রংপুরের পীরগঞ্জে পাহারা দেয়ার নামে বে-পরোয়া চাঁদাবাজী!
রংপুরের পীরগঞ্জের ভেন্ডাবাড়ী খালাশপীর সড়কের কাদিরাবাদ বন বিট এলাকায় প্রায় ৬ বছর ধরে বে-পরোয়াভাবে চাঁদাবাজী করে আসছে কতিপয় চিহ্নিত দুস্কৃতিকারী। সড়কে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে প্রত্যহ সন্ধ্যা ঘুনিয়ে আসতে না আসতেই শুরু হয় সড়ক পাহারার নামে চাঁদাবাজী। পাহারাদারদের নির্ধারিত চাঁদা দিতে গড়িমসি করলেই মোটর সাইকেল আরোহী, রিক্সা-ভ্যান, চার্জার অটো, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক চালক ও যাত্রীদের হেনেস্তার শিকার হতে হয় হরহামেশাই। শারীরিকভাবে লাঞ্চনার শিকারও হয়েছেন অনেকে।
শুধু তাই নয়, চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিগেটের সঙ্গেও রয়েছে তাদের নিবিড় সম্পর্ক। রাতের অন্ধকারে নির্বিগ্নে পথ চলার জন্য পাহারাদারদের সঙ্গে চুক্তি করে অবাধে ব্যবসা চালাচ্ছে চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, ভেন্ডাবাড়ী- খালাশপীর ১০ কিলোমিটারের এ সড়কে প্রতিদিন প্রায় সহ¯্রাধিক যানবাহন চলাচল করে। কাদিরাবাদ বন বীটের চৌরাস্তা ও পাঁচমাথার মধ্যবর্তী অর্ধ কিলোমিটার দু’ধারে ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত সড়কে এক সময় প্রায় রাতেই ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা ধরণের অপরাধ সংঘঠিত হতো। এ সব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় ও থানা পুলিশ প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে ঐ এলাকার পেশাদার চোর, ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের তালিকা করে কাদিরাবাদ বন বিট এলাকার ঐ সড়কে ভ্রাম্যমান সড়ক পাহারার পরিকল্পনা করা হয়। এতে সড়কের আশপাশের খিতাবেরপাড়া, কানঞ্চগাড়ী, মদনখালী গ্রামের প্রায় ১৩/১৪ জন চিহ্নিত অপরাধীদের সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসার অঙ্গিকারে রাতে সাধারণ পথচারীদের যানমালের নিরাপত্তা দিতে ভ্রাম্যমান পাহারা দেয়ার অনুমতি দিয়ে একটি ঘরও তুলে দেয়া হয়। বিনিময়ে তারা পথচারীদের সাধ্যানুযায়ী সাহায্য সহযোগীতা (চাঁদা) নিতে থানা প্রশাসনের অলিখিত অনুমতিও পায়। প্রাথমিক পর্যায়ে সড়ক পাহারাদারদের স্থানীয় ও থানা প্রশাসন থেকে যৎ সামান্য আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করলেও কিছুদিনের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে প্রশাসনের অনুমতি দেয়াকে পুঁজি করে গায়ের জোরে কোন কৈফিয়ত ছাড়াই প্রতি মোটরসাইকেল, রিক্সা-ভ্যান, অটো চার্জার- ১০ টাকা, পাওয়ার টিলার ৩০, মাইক্রোবাস ৫০ থেকে ১শ’, ট্রাক ১’শ থেকে ২’শ, যাত্রীবাহী বাস ১’শ থেকে ৩’শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা বাধ্যতামূলক আদায় করা হচ্ছে। কেউ টাকা দিতে ব্যর্থ হলে সংঘবদ্ধ পাহারাদারদের তোপের মুখে পড়তে হয়। হেনেস্তা, জুলুম এমনকি শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনাও দীর্ঘ। অথচ ডিউটি পোষ্ট এলাকার ঐ অর্ধ কিঃমি সড়কের দু’ধারের গাছ-পালা সম্প্রতি কাদিরাবাদ বন বিভাগ সিডিউল অনুযায়ী কর্তন করায় অপরাধীদের আড্ডাস্থল নষ্ট হয়েছে বলে জানান ভূক্তভোগীরা।
তাছাড়া ঐ অর্ধ কিঃমি সড়কে প্রায় ৪/৫টি সৌর বিদ্যুৎ চালিত ল্যাম্প পোষ্ট স্থাপন করায় পুরো সড়ক আলোকিত।
ভূক্তভোগী ভ্যান চালক আসাদুল, মহেন্দ্র চন্দ্র, চার্জার অটো চালক আনোয়ার, বুলবুল, জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা সন্ধ্যার পর ঐ সড়কে দু’এক জন পেসেঞ্জার নিয়ে ভাড়াতে যাই না। কারণ পাহারাদারদের চুঙ্গি দিয়ে পোশায় না। তবে যদি পেসেঞ্জাররা অতিরিক্ত ভাড়া দেয় তাহলে যাই। এ জন্য সাধারণ যাত্রীকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সম্প্রতি রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ শঠিবাড়ি জোনাল অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ সপরিবারে বাসযোগে পীরগঞ্জের বিনোদন কেন্দ্র ‘আনন্দ নগর’ থেকে সন্ধ্যায় ফেরার পথে কথিত পাহারাদাররা বাসটি থামিয়ে ৩শ’ টাকা চাঁদা দাবি করে এতে বিদ্যুৎ কর্মকর্তা, কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলে উভয়ের মধ্যে বচসা হয়। বচসার এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত পাহারাদাররা মজুত রাখা লাঠি ও গাছের ডাল দিয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ব্যাপারে ৯ জন পাহারাদারকে আসামী করে থানায় মামলা হয়- যা বিচারাধীন। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী গ্রামের হতদরিদ্র বাদাম বিক্রেতা গোপাল চন্দ্রের মেয়ে শ্যামলী রাণীর বিয়েতে বর পক্ষ জয়পুর হাটের পাঁচবিবি থেকে আসার সময় যাত্রীবাহী বাসটি থামিয়ে ৩শ’ টাকা দাবি করে। এতে অসহাত্বের কথা জানিয়ে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রায় ২ ঘন্টা বিয়ের বাসটি আটকে রাখা হয়। পরে আকুতি মিনতি জানিয়ে ২শ’ টাকা দিয়ে পথ চলতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানায়, ওরা (পাহারাদার) দাঙ্গাবাজ এবং জুলুমবাজ। ওদের বিরুদ্ধে কথা বললেই নানাভাবে হেনেস্তার শিকার হতে হয়। ওরা পাহারার নামে নিজেরাই প্রত্যহ ঐ পোষ্ট ঘরে মাদক সেবনের আসর বসায়। কেউ কেউ মাদক বিক্রির সঙ্গেও জড়িত। ভ‚ক্তভোগীরা আক্ষেপ করে বলেন, জনগণের যানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, কিন্তু রাস্তায় তারা কে? ১২ কিঃমি দুরত্বে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের পাশাপাশি ৬ কিঃমি দুরত্বে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থাকা সত্বেও তাদের (পাহারাদার) দরকার কি? এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলম বলেন, আমার কাছেও নানা অভিযোগ আসছে। ওসি সাহেব এবং নির্বাহী কর্মকর্তা’র সঙ্গে কথা বলে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সরেস চন্দ্রের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে বলেন, এক সময় ঐ স্থানটিতে প্রায়ই ক্রাইম হতো, তাই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদেরকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বর্তমান যদি তাদের দরকার না হয়, তাহলে উঠিয়ে দেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন