বগুড়ায় ‘ধর্মভাইয়ের’ দেয়া আগুনে দগ্ধ সেই গৃহবধূর মৃত্যু
বগুড়া শহরে ‘ধর্মভাই’ তোফাজ্জল হক টুটুলের দেয়া আগুনে দগ্ধ গৃহবধূ শাহনাজ পারভিন (৪৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ দিন পর মারা গেছেন।
শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মারা যান।
গত ৪ মে শুক্রবার দুপুরে বগুড়া শহরের দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়ার বাড়িতে এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ টুটুলকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
নিহতের স্বামী দুবাইপ্রবাসী আবদুর রহমান দাবি করেছেন, চাঁদা না পেয়ে টুটুল তার স্ত্রীর শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দিয়েছিল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার এসআই ওয়াদুদ আলী বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে ধর্ম-ভাইবোনের আড়ালে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। একমাত্র আসামি টুটুল আত্মগোপন করায় তাকে গ্রেফতার করা যায়নি।
পুলিশ ও এলাকাবাসীরা জানায়, বগুড়া শহরের দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়ার আবদুর রহমান দীর্ঘদিন দুবাই চাকরি করেন। প্রায় দেড় বছর আগে তিনি প্রতিবেশী মৃত সবেদ আলীর ছেলে টুটুলের কাছে জায়গা কিনে বাড়ি করেন। সেখানে স্ত্রী শাহনাজ পারভিন দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন।
ছেলে আবদুর রউফ সোহাগ রাজশাহীর এক কলেজে এবং মেয়ে রাফি স্থানীয় ভাণ্ডারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
টুটুল প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজকে ‘ধর্মবোন’ বানায়। বর্তমানে সে দুপচাঁচিয়ার কলেজপাড়ায় বসবাস করলেও ‘ধর্মবোন’ শাহনাজের বাড়িতে যাতায়াত করত।
ফুলবাড়ি ফাঁড়ির এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, ৪ মে দুপুর ২টার দিকে বাড়ির শয়নকক্ষে থেকে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ শাহনাজকে উদ্ধার করে শজিমেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ছাড়াও বিছানায় থাকা পাটি এবং ওড়না পুড়ে গেছে।
মেয়ে রাফি জানিয়েছে, টুটুল ওইদিন দুপুরের আগে বাড়িতে আসে। তখন সে ভাত খাচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ টুটুল ঘরে বোতলে থাকা কেরোসিন তার মায়ের গায়ে ঢেলে দিয়ে আগুন দেয়। এরপর সে (টুটুল) পালিয়ে যায়।
তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শজিমেকের উপপরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, গৃহবধূ শাহনাজের শরীরের ৫৫ শতাংশ পুড়ে যায়। এখানে বার্ন ইউনিট না থাকায় ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার এসআই ওয়াদুদ আলী জানান, গৃহবধূর স্বামী বিদেশে থাকায় চাচাতো দেবর মঞ্জুরুল থানায় টুটুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
তিনি জানান, গৃহবধূ শাহনাজ শুক্রবার সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মারা গেছেন। নতুন করে মামলা করতে হবে না।
নিহত গৃহবধূর স্বামী দুবাইফেরত আবদুর রহমান দাবি করেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে টুটুলের কোনো অনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। টুটুল বিদেশ যাওয়ার জন্য তাকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তিনি (রহমান) ওই টাকা তাকে (টুটুল) ফেরত দিয়েছেন। বিদেশ যেতে না পারার ক্ষোভে ও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে সে (টুটুল) ঘরে ঢুকে তার স্ত্রী শাহনাজের শরীরে কেরোসিন বা অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দিয়েছিল।
তিনি ঘাতক টুটুলকে দ্রুত গ্রেফতার ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন