ওবামা, ট্রাম্পকে কী বলে গেছেন ম্যাককেইন
মৃত্যুর আগে আমেরিকান সৌজন্যবোধের এক শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন। তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কয়েকজন ব্যক্তির নামের তালিকা তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন। সেই তালিকায় নাম আছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশসহ আরও অনেকের। তবে নাম নেই বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। আগামী শনিবার ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালে ম্যাককেইনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
গত এপ্রিলের প্রথম দিকে একদিন বারাক ওবামা অপ্রত্যাশিত টেলিফোন পেলেন ম্যাককেইনের কাছ থেকে। ব্রেইন ক্যানসারে আক্রান্ত ম্যাককেইন নিজের মৃত্যুর পর তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে বারাক ওবামাকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান। ওবামা বিনয়ের সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকেও একই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি।
সিএনএনের এক খবরে বলা হয়, আগামী শনিবার জাতীয় সংগীত ‘ব্যাটল হাইম অব দ্য রিপাবলিকান’ গীত হওয়ার পর সুউচ্চ গির্জার উঁচু বেদীতে যখন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ৪৪তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দাঁড়াবেন, তখন তাঁরা কেবল জন সিডনি ম্যাককেইন থ্রির বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করবেন না, ম্যাককেইন নিজেও তেমন রাখঢাক না করে আরেকজন প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে একটা কথার জানান দেবেন, যাঁর উপস্থিতি তিনি চাননি—ডোনাল্ড জে ট্রাম্প।
জীবদ্দশায় জন ম্যাককেইন সাবেক দুই প্রেসিডেন্টের বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন না। তিনি ও বুশ রিপাবলিকান দলের সদস্য ছিলেন। দলের প্রতি অনুগত থেকে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করেছেন। ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রাইমারিতে বুশের সঙ্গে তিক্ত লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর নির্বাচনে তিনি বুশকেই সমর্থন দিয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করেন।
২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ম্যাককেইনকে হারিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বারাক ওবামা জয়ী হন। ম্যাককেইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বারাক ওবামা বলেছেন, ‘রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও যে আদর্শের জন্য আমেরিকান ও অভিবাসী প্রজন্মের লড়াই, অগ্রযাত্রা ও ত্যাগ স্বীকার, তাতে তাঁদের দুজনের বিশ্বস্ততা এক অন্য উচ্চতায় ছিল।’ ওবামা আরও বলেন, ‘জন যা করেছেন, তা খুব কম লোকই করেছেন। তাঁর মতো সাহস খুব কম লোকই দেখাতে পেরেছেন।’
ম্যাককেইনের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আমেরিকার ওপর ম্যাককেইনের প্রভাব কখনো শেষ হবে না। ম্যাককেইন প্রমাণ করেছেন, কিছু সত্য সব সময়ের জন্যই উপযোগী। তা হলো চরিত্র, সাহস আর ন্যায়পরায়ণতা।
ম্যাককেইন পরিচিত ছিলেন তাঁর স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্য। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর অনেক ব্যাপারেই মতবিরোধ ছিল। ম্যাককেইনের পরিচয় ‘যুদ্ধনায়ক’ হিসেবে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তিনি পাঁচ বছরের বেশি বন্দী অবস্থায় কাটান। সে কথা উল্লেখ করে গত নির্বাচনের আগে ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন, যুদ্ধের নায়ক হিসেবে তাঁর যুদ্ধবন্দীদের নয়, যাঁরা যুদ্ধ থেকে জয়ী হয়ে ফিরে আসেন, তাঁদের পছন্দ। এই মন্তব্যের কারণে ম্যাককেইন তাঁকে খোলামেলাভাবে অপছন্দ করতেন। গত বছর ম্যাককেইনের ‘না’ ভোটের কারণে সিনেটে ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত স্বাস্থ্যবিমা কর্মসূচি বাতিলের পক্ষে একটি খসড়া আইন গৃহীত হতে পারেনি। সে জন্য ট্রাম্প তাঁকে কঠোরভাবে আক্রমণ করেছিলেন। ম্যাককেইনের প্রতি তাঁর বিরুদ্ধ মনোভাব এতটাই তীব্র যে ম্যাককেইনের মৃত্যুর পর দুই লাইনের এক টুইটে নিজের সমবেদনা প্রকাশ করে দায়িত্ব শেষ করেন ট্রাম্প।
গত শনিবার মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন (৮১) মারা যান। এক বছরের বেশি সময় রোগভোগের পর তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তিনি মস্তিষ্কে টিউমারসংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন