এত উন্নয়নের পরও স্বস্তি পাচ্ছি না : ওবায়দুল কাদের
অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন করলেও কয়েকটি সমস্যা সেই সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, আমরা যতই উন্নয়ন করি, এসব উন্নয়নের সাফল্য বা সুফল যদি জনগণ না পায়, তাহলে সেই উন্নয়নের অর্থ ব্যর্থ হয়ে যায়। উন্নয়নকে ম্লান করে দেয় কতগুলো সমস্যা। ফলে অবকাঠামোগত এত উন্নয়নের পরও স্বস্তি পাচ্ছি না।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকার বাস চলাচলের ব্যবস্থা পাল্টে দিতে ‘রুট ন্যাশনালাইজেশন’ এর আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে বাসসেবা চালুর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ অস্বস্তির কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সেতুমন্ত্রী বলেন, সুশৃঙ্খল ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই মেয়রকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আমি এর সাফল্য কামনা করি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি গত ১২ দিন হাসপাতালে ছিলাম। সেখানে থেকে আজ রিলিজ হয়ে বাসায় না গিয়ে সরাসরি মন্ত্রণালয়ে এসেছি। আমি এই উদ্যোগটাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমার উপস্থিতিতে সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একের পর এক উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে।
রাজধানীর যানজটসহ আরও কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরে কাদের বলেন, অনেক ফ্লাইওভার, অনেক আন্ডারপাস, অনেক ফোরলেন, সিক্সলেন আমরা এই সময়ে করেছি। সড়ক ও পরিবহনে শৃঙ্খলা না ফিরলে মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে লাগবে না বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আজ সড়কে শৃঙ্খলা, পরিবহনে শৃঙ্খলা। পরিবহন আর সড়কে শৃঙ্খলা না থাকলে জনগণ উন্নয়নের সুফল পাবে না। আগামী বছর যে প্রকল্পগুলো আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি, এগুলোর সুফল আমরা পাব না।
ঢাকাকে বসবাসের জন্য অন্যতম বাজে শহর উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে যে কয়টি সিটি লিভেবল না, এর মধ্যে ১৪০-এর মধ্যে আমরা ১৩৭তম স্থানে রয়েছি। আমাদের উন্নয়ন আর অর্জনের সঙ্গে আমাদের সিটির যে দুরবস্থা, অপরিচ্ছন্ন-অপরিকল্পিত একটি শহর- এটি মানায় না। ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার যে বহুদিনের লিগ্যাসি আমরা বহন করে চলছি এবং দূষণের দিক থেকেও রেকর্ড আছে- এসব সমাধানে দুই মেয়র উঠে পড়ে লেগেছেন। তারা পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন, এটি অত্যন্ত শুভ দিক।
রাজধানীর বাস ব্যবস্থাপনাসহ আধুনিক নগর পরিবহন ব্যবস্থা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের অনেক আগে যা হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। এটি আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা ক্ষমতার রাজনীতি করি। কিন্তু জনমানুষের জন্য যা করা দরকার তা থেকে পিছিয়ে ছিলাম আমরা এত দিন।
১৯৮৪ সালে ভারত কলকাতা মেট্রোরেল চালু করে। আর আমরা চালু করতে যাচ্ছি ২০২২ সালে। সেটা একটা দেশও নয়, একটা স্টেট। এটা আমাদের ভাবতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর এ দেশে কোনো মেগা প্রজেক্ট হয়নি সড়ক পরিবহনে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক এই বাস ব্যবস্থাপনা চালু করতে চেয়েছিলেন। মন্ত্রী বলেন, আনিসুল হক সাহেবের মৃত্যুতে এ উদ্যাগটিতে ভাটা পড়ে যায়। আমি আনন্দিত ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের দুই জননন্দিত মেয়র আমাকে যে কথা দিয়েছিলেন, ঢাকাবাসীকে যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তারা তাদের আশ্বাস রেখেছেন। এটা অত্যন্ত দুরূহ কাজ।
রাজধানীকে ‘যানজটপ্রবণ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ঘটনা যেমন দুর্ভাবনা, তেমনি যানজটও দুশ্চিন্তার কারণ। এ দুটি মাথায় রেখেই সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থার জন্য দুই মেয়র যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার সাফল্য কামনা করি।
২০২২ সালে পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়ে সড়ক মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের সোনালি ফসল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন পিচঢালাই চলছে। আগামী বছর পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।
আমাদের আরেকটি প্রকল্প গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট, যেটা অত্যন্ত ভোগান্তির কারণ ছিল। গত কয়েক বর্ষায় জনগণ অনেক কষ্ট করেছে, এটারও অবসান হতে যাচ্ছে। আমি আশা করছি, আগামী বছরের শেষে আমরা এটিও উন্মুক্ত করে দিতে পারব যান চলাচলের জন্য।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বহুদিন ঝুলে ছিল ফান্ডিংয়ের অভাবে। এটার কাজও এখন গতি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি গতি পেয়েছে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ। এর ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
ঢাকায় তরুণ প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন সিক্স আগামী বছরই আমরা উদ্বোধন করতে পারব। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মোটরসাইকেলের যে শৃঙ্খলা, এটা কিন্তু পুলিশের বিশেষ উদ্যোগে হয়েছে। এ কারণেই দেখা যায়, এখন সিটিতে মোটরসাইকেলগুলো যেভাবে চলার কথা, সেভাবেই ৯৫ ভাগ চলছে। কিছু ব্যতিক্রম আছে। আমি বলব, এদের অধিকাংশই রাজনৈতিক কর্মী। তারা নিয়ম মানতে চান না। অনেক সময় দেখবেন, অনেক মোটরসাইকেল চলছে, এদের কোনো হেলমেট নেই এবং তিনজন করে চলছেন। এসব ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে। সারা দেশেই এভাবে করতে হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন