বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ভারতের কাছে জিন্নাহর সেই বাড়ি ‘শত্রু সম্পত্তি’

মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে পাকিস্তানে কায়েদ-এ-আজম বলা হলেও সাধারণ পাকিস্তানিরা তাঁকে বাবা-এ-কৌম বলেই সম্মানিত করে থাকেন। কিন্তু এই জিন্নাহকেই ভারতের বেশীর ভাগ মানুষ ঘৃণা করে। দেশটিতে তাঁর নাম উচ্চারণ করাও হয়ে থাকে কিছুটা অশ্রদ্ধার সঙ্গেই। কারণ তাঁকেই দেশভাগের জন্য দায়ী বলে মনে করেন ভারতীয়দের অনেকে।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পরে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজের তৈরি দেশ পাকিস্তানে চলে যান। কিন্তু ভারতে ফেলে যান নিজের একটি অতি প্রিয় জিনিস, সেটি হলো- মুম্বাইতে তাঁর বাড়ি।

ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে অন্য অনেক বিষয় নিয়ে যেমন বিবাদ রয়েছে, তেমনই বিবাদ রয়েছে জিন্নাহর বাড়ি নিয়েও। এই বাড়িতে থাকার সময়েই পাকিস্তান তৈরির পরিকল্পনা করেন জিন্নাহ। লড়াইটাও চলেছিল এখান থেকেই। সেজন্যই পাকিস্তান এই বাড়িটিকে তাদের সম্পত্তি বলে মনে করে।

পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে মুম্বাইয়ে জিন্নাহর বাড়ি একটা তীর্থস্থানের মতো।

তবে ভারতের কাছে জিন্নাহর ওই বাড়িটি চোখে বালি পড়ার মতো। এই বাড়িটিকেই দেশভাগের পরিকল্পনার মূল আড্ডা বলে মনে করা হয়।
ভারত এই বাংলো বাড়িটিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ বলে চিহ্নিত করে রেখেছে। সরকারের দখলে থাকা বাংলো বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত।

মুম্বাইয়ের এক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা জিন্নাহর বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলারও দাবি তুলেছেন। তাঁর কথায়, “এটা শত্রু সম্পত্তি। দেশভাগের জন্য দায়ী যে জিন্নাহ, তিনি বানিয়েছিলেন বাড়িটি। দেশভাগের কারণে যে রক্তপাত ঘটেছে, এই বাড়ির দিকে তাকালে সেই সব কথা মনে পড়ে কষ্ট হয়। সেজন্যই বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলা উচিত। সেখানে একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়া যেতে পারে। ”

জিন্নাহর কিন্তু মুম্বাই শহর বা যেটি সে সময় বোম্বে নামেই পরিচিত ছিল, তার প্রতি খুব টান ছিল। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে সেখানেই বাস করতেন তিনি। আরামে থাকার জন্যই দক্ষিণ মুম্বাইয়ের মালাবার হিলস এলাকায় এই বাংলো বাড়িটি বানিয়েছিলেন জিন্নাহ। বাড়িটি বানাতে তার খরচ হয়েছিল প্রায় দুই লক্ষ টাকা।

প্রখ্যাত আর্কিটেক্ট ক্লড বেটলী বাড়িটির ডিজাইন করেছিলেন। বাড়িটিতে ইতালিয়ান মার্বেল বসানো হয়েছিল। এ ছাড়াও ছিল কাঠের কারুকাজ।

সেই সময়ে পেশায় ব্যারিস্টার জিন্নাহ এই বাংলো তৈরির জন্য যতটা যত্ন নিয়েছিলেন, তা থেকেই বোঝা যায় যে তিনি মুম্বাইতেই থাকার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু একটা সময়ে আইন পেশার চেয়েও বেশী তিনি রাজনীতিতে সময় দিতে লাগলেন আর মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের দাবি তুললেন। সেই দাবি আদায় করেও ছাড়লেন। আর শেষে নিজের তৈরি দেশেই পাড়ি জমান তিনি।

জিন্নাহর ধারণা ছিল দেশভাগের পরে ভারত আর পাকিস্তানের সম্পর্ক এতটাই ভাল হয়ে উঠবে যে তিনি ইচ্ছে হলেই মুম্বাইতে এসে নিজের বাড়িতে কিছুদিন কাটিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটল অন্যরকম। এ কারণে নিজের সেই স্বপ্নের বাংলোয় ফিরে আসার স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেল জিন্নাহর।