৪২ ভাগ কাজ শেষ, চলছে স্টেশন নির্মাণ
২০২২ সালে ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার
সব ঠিক থাকলে ২১ মাস পর ২০২২ সালের জুনে ঢাকা থেকে ট্রেনে সরাসরি পর্যটন শহর কক্সবাজারে যাওয়া যাবে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপন কাজ শেষ করা যাবে। সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অন্যতম দোহাজারী-কক্সবাজার ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ এখন দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৪২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কিছু দিন বন্ধ থাকলেও এখন আবার পুরোদমে চলছে।
গত সপ্তাহে প্রকল্পের অগ্রগতি দেখে এসেছেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেছেন, ‘কোনোরকম সংকট দেখা না দিলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ চলছে। ছোটখাটো যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।’
রাজধানী ঢাকা ও পর্যটননগর কক্সবাজারের সঙ্গে সরাসরি রেলসংযোগের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত আরও ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। নতুন এ রেলপথ স্থাপনের জন্য সরকার ২০১০ সালের ৬ জুলাই প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন দেয়। ২০২১ সালের ১৯ জুলাই প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়।
ওই সময়ই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল স্থির করা হয় জুলাই, ২০১০ থেকে জুন, ২০২২।
সূত্র জানান, প্রথম দফায় এ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ হবে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ। রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ হবে দ্বিতীয় ধাপে। সরকারের নিজস্ব এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবির অর্থায়ন ১৫০ কোটি ডলার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার চৌধুরীপাড়ায় দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু অর্থায়ন নিয়ে জটিলতার কারণে বেশ কয়েক বছর স্থবির থাকে প্রকল্প। এডিবি অর্থায়নে এগিয়ে এলে তাদের সঙ্গে সরকারের প্রথম দফা ঋণচুক্তি হয় ২০১৭ সালের ২১ জুন। আর দ্বিতীয় দফায় আরেকটি চুক্তি হয় ২০১৯ সালের ২৩ মে।
জানা যায়, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ প্রায় পুরোটাই সম্পন্ন। বন বিভাগের সঙ্গে যে জটিলতা ছিল তা-ও কেটে গেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে। দুই লটে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
প্রকল্পসূত্র জানান, এ রেলপথ যাবে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ওপর দিয়ে। লাইন নির্মাণ এলাকায় এখনো ব্যক্তিমালিকানাধীন ৩০ থেকে ৪০টি বসতবাড়ি রয়েছে। বাড়ি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দ্রুত তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্পের দৃশ্যমান কাজ শুরু করে ২০১৮ সালের মার্চ ও জুলাইয়ে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার মূল রেললাইন এবং ৩৯ দশমিক ২ কিলোমিটার লুপ লাইন- মোট ১৪১ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণের কাজ চলছে। ১০২ কিলোমিটারের মধ্যে বিভিন্ন ভাগে ভাগে ৯০ কিলোমিটার এলাকায় রেলপথ নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট বা পূর্তকাজ চলছে। রেলপথের ছয়টি বড় ব্রিজ হয়ে গেছে। এখন গার্ডার বসলেই সেতুর কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে। ৩৯টি ব্রিজের মধ্যে ৩০টির কাজ শেষ। এগুলোয় এখন গার্ডার ও রেলের স্লিপার বসবে। আরও ১৪৫টি ক্ষুদ্র ব্রিজ ও কালভার্টের বেশির ভাগের কাজ শেষ। বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। হাতি চলাচলের যেসব পথ রয়েছে সেগুলোর জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে আন্ডারপাস ও ওভারপাস।
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত স্টেশন থাকবে আটটি। এগুলো হচ্ছে- দোহাজারী, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। রামুতে হবে জংশন।
আর কক্সবাজারের রেলস্টেশনে নির্মাণ করা হবে আইকনিক ইন্টারমডেল টার্মিনাল বিল্ডিং। স্টেশনটি হবে ঝিনুকাকৃতির। কক্সবাজার রেলস্টেশনের পাইলিং কাজ শেষ করে এখন গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাজ চলছে। একই সঙ্গে ডুলাহাজারা রেলস্টেশনের নির্মাণকাজও চলছে। বাকি স্টেশনগুলোর মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এ শুষ্ক মৌসুমে মূল নির্মাণকাজ শুরু হবে।
রেলপথ নির্মাণের দ্বিতীয় লটে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক এবং কক্সবাজার আইকনিক ইন্টারমডেল টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজ করা হবে। এ ধাপের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ৫৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গত সপ্তাহে প্রকল্প এলাকায় বনাঞ্চলের ভিতরে হাতি পারাপারের জন্য ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ কার্যক্রম দেখেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন