কর দিয়েও হতাশ পৌরবাসী সেবা না পেয়ে

পৌর শহরের অধিকাংশ রাস্তায় বড় বড় গর্ত। নর্দমার মধ্যে জমে থাকছে ময়লা পানি। অতিবৃষ্টিতে পানি উপচে পড়ছে রাস্তায়। ভাঙাচোরা নর্দমায় ঢাকনাও নেই। কোনো কোনো রাস্তার মোড়ে মোড়ে বর্জ্যের স্তূপ। কিছু কিছু রাস্তায় বৈদ্যুতিক বাতি না থাকায় সন্ধ্যার পরই নেমে আসে অন্ধকার। উন্মুক্ত ময়লার স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের কারণে সারাদিন তীব্র যানজট। সংস্কার নেই পৌরভবনসহ পৌরসভা-নিয়ন্ত্রিত হাটবাজার ও বাস টার্মিনালে।

ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার চিত্র এগুলো। গত ৫ বছরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কারকাজ চোখে পড়লেও উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি পৌর এলাকার বাসিন্দারা।

বর্তমানে পৌর মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা ফয়সল আমিন। তিনি বিএনপির ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন।

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ঠাকুরগাঁও পৌরসভা ১৯৯৭ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা লাভ করে। বর্তমানে ৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে পৌর এলাকা গঠিত। ১২টি ওয়ার্ডে ৩ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস।

পৌর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের এক-তৃতীয়াংশ রাস্তায় পিচ উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর দিয়েই চলছে মোটরবাইকসহ ভারি যানবাহন। বর্ষায় কাদা আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালির মধ্যে দুর্ভোগে পৌরবাসী। বিশেষ করে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ছোট ছোট রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

১নং শান্তিনগর এলাকায় ইজিবাইকচালক এরশাদুল হক (৩৬) বলেন, রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা হওয়ার কারণে গাড়ির ব্যাটারি ধাক্কা পায় বেশি। ব্যাটারির পানি পড়ে যায়। এক জোড়া ব্যাটারির দাম ২৫ হাজার টাকা।

অন্যদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, নিশ্চিতপুর এলাকার রাস্তা এতই খারাপ যে অটো পর্যন্ত যেতে চায় না।

দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পৌরসভা নিয়ন্ত্রিত বাস টার্মিনালটির অবস্থাও বেহাল। বর্ষায় জমে থাকছে পানি। যাত্রীদের ওয়েটিং রুমে নেই বসার ব্যবস্থা। অবহেলা অযত্নে পড়ে আছে কোটি টাকার ভবন। রাতে মাদকসেবীদের দখলে চলে যায় বাস টার্মিনালটি এমনও অভিযোগ অনেকের।

টার্মিনাল এলাকায় দিনাজুপরগামী তৃপ্তি এন্টারপ্রাইজ গাড়ির টিকিট কিনেছেন রাজেন্দ্রনাথ রায়। একটু পরেই বাস ছাড়বে। রাজেন্দ্র বলেন, যদিও টার্মিনালে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না, আধঘণ্টা পরপরই বাস পাওয়া যায়। একটিমাত্র টয়লেট, সেটিও ব্যবহারের অনুপযোগী।

ঠাকুরগাঁও জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর জব্বার বলেন, টার্মিনালটির সংস্কারের বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু সংস্কার হয়নি।

পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন হাটবাজার রয়েছে ৪টি। এগুলো হলো কালিবাড়ি বাজার, বাসস্ট্যান্ড, সেনুয়া ও ঠাকুরগাঁও রোড বাজার। এই বাজারগুলোর সংস্কার না হওয়ায় বৃষ্টি বাদলের দিনে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। বর্ষায় বাজারের রাস্তা হয় কর্দমাক্ত।

পৌর এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার না হওয়ায় প্রতিটি ওয়ার্ডের ছোট ছোট ড্রেনগুলো ভেঙে গেছে। পানি প্রবাহ না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি উপচে পড়ছে রাস্তায়।

আবার স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে ময়লা ফেলছেন অনেকেই। আবার বিদ্যমান ডাস্টবিনগুলোর প্রায় সবকটিই ভাঙা ও উন্মুক্ত। বেশির ভাগ ওয়ার্ডে কোনো ডাস্টবিনই নেই। এর ফলে নর্দমার মধ্যেই গৃহস্থালির ময়লা ফেলার কারণে নর্দমার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

পৌরসভার হিসাবমতে, ৮৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ পৌর এলাকায় বৈদ্যুতিক সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। শহর ঘুরে দেখা যায়, কিছু খুঁটিতে বৈদ্যুতিক বাতি নষ্ট। খুঁটিতে বাতি থাকলেও অধিকাংশ বাতিতে নেই সেপটিক ঢাকনা। তাই অতিবৃষ্টি কিংবা ঝড়ের আঘাতে নষ্ট হয়ে যায়। ১,২,৩,৫,১০ ও ১২ নং এলাকায় অধিকাংশ খুঁটিতে বৈদ্যুতিক বাতি নষ্ট হওয়ায় সন্ধ্যার পর থাকে অন্ধকার। দোকানপাট বন্ধ হলে দেখা যায় ৩ কিলোমিটার জায়গায় ৩ বাতিও জ্বলে না।

বাসাবাড়ি কিংবা সরকারি অফিসে সবার অভিযোগ, কর দিই, সেবা পাই না।

পৌরসভার সেবার মান নিয়ে কথা তুলতেই মুসলিম নগর এলাকার অজয় বিশ্বাস কর প্রদানের রসিদ বের করেন। তারপর বলতে শুরু করেন, গত কয়েক বছরে অনেক টাকা কর পরিশোধ করেছি। অথচ গত বর্ষায় হাঁটুপানি ডিঙিয়ে অফিসে যেতে হয়েছে। বেশিরভাগ রাস্তাই অন্ধকার থাকে। একাধিকবার অভিযোগ করেও সুফল পাইনি।

পৌরসভার উন্নয়ন কার্যক্রম ও সেবার নিম্নমানের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র মির্জা ফয়সল আমিন বলেন, ঠাকুরগাঁও পৌরসভা অনেক বড় একটি পৌরসভা। সেই তুলনায় উন্নয়ন বরাদ্দ অপ্রতুল। রাজনৈতিক বিবেচনায় বরাদ্দ কম পেয়েছি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নগর উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বড় একটি বরাদ্দ হয়েছে। যার কাজ চলমান রয়েছে। বিশ্বব্যাংক থেকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা এবং এমজিএসপি প্রকল্পের আওতায় খুব শিগগির বড় বরাদ্দ পাওয়া যাবে।