বলিউডের হার্টথ্রুব নায়িকা সানি লিওনের নায়ক হতে চান ডিস ব্যবসায়ী থেকে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। পশ্চিম বঙ্গের বাংলা দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন রীতিমতো কাভার স্টোরি বানিয়ে ফেললো। সাক্ষাতকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

হাইট? পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি। স্বাস্থ্য? রোগা রোগা অবস্থা। দর্শন? বোকা বোকা ভাবের। বয়স? প্রায় ৩০ হবে। পরনে? সবুজ ব্লেজার, ডোরাকাটা টি-শার্ট। মানুষের ভিড়ে মিশে থাকা জনতার এক মুখ হিরো আলম। ওপার বাংলার এক নম্বর ইউটিউব স্টারের ইন্টারভিউ নিয়েছেন শুভঙ্কর চক্রবর্তী। আর তাকে ফ্রেমবন্দি করেছেন সুব্রত কুমার মণ্ডল।

আচ্ছা আমরা শুনেছি ওপার বাংলার ফ্যান ক্রেজের কথা। এখানে কিভাবে লোকে আপনাকে চেনে?

কলকাতায় আমি আগেও আইসি। এই নিয়া সেকেন্ড বার। আমার কাছে এপার-ওপার বলে কিছু নেই। দু’দেশ সমান সমান। প্রথমবার যখন আইলাম, আমায় নিয়া উন্মাদনা দেইখ্যা, অবাক হইসি। আর এইবার আওনে বুঝছি উন্মাদনা এতটুকুও কমেনি। এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার পরই, পাবলিক কইতাসিল হিরো আলম, হিরো আলম। (দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা ফ্যানদের দেখিয়ে) দেখসেন ক্যামনে মাইয়াগুলা এখনও আমাগো দেখতাসে।

কলকাতায় কী কারণে আসা?

এবার বর্ধমানে একটা ইভেন্ট প্রোগ্রামে আইসি। পাশাপাশি আমার একটা মুভির কথাও চলতাসে। এই দুইটার বিষয় নিয়াই মূলত এ দেশে আসা।

একদম নামহীন থেকে নামজাদা হয়ে ওঠার জার্নি কেমন ছিল?

আমার আসল নাম আশরাফুল হোসেন আলম। এই নামটা অনেকের অজানা। লোকে আমারে চেনে হিরো আলম বইল্যা। আমি কোনদিন আশা করিনি এত ভাইরাল হোয়া যামু। এইটা জানতাম, ইচ্ছাশক্তি থাকলে আপনেও হিরো হইতে পারেন। লোকে সাধনা করে, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওনের জন্য। আমি চেষ্টা করেছি হিরো হব। লোকে বলত, হিরো হতে গেলে বডি, চেহারা লাগে। কিন্তু আমার মধ্যে কোনওটাই নেই। আমি তাও ট্রাই করেছি। আর আল্লার দোয়া, যে আমি পারসি। আমার রং কালো, রোগা, একবার আমার দিকে তাকালে আর আমারে দেখতেও ইচ্ছা করে না। তাও আমি হিরো।

আপনি তো একটা ছবিও করেছেন?

হু। একটা মুভি করসি। ‘মার ছক্কা’। দারুণ হিট হইসে। দ্বিতীয় মুভি আসতেছে। মুভির নাম ‘দিয়াশলাই’। এছাড়া মিউজিক ভিডিও, শর্ট ফিল্ম, নাটক প্রতি সপ্তাহেই রিলিজ করি। বাচ্চারা কার্টুন দেখতে ভালোবাসে কিন্তু বাজার-হাট যখন যাই, সেখানেও আমারে দেখে ওগুলান আমারই মুভির ডায়ালগ বলে, নাম আমার হিরো আলম, জালিমদেরকে লাগাই মলম। মারব বগুড়ায়, লাশ পড়বে মাগুড়ায়।

ক্যাবল চ্যানেলের ব্যবসা ঠিকঠাক চলছে?

ফার্স্ট ক্লাস। ‘হিরো আলম’ হওয়ার পর তো ব্যবসা আরও পপুলার হইসে। ক্যাবল ব্যবসার সঙ্গে আমি বিভিন্ন নাটক-গান-নাচের ভিডিও প্রোডিউসও করি।

আপনার নাম আলম। কিন্তু নামের আগে ‘হিরো’ বসালো কে?

আমি বসাইছি। প্রতিটা হিরোকে একজন প্রোডিউসার ‘হিরো’ বানায়। ৫০-৬০ সিনেমা ফ্লপ করতে করতে একজন হিরো হয়। কিন্তু আমারে কেউ হিরো বানায় নি। আমি নিজেরে নিজেকে ‘হিরো’ বানাইছি। শুধু উপরওয়ালা সঙ্গে ছিল।

আপনার মধ্যে হিরো সুলভ কিছু নেই কিন্তু ভিডিও-তে সুন্দরী সব নায়িকা…

এই নায়িকা নিয়া একবার ভারী বিপদেও পড়সি। দ্যাখেন আমার চেহারা ভাল নয়। সেটা দেখতেই পারতাসেন। এক্কেরে কালা-কুলা। একদিন শুটিংয়ে গেসি। সব রেডি। নায়িকার সঙ্গে আমার আগে আলাপ হয় নি। নায়িকা সেটে আওনের পর জিগাইতাসে গানের হিরো কেডা? একজন আমার দিকে দেখাইতেই নায়িকা কয়, এইটা কোনও স্টার হইল, আমি এর সঙ্গে গান গামু না। আমার চেহারা খারাপ দেখে সেট ছাইড়া চইল্যাও যায়। আমার তো তখন খুব জেদ চাপসে। শুটিং করুম তো ওরে নিয়াই করুম। না হলে করুমই না। আমি নায়িকার পারিশ্রমিকের খোঁজ নিই। ৫০০০ টাকা। আমি ওরে ডবল টাকা দিয়া আমার ভিডিও-তে গান গাওয়াই।

নায়িকাদের প্রেমে পড়ে যাননি কখনও?

শোনেন, আগে কিন্তু কেউ প্রেম করতে চাইত না। আমার চেহারা খারাপ তাই। আর এখন যারা প্রেম করতে চায়, তারা আমারে নয় ‘হিরো আলম’-রে পেতে চায়। আমার কাছে প্রেম মানে ‘ওয়ান টাইম’। একবারই করসি, বিয়াও করসি।

রাতারাতি স্টার হয়েছেন। হিংসে করার লোকও তো কম নেই।

জনগণ আমারে ভালবাসে বলেই আমি স্টার। কারা আমাকে হিংসে করে জানেন? যারা দেখতে ভাল, তারা। সুন্দর দেখতে নায়ক আমারে পছন্দ করে না। যারা এত বছর ধরে কিছু করতে পারেনি, সেসব লোকজনেরা আমার নামে গাল পাড়ে। ‘হিরো আলম’ দু’দিন কা লড়কা এত হিট হইল ক্যামনে? এটাই বুঝতে পারে না।

আর যাঁরা রোজ কমেন্টে গালাগালি দেয়?

আমি মনে করি যারা গালাগাল দেয়, তাদেরকেও আদাব দিতে হবে। সালাম দিতে হবে। কারণ ওই ব্যক্তি যদি আমার ভিডিও না দেখত তাহলে গালি দিত না।

হিরো আলমের অনুপ্রেরণা?

দু’জন মানুষকে আমি হামেশা ফলো করছি। আমাদের দেশের সালমন শাহ। এবং আপনের দেশের সালমন খানকে। যখন নাটক করি বা গান-নাচ করি, আমি এই দু’জনকে দেখি, তারা কীভাবে নাচেন, অভিনয় করেন।

বাকি ইউটিউবারদের কম্পিটিশন আছে তো?

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমারে টপকাতে কেউ পারেনি। গত আড়াই বছরে আমি ভাইরাল।

কলকাতার ইউটিউব স্টারদের নিয়ে কম্পিটিশন নেই বলছেন?

নাহ। আমার কম্পিটিশন আমি নিজেই।

বাঙালি কোনও অভিনেত্রীর সঙ্গে ছবি করার ইচ্ছে আছে?

টলিউডে দু’জনের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে রাখি। প্রথম কোয়েল মল্লিক। আর দ্বিতীয় হইল গিয়া শ্রাবন্তী। আরও আছে। তবে আপাতত এই দুইটাই থাক।

বলিউডে কারও সঙ্গে?

দ্যাখেন আমি ভাইরাল। তাই যার ভিডিও খুব তাড়াতাড়ি ভাইরাল হয় তার সঙ্গে কাজ করতে চাইমু। তাই আমার টার্গেট সানি লিওন। সুযোগ পেলে সানি লিওনের সঙ্গে কাজ করতে চাই।

বলছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন…

এইবার হইল কই? কিন্তু পরেরবার ঠিক করছি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে একবার দেখা করুম। আমার তারে খুব ভাল লাগে। একটা সৌজন্য সালাম দিব। তার আশীর্বাদ-দোয়া নিব।

বাংলাদেশ থেকে মানুষজন এপারে এলে দু’জন মানুষের সঙ্গে দেখা করার আর্তি থাকে। দিদি ও দাদা!

আপনে নিশ্চয়ই সৌরভজির কথা বলছেন তো! আমার খুব পছন্দের প্লেয়ার। আমি ‘দাদাগিরি’ রোজ দেখি। খুব আপন-আপন লাগে। পরেরবার কলকাতায় এলে আমি দাদার সঙ্গে দেখা করুম।

‘হিরো আলম’ নামে এতগুলো ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক প্রোফাইল, কী করে সামলান একা?

আপনারে আর কী কমু? আমার নিজের প্রোফাইল তিনটা। আমার নামের প্রোফাইল প্রায় ৭০-৮০টা। আমি ফেসবুকে রিপোর্ট করি না। লোকে আমারে ভালোবাসে, আমারে ভাইরাল করছে। কী আর রিপোর্ট করুম? আপনে কন?

কলকাতার বিরিয়ানি-ফুচকা বা মিষ্টি, তিনটেই খুব ফেমাস। একটাও টেস্ট করলেন?

মিষ্টি খাইসি। বাড়ির জন্য নিয়াও যাইতাসি। পরেরবার বিরিয়ানি আর ফুচকা খামু।