ভোটের দিন মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না সাংবাদিকরা!
সাংবাদিকরা যাতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ করতে না পারেন, সে ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংবাদিক নীতিমালা জারি করেছে এই কথা বলছে ইসি।
এছাড়াও নীতিমালায় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা এবং তথ্য সংগ্রহ করতে পারার কথা বলা আছে।
এদিকে একই সঙ্গে একাধিক সাংবাদিক একই সময় একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকি ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরাসরি প্রচার করা যাবে না বলেও নীতিমালায় বলা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ শাখা) এসএম আসাদুজ্জামানের স্বাক্ষরে জারি করা ওই নীতিমালায় সাংবাদিকদের জন্য এক ডজনের বেশি দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যা অমান্য করলে বা ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন, বিধি ও কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে নীতিমালায়।
নীতিমালাটি এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচনের সব রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভোটগ্রহণের দিনসহ বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা যাতে সহজে নির্বিঘ্নে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন সেজন্য সহযোগিতা প্রদান করা প্রয়োজন আছে, তবে তা অবশ্যই নির্বাচনের সময়, ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনার সময় প্রযোজ্য বিধি নিষেধ মেনে করতে হবে।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। এজন্য ভোটকেন্দ্রের সংবাদ সংগ্রহের জন্য নির্বাচন নির্বাচন কমিশন থেকে সাংবাদিকদের বিশেষ কার্ড সরবরাহ করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার কার্ড দেবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সাংবাদিকদের কার্ড প্রদানের ক্ষমতা দিতে পারবেন। এছাড়া ঢাকা থেকে যেসব সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে যাবেন, তাদের কার্ড নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া হবে। সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত এবং অনুমোদন সূচক স্টিকার যুক্ত যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন। মোটরসাইকেল ব্যবহার করার জন্য কোনো স্টিকার ইস্যু করা হবে না।সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলের স্টিকার না দেওয়ার বিষয়টি এবারই প্রথম। তবে অন্য যানবাহন ব্যবহার করলে স্টিকার দেওয়া হবে।
এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটের সময় মোটরসাইকেল চালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ২ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত ক্ষেত্র বিশেষ আরো অধিককাল মোটরসাইকেল বা অনুরুপ যানচলাচলের নিষেধ থাকবে। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে পরে মোট চারদিন সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারছেন না।
ভোটেরদিন ঢাকা থেকে গণমাধ্যমগুলোর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের নিয়ে মোটরসাইকেলে করেই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের খবর সংগ্রহ করে থাকেন।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে-
# নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।
# ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন। তবে কোনোক্রমেই গোপন কক্ষের ছবি সংগ্রহ কিংবা ধারণ করতে পারবেন না।
# একই সাথে একাধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোট কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।
# ভোট কক্ষের ভেতর থেকে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।
# ভোট কেন্দ্রের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোট কক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে।
# কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না।
# সাংবাদিকরা ভোট গণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।
# ভোট কক্ষ থেকে ফেসবুকসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা যাবে না।
# ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
# ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকরা প্রিজাইডিং অফিসারের আইনানুগ নির্দেশ মেনে চলবেন।
# নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
# কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না।
# নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোনো ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকবেন।
# নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন