মা-বাবা ও ছেলে মিলে তুহিনের লাশ লুকানোর চেষ্টা করে!
ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাসনিম সুলতানা তুহিনকে (১৪) হত্যা করে প্রেমিক শাহনওয়াজ মুন্না (২২)। এর পরপরই মা নিগার সুলতানা ছেলের কাণ্ডদেখে ঘটনাটি মুন্নার বাবা পল্লী চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহজাহানকে জানায়। ওই সময় তড়িগড়ি তিনজন মিলেই তুহিনকে একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে লুকিয়ে রাখা হয় বাসার সোফার তলায়। এরপর শুরু হয় বাবা, মা ও ছেলে তিনজন মিলে তুহিনের লাশ বাসা থেকে বের করে দূরে কোথাও ফেলে দেয়ার প্রচেষ্টা।
তবে একে একে তিনদিন গড়িয়ে যায়। তুহিনের বড়ভাই-স্বজন এবং চারদিকের লোকজনের যাতায়াতের কারণে বাসা থেকে লাশটি আর বের করে নেয়া আর সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে তৃতীয়দিন সকাল থেকেই শুরু হয় লাশ পচে দূর্গন্ধ ছড়ানো। আর এই অবস্থায় মা, বাবা ও ছেলে তিনজনই ধরা পড়ে যাবার ভয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে বাসায় তালা দিয়ে চলে যায় গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী পৌরসভার চন্দ্রপুর গ্রামে।
কিন্তু নিজের অপরাধবোধে শাহনওয়াজ সন্ধ্যার আগে ফিরে আসে হাটহাজারী বাজারে। সেখানে টহলরত পুলিশকে জানায় বাসায় স্কুলছাত্রী তুহিনকে হত্যা করে বাসায় লুকিয়ে রাখার কথা। হাটহাজারী থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা এমন তথ্যই জানান।
চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, সোমবার দুপুরের দিকে তাসনিম সুলতানা তুহিনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার বড়ভাইকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আকিব জাবেদ বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার প্রথম আসামি ঘাতক শাহনওয়াজ মুন্না। অপর দুই আসামি হলেন- তার বাবা মোহাম্মদ শাহজাহান ও মা নিগার সুলতানা। এরমধ্যে শাহনওয়াজ মুন্না পুলিশ হেফাজতে আছেন। আর তার বাবা-মা আত্মগোপনে।
এরআগে রোববার দিনগত রাত দশটার দিকে পৌরসভার ফটিকা গ্রামের শাহজালাল পাড়া সালাম ম্যানশনের ৪ তলার একটি বাসার ড্রয়িং রুমের সোফার তলা থেকে স্কুলছাত্রী তাসনিম সুলতানা তুহিনের (১৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর তিনদিন আগে শুক্রবার বিকেলে নিখোঁজ হয় সে। নিহত তুহিন হাটহাজারী গালর্স হাই স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ও আবু তৈয়বের কন্যা। মা-বাবা হজে যাওয়ার আগে ভাই-বোনকে নানার মালিকানাধীন এই ভবনে রেখে যান তারা।
জেলার হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ঘাতকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার দিনগত রাত দশটার দিকে ঘাতকের বাসার ড্রয়িং রুমের সোফার নিচ থেকে স্কুলছাত্রী তাসনিম সুলতানা তুহিনের পচনধরা লাশ উদ্ধার করেছি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ওই ভবনের চতুর্থ তলার ওই ফ্ল্যাটে মোহাম্মদ শাহজাহান পবিার নিয়ে বসবাস করে আসছে। একই ফ্ল্যাটের তৃতীয় তলায় থাকে তুহিনদের পরিবার। সেই সুবাধে তুহিনের সাথে ঘাতক শাহনওয়াজের পরিচয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেম হয়।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহনওয়াজ স্বীকার করেছে, শুক্রবার বিকেলে শাহনওয়াজের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের বাসায় গেলে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে তুহনিকে। তবে তাতে বাধা দেয়ায় তাকে হত্যা করে। পরে লাশটি মা, বাবা ও ছেলে মিলে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে লুকানোর জন্য প্রথমে সোফার নিচে রাখে। পরে বাহিরে নিয়ে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তা আর হয়ে উঠেনি।
এদিকে তুহিনকে সোমবার সন্ধ্যার পর গ্রামের বাড়ি গডদুয়ারায় নিয়ে দাফন করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন