উবারের সংস্কৃতি পরিবর্তিত হবে, এমনটা কেউ আশা করছেন না। তবে, বিনিয়োগকারী খুঁজছেন এমন কাউকে, যে কিনা উবারকে সামনে নিয়ে যেতে পারবেন। নতুন শীর্ষ নির্বাহী অবশ্যই বহুজাতিক কোম্পানি চালানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে।
বিনিয়োগকারীদের ইচ্ছা একজন নারীকে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার। তাঁদের প্রথম পছন্দ ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ। যদিও, শেরিল কোন এয়ারলাইন বা লজিস্টিক কোম্পানিতে নেই। তারপরও ফেসবুকের শেরিলকেই এই পদের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ভাবছেন বিনিয়োগকারীরা। শেরিল এখনো এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। তবে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের ধারণা, শেরিল ফেসবুক ছেড়ে আসতে রাজি হবেন না।
বিনিয়োগকারীদের দ্বিতীয় পছন্দ ইয়াহুর সাবেক শীর্ষ নির্বাহী মারিসা মেয়ার। তাঁর ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী। কারণ, ইয়াহুর মতো একটি প্রতিষ্ঠান চালানোর অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। এর আগে গুগলে কাজ করেছেন। অবশ্য তাঁর মুকুটে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুই আছে। তাঁর পক্ষে ওকালতিকারীদের যুক্তি হলো মারিসার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব ও বৈচিত্র্যসন্ধানী মন উবারকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
মারিসাকে না পেলে বিনিয়োগকারীদের জন্য তৃতীয় পছন্দের ব্যক্তি হতে পারেন এইচপির সাবেক শীর্ষ নির্বাহী মেগ হুইটম্যান। ৬০ বছর বয়সী মেগ অনায়াসে লিঙ্গবৈষম্য ইস্যু সামাল দিতে পারবেন বলে অনেকেই মনে করেন। তবে, মেগের বিরোধিতাকারীরা তাঁর আমলে শেয়ারবাজারে এইচপির দরপতনের ব্যাপারটাকে সামনে আনছেন।
বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় আরও আছেন—গুগলার থেকে ব্যাংকার নিকেশ অরোরা, ফোর্ডের বিদায়ী সিইও মার্ক ফিল্ডস ও টুইটারের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এডাম বেইন।
তবে, এ পদে যিনি আসবেন, তাঁকে উবারের আগ্রাসী মার্কেটিং এবং দেশে দেশে নিয়ম ভঙ্গের ঐতিহ্য থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিশ্বব্যাপী উবারের মোট রাজস্ব আয় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার হলেও এটি এখনো লোকসানি প্রতিষ্ঠান। গত বছর উবারের লোকসান ছিল ১২০ কোটি মার্কিন ডলার। এ বছর সেটা কমে এসেছে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার। নতুন শীর্ষ নির্বাহীকে হয় আরও গ্রাহকের জন্য আগ্রাসী ভাব বজায় রাখতে হবে অথবা আন্তর্জাতিক পরিচালনা ব্যয় কমাতে হবে।
২৮ জুন উবারের বোর্ডের পরবর্তী সভাতে নতুন সিইওর নাম ঘোষণা হতে পারে। দেখা যাক, কে হোন বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্টার্টআপের সিইও।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন