ইমরান খানের বিজয়ে চীনের বার্তা
পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে নিজেকে বিজয়ী দাবি করেছেন সাবেক ক্রিকেটার ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান ইমরান খান। এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি তার দেশ পরিচালনার নীতির কথা তুলে ধরেছেন।
পারমাণবিক শক্তিধর একমাত্র মুসলিম দেশ পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগতভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলোর নানা স্বার্থ।
ফলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চলা ইমরান খানের প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির বিষয়েও বিশ্বজুড়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের পর প্রথম বক্তব্যে সে বিষয়ে ইমরান তার নীতিও তুলে ধরেছেন।
ইমরান খান তার পররাষ্ট্রনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক। এ ছাড়া আফগানিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, ইরান ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
এদিকে ইমরান খানের বিজয় দৃশ্যমান হয়ে যাওয়ার পর তার প্রশাসনের বিষয়ে নিজেদের ভাবনার কথা তুলে ধরেছে পাকিস্তানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র চীন। এতে পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছে চীন।
ইমরানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের জন্য চীনের বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসে। এতে আন্তর্জাতিক নানা বিষয়াশয় সম্পর্কে চীনের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়।
চীনের এই ট্যাবলয়েড দৈনিকে আন্তর্জাতিক সংস্করণে প্রায় ২০ বিদেশি বিশেষজ্ঞ কাজ করেন। পাকিস্তানের বুধবারের নির্বাচন নিয়ে দৈনিকটির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হল-
ধারাবাহিক আত্মঘাতী হামলা ও কারচুপির অভিযোগের মধ্য দিয়ে বুধবার পাকিস্তানের জনগণ তাদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। এতে বৃহস্পতিবার দেশটির তেহরিক-ই-ইনসাফ(পিটিআই) পার্টির প্রধান ইমরান খান নিজের বিজয় ঘোষণা করেছেন।
ইসলামাবাদের সামনে অনেক প্রতিকূলতা রয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক বিপর্যয় এখন চরম পর্যায়ে চলে গেছে। সমালোচকরা বলেন, পাকিস্তান ঋণসংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। এর ওপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে বারবার সন্ত্রাসী হামলার দুঃস্বপ্ন রয়েই গেছে।
চীন সবসময়ই পাক নিরাপত্তাব্যবস্থার ওপর একযোগে এসব হামলার নিন্দা জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ বুধবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন।
কাজেই নতুন সরকারকে অবশ্যই স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া নতুন নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এ ছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী বৈশ্বিক অভিযানে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হচ্ছে দেশটি। কাজেই একটি অস্থিতিশীল পাকিস্তানের মধ্যে কারোই স্বার্থ থাকতে পারে না।
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ও কৌশলগত অংশীদার দেশ হিসেবে চীনের চাওয়া হচ্ছে- যাতে পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের সঠিক ধারা বহাল থাকে। এটি কেবল চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের কারণেই নয়, বরং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেই এটি প্রয়োজন।
আঞ্চলিক সংযোগ প্রতিষ্ঠায় দুই দেশের বিশাল অর্থনৈতিক প্রকল্প হচ্ছে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর। এ ছাড়া চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিয়ে নীতির গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে- সার্বিক উন্নয়নে আঞ্চলিক সহযোগিতা এগিয়ে নেয়া।
চীন-পাকিস্তানের মধ্যে যৌথভাবে কোটি কোটি ডলারের প্রকল্পের উন্নয়নকাজ চলছে। কাজেই চলতি বছরে পাক নির্বাচনে দুই দেশের এসব প্রকল্প হট টপিক হিসেবে কাজ করেছে। নির্বাচনী প্রচারে এসব ঘুরেফিরে এসেছে।
পশ্চিমা গণমাধ্যম বলছে, সরকার বদলে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর ঝুঁকিতে পড়বে। এতে ইমরান খানের আপত্তিও বাড়বে। যদিও নির্বাচনী প্রচার অভিযানে করিডর বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
কিন্তু তিনি এখনও জোর দিয়ে বলছেন, ওই প্রকল্পের ওপর তার জোরালো সমর্থন রয়েছে। চীনা গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে করিডরের প্রতি সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ওপর তিনি জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ওই করিডরের বাস্তবায়ন শুরু পাকিস্তানের জাতীয় উন্নয়নে নতুন শক্তি সঞ্চয় করবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে পাকিস্তানের সমাজের ভেতর থেকেও এ করিডর প্রকল্প ব্যাপক সমর্থন পাবে।
পাকিস্তানের ঘরোয়া রাজনীতি কোন্দলের পরও দেশটির রাজনৈতিক কাঠামোতে করিডর বাস্তবায়নে সার্বিক সমর্থন রয়েছে। কোনো নেতিবাচক চিন্তা না করেই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় যে, আসছে পাকিস্তান সরকারও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে। যদিও প্রকল্পের অগ্রভাগের কাজগুলো সম্পন্ন হয়ে গেছে।
এ কথা আগভাগেই বলা যায়, পাশ্চাত্যের গণমাধ্যম অর্থনৈতিক করিডর ও পাকিস্তানের চীনা বিনিয়োগ থামিয়ে দিতে দুই দেশের মধ্য কলহ তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। কাজেই নতুন পাক সরকারকে এ নিয়ে অবশ্যই বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন