দাবার গুটি বাংলাদেশ: পাশে পেতে মরিয়া চীন-ভারত
পরাশক্তি হওয়ার পথে বাংলাদেশকে পাশে পেতে মরিয়া চীন-ভারত। নিজেদের প্রভাব দেখাতে আর্থিক সহায়তার টোপ, বাণিজ্য সুবিধা কিংবা রোহিঙ্গা ইস্যুতে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি সবই দিচ্ছে উভয় দেশ। কিন্তু বাস্তবে কথা রাখছে কই? এর সবই শুভংকরের ফাঁকি। বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের স্বার্থেই রোহিঙ্গা ইস্যূ জিইয়ে রাখছে চীন-ভারত। চীনের ফাদে পা দিলে নাখোশ হবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
‘নিজেদের প্রভাব বাড়াতে বিশ্বের নানা প্রান্তে দেদারসে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে চীন। চীনকে ঠেকাতে একাট্টা যুক্তরাষ্ট ও তার মিত্ররা। চীনের সাথে পরাশক্তি হওয়ার বাসনা প্রতিবেশি দেশ ভারতেরও। তাই পরাশক্তিগুলোর দ্বন্দ্বে কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে বাংলাদেশ।’ অনুষ্ঠানে বলেন অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক।
বুধবার ইআরএফ আয়োজিত ওয়েবিনারে বিশ্বের পরাশক্তি চীন-ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈরথ থেকে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হচ্ছে তা তুলে ধরেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে ২৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির বিপরীতে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। যেখানে মিয়ানমারে বিনিয়োগ ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ভিয়েতনামে ১৮ বিলিয়ন ডলার। একই অবস্থা ভারতের ক্ষেত্রে। এসব কারণেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে না চীন-ভারত।
সম্প্রতি বাণিজ্য ক্ষেত্রে প্রায় ৯৭ শতাংশ পণ্যকে চীনে প্রবেশে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দিয়েছে। যুক্ত করতে চায় ড্রিম প্রকল্প বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভে। বিপরীত অবস্থানে ভারত। পাটপণ্যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করায় রপ্তানিতে ধস নেমেছে। হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় বেকায়দায় পড়েছে বাংলাদেশ। পাটের বীজ বন্ধেরও পায়তারা করছে। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছে। পরাশক্তিগুলো প্রতিশ্রুতির বিপরীতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি সামান্যই। তাই কারো ফাঁদে পা না দিয়ে দরকষাকষি করে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের উপর জোর দিলেন ব্যবসায়ী ও কুটনীতিকরা।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম মঞ্জুর বলেন, হংকং থেকে একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে এসেছিলো চামড়া খাতে। যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের ডিউটি ফ্রি একসেস দিতো। তাহলে চার হাজার লোকের পরিবর্তে তারা ১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করতে পারত। একটা কোম্পানি একশ’ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে পারত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সে সুযোগ দেয় নি। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, কুটনীতি বুঝতে হবে। ভিয়েতনাম নিরাপত্তার জন্য চীনকে হুমকি মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যাচ্ছে সহায়তার জন্য। আবার বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের দারস্থ হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বললেন, নির্ধারণ করা হচ্ছে নয়া কৌশল। যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের বাণিজ্যযুদ্ধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থবিরতা কিছুটা এনেছে। করোনার আগেই এটা শুরু হয়। আমাদের পোশাক, চামড়াসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করি, তাই চিন্তার অবকাশ আছে। আমরা এফটিএ করছি, আরো করবো। প্রশিক্ষণ দিচ্ছি মন্ত্রণালয় থেকে। আমাদের ডিপ্লোম্যাটিক সেলগুলোকে আগের চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে ব্যবসা বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। তাদেরকে সেভাবে মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে রেভিনিউ কমলেও দীর্ঘ যাত্রার পথে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামতে, এফটিএ, পিটিএর মত বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে।
চলমান ভূঅর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনের মাঝেও এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি হিসেবে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়ানোর উপর নজর দেয়ার পরামর্শ দেন বক্তারা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন