বাংলাদেশের পোশাক নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে বড় ৮ দেশ

রফতানি বাজারের প্রধান আটটি দেশ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এই আটটি দেশেই তৈরি পোশাক রফতানিতে মাইনাস প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশগুলো হলো যুক্তরাজ্য, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, বেলজিয়াম ও কানাডা। রফতানির প্রধান আট দেশেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিকে উদ্বেগজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

দেশের মোট পোশাক রফতানির প্রায় ৯৫ শতাংশ হয় প্রধান নয়টি দেশে। এর মধ্যে এই আটটি দেশই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বা হয়েছে, তিন মাসের ব্যবধানে (২০১৮ সালের মার্চের তুলনায় ২০১৮ সালের জুনে) তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তবে একবছরের ব্যবধানে সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত তিন মাসে পোশাক রফতানি কমে গেছে ২৮ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার ৩২৪ কোটি টাকা)। আর গত একবছরে (২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন) এই আট দেশে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ১০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ— এই তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি হয়েছে ১৩২ কোটি ৯১ লাখ ডলার। আর এপ্রিল থেকে জুনে রফতানি হয়েছে ১৪২ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

রফতানির প্রধান আট দেশেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ‘আগের বছরগুলোর তুলনায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুলনামূলকভাবে রফতানি আয় কমে গেছে। এটা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো খবর নয়।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক রফতানিতে মাইনাস ১২ দশমিক ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বেলজিয়ামে। দেশটিতে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে জুন— এই তিন মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছিল ১৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার। ২০১৮ সালের এপ্রিল-জুন সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি হয় ১৭ কোটি ১২ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশটিতে ২০১৬ সালের একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছিল ২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৫ সালের একই সময়ে দেশটিতে রফতানি হয়েছিল ২১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তিন মাসের ব্যবধানে (২০১৮ সালের মার্চের তুলনায় ২০১৮ সালের জুনে) জার্মানিতে তৈরি পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাজ্যের বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১২ দশমিক ১ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে নেদারল্যান্ডসেও রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এছাড়া স্পেনেও রফতানি কমেছে দুই শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত একবছরে ফ্রান্সে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ তৈরি পোশাক রফতানি কমে গেছে। এছাড়া কানাডায় কমেছে ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘রফতানি প্রবৃদ্ধি বেশ কয়েক বছর ধরেই খারাপ অবস্থায় আছে। দেখতে হবে রফতানি পণ্যের চাহিদা কমে গেছে, নাকি রফতানি পণ্যের উৎপাদন কমে গেছে। তবে গার্মেন্টস খাত সংস্কার করতে গিয়ে বেশকিছু কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে রফতানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হতে পারে।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও কেবল তৈরি পোশাক রফতানির ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। এ জন্য বিভিন্ন দেশে বিকল্প পণ্য রফতানিতে মনযোগ দিতে হবে। আবার পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু দেশের ওপর নির্ভর না করে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে মোট রফতানির ৮৪ দশমিক ৪২ শতাংশই আসে পোশাক রফতানির মাধ্যমে। আর মোট রফতানির ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ আয় হয় ওভেন গার্মেন্টস পণ্য থেকে। এর বাইরে ৪১ দশমিক ৯৬ শতাংশ আয় হয় নিটওয়্যার পণ্য রফতানি করে। এছাড়া, অন্যান্য পণ্য রফতানি করে আয় হয় ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক খাতে ৪০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশই নারী শ্রমিক। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে চালু আছে চার হাজার ৫৬০টি তৈরি পোশাকের কারখানা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পুরো রফতানি আয়ে হঠাৎ বিপর্যয় নেমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে হঠাৎ করে এ বিপর্যয় নেমেছে। একমাসের ব্যবধানে রফতানি আয় কমেছে ৩৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন হাজার ৭১ কোটি টাকা। গত আগস্টে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ৩২১ কোটি মার্কিন ডলার। অথচ গত জুলাইয়েও পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ৩৫৮ কোটি মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত আগস্টে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ একবছরের ব্যবধানে রফতানি আয় কমেছে ৪৩ কোটি মার্কিন ডলার। গত আগস্টে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ৩২১ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৭ সালের আগস্টে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ৩৬৪ কোটি মার্কিন ডলার।