বিক্ষিপ্ত ঘটনায় খুলনা সিটির ভোট শেষ
কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট, ব্যালটে জোর করে সিল মারা, এজেন্টদের মারধর ও বের করে দেয়াসহ বিক্ষিপ্ত ঘটনায় শেষ হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে একটানা বিকেল চারটা পর্যন্ত এখানে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোটগ্রহণ করা হয়। মেয়রপদে এখানে পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও মূলত ভোটযুদ্ধ দেখা গেছে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক এবং বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মধ্যে।
সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্র নারী ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে অবশ্য ভোটারদের উপস্থিতিতে ভাটা পড়ে।
ভোট শুরুর পরপরই দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরীর পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক।
নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সাংবাদিকদের তিনি জানান, দিন শেষে যে ফলাফল হবে, তা মেনে নিবেন।
সকাল আটটা ৫০ মিনিটের দিকে নগরীর রহিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
তিনি এ সময় সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের মারধর ও বের করে দেয়ার অভিযোগ আনেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও বাস্তবে অনেক কেন্দ্রেই বিএনপির কাউকে পাওয়া যায়নি।
এরই মধ্যে নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডের ইকবাল নগর কেন্দ্রে মাত্র দুই ঘণ্টায় সব ভোট কাস্ট হয়ে যায়। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার খলিলুর রহমান স্বয়ং জানান, একদল দুর্বৃত্ত এসে অস্ত্রের মুখে সব জাল ভোট দিয়ে গেছে। পরে তিনি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেন। আর দুপুরে কেন্দ্র পরিদর্শন করে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনূস আলী ভোট বাতিল করেন।
একইভাবে ভোট কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার অভিযোগে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের লবণচরা কেন্দ্রের (২৭৮নং) ভোট স্থগিত করতে বাধ্য হয় ইসি।
মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আলী হোসেন ভোটগ্রহণ স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এ ছাড়া দৌলতপুরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেয়ানা উত্তরপাড়া ভোট কেন্দ্রে হামলা, ২১ নং ওয়ার্ডের উদয়ন বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ভোটারদের বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একইভাবে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের গণি বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থকদের বের করে দেয়া হয়। জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে ২২ নং ওয়ার্ডের ফাতেমা স্কুল কেন্দ্রের একটি বুথে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখতে হয়।
সিটির খালিশপুর থানার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাস্তুহারা কেন্দ্রে পুলিশের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। সদর থানার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের রূপসা স্ট্যান্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিরালা ভোট কেন্দ্রে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ এবং সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক কেন্দ্রেই বিএনপির ক্যাম্পে ভাংচুর চালিয়েছে সরকারি দলের কর্মীরা।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের শুরুতেই ৪০টি কেন্দ্র দখল করে ধানের শীষ প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়।
একইভাবে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক দাবি করেন, জনগণের বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে এবং নিশ্চিত ভরাডুবি জেনে বিএনপি তাদের ধারাবাহিক মিথ্যাচারের অংশ হিসেবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। আদৌতে খুলনায় সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে।
তবে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির করা অভিযোগ সুনির্দিষ্ট নয় এবং দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
খুলনা সিটিতে ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও দশটি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। মোট ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন ভোটার এ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন নারী।
পাঁচজন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন