বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্টের চেষ্টায় কার্লাইল : ভারত
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনি পরামর্শক ব্রিটিশ ইহুদি আইনজীবী লর্ড এলেক্স কার্লাইলের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্টের আশঙ্কা ছিল ভারতের।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার কার্লাইলকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘ লর্ড কার্লাইল ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন – এমন সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে।’
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধী দলের (বিএনপি) সম্পর্কেও সন্দেহ তৈরি করতে চাইছিলেন বলেও রবীশ কুমার এক প্রতিক্রিয়ায় জানান।
‘লর্ড কার্লাইল খুব ভাল করেই জানতেন তাকে ফিরে যেতে হবে – সে কারণেই তিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানের ‘রিটার্ন বোর্ডিং পাস’ নিয়েই এসেছিলেন’- এমন ছিল রবিশের প্রতিক্রিয়া।
১১ জুলাই স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে কার্লাইলকে নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে দেশে ঢুকতে দেয়নি। আর তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর নিজ দেশে কার্লাইলকে ফিরতি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয়া হয়।’
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কার্লাইলের ভিসা যথাযথ ছিল না।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, ‘কার্লাইল তার ভিসার আবেদনে যা লিখেছেন, তার সঙ্গে ভারতে তিনি যা করতে যাচ্ছিলেন তার কোনো মিল ছিল না। এ কারণে, তাকে ভারতে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে।’
দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড হওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনি পরামর্শক হিসেবে গত মার্চের শেষে নিয়োগ পান কার্লাইল। এরপর মে মাসের শুরুতে কাতারভিত্তিক ইংরেজি গণমাধ্যম আল জাজিরাকে এই মামলার বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি যেখানে দাবি করা হয়, খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার মতো কোনো কিছু ছিল না এই মামলায়।
এরও দুই মাস পর বৃহস্পতিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা এবং খালেদা জিয়ার মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কার্লাইল সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। আর দেশটিতে যেতে তিনি ভিসাও পান।
এর মধ্যে এই সফর নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায় বাংলাদেশ সরকার। ঢাকার বক্তব্য ছিল কার্লাইল যদি দিল্লিতে এসে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে কথা বলেন তাহলে সেটা হবে দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে একটা ‘পেইড পলিটিক্যাল ক্যাম্পেন’ – অর্থাৎ পয়সা নিয়ে চালানো রাজনৈতিক প্রচারণার সামিল।
ভারত যে এভাবে ‘তাদের মাটিকে বাংলাদেশ-বিরোধী প্রচারে’ কাজে লাগাতে দিতে পারে না, ঢাকার সেই মনোভাবও দিল্লির কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে ঢাকার একটি আদালত। সেই থেকে তিনি নাজিমউদ্দীন রোডের পুরাতন কারাগারে অন্তরীণ।
একই রায়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে সমপরিমাণ জরিমানার পাশাপাশি ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
বিএনপি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের পাশাপাশি নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। সেই সঙ্গে বিদেশে এই মামলাটি নিয়ে কথা বলার জন্য যুক্তরাজ্যের লর্ড কার্লাইলকে নিয়োগ দেয়।
কার্লাইলকে খালেদা জিয়ার আইনি পরামর্শক হিসেবে নিয়োগে দেয়া হলেও বিএনপি নেত্রীর পক্ষে আদালতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই তার।
বাংলাদেশের আদালতে দাঁড়াতে হলে বার কাউন্সিলের সনদ নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই সনদ না থাকলে কারও পক্ষে আইনগত সহায়তা দেয়া সম্ভব নয়। ইতোপূর্বে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতাদের পক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তবে তারা বাংলাদেশে এসে আইনগত সহায়তা দিতে পারেননি।
পোল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যে অভিবাসিত ইহুদি আইনজীবী লর্ড কার্লাইল বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কট্টর সমালোচক ছিলেন। তিনি এই বিচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে নানা সভা, সেমিনার এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে দূতিয়ালির চেষ্টা করেছেন।
২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ‘নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার’ জন্য আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি জানান লর্ড কার্লাইল। জেনেভাস্থ ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস-এর হাই কমিশনার নাভী পিল্লাই বরাবর লিখিত এক চিঠিতে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপও চেয়েছিলেন লর্ড কার্লাইল।
আলবদর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর না করার দাবিতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের কাছে চিঠিও লিখেছিলেন ব্রিটিশ এই আইনজীবী।
২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশে ‘গ্রহণযোগ্য’ সরকার গঠনে উদ্যোগ নিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অনুরোধ করেছিলেন লর্ড কার্লাইল।
তবে কার্লাইল তার নিজের সঙ্গে জামায়াত সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, জামায়াত নেতাদের হয়ে নয়, একজন আন্তর্জাতিক আইনজীবী হিসেবে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।
জামায়াতের পক্ষে দূতিয়ালি করলে জামায়াত সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুললে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সতর্কতাও মার্চের শেষ দিকে দিয়েছিলেন কার্লাইল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন