ডাক্তার-প্যাথলজিস্টট নাই অথচ সারাদিন চলে রোগি দেখা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা!
কোন ডাক্তার নাই অথচ সারাদিন রোগি দেখা হয়, আবার কোন প্যাথলজিস্টট নাই কিন্তু সারাদিন পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চলে। গ্রাম্য দালালদের মাধ্যমে বুঝিয়ে সুজিয়ে আনা দরিদ্র রোগিদের একবার ভবনের মধ্যে ঢুকাতেই পারলেই সর্বনিন্ম ৪ হাজার থেকে শুরু করে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিল করা হয়।
আলোচিত এই চিকিৎসা কেন্দ্রের নাম তিয়ানশি কোম্পানি।
সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল স্কুল সংলগ্ন ডা. পুস্পাঞ্জুলির বাড়ির দ্বিতীয় তলার দুটি ইউনিট নিয়ে এভাবে চায়না ওষুধ বিক্রির রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কথিত এই সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান।
বিক্রিত অর্থ সাইকেল আকারে দালালদের দেওয়া হয় কমিশন। আর দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময় ও রাতে চলে একটি চক্রের কার্যক্রম।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি বেশ গোপনীয়তা বজায় রেখে দীর্ঘদিন ওই ভবনে তাদের অবস্থান। সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার দালালদের মাধ্যমে ভাগিয়ে আনা গ্রামের দরিদ্র মানুষদের নিয়ে জমজমাট ব্যবসা চলে।
এখানে আসা দুইজন মানুষের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভাই পকেটে যতক্ষণ পয়সা থাকবে ততক্ষণ রোগ ধরা পড়ে আর চিকিৎসার নামে বিল করতে থাকে। যখন বোঝে পকেট ফাকা তখন দিন দিয়ে বলে আগামী সপ্তাহে আসেন। সপ্তাহের দুইদিন যেন নারী পুরুষের চিকিৎসার নামে সমারোহ চলে প্রতিষ্ঠানটিতে।
খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সেবা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোন সরকারি অনুমোদন নাই এখানে, নাই কোন চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ও সেবিকা। আবার এসব ওষুধ বিক্রির নামে কিভাবে রোগি নামক ক্ষরিদ্দার ধরতে হবে, কত কমিশন হবে, কে কে সাইকেল আকারে কমিশন পাবে, একটা ওষুধ বিক্রি হলে কত জনের কমিশন হবে এসব নিয়ে কৌশলী প্রশিক্ষণও চলে প্রতিষ্ঠানটিতে। সপ্তাহের দুই তিন দিন এমন কৌশলী প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। আর এসব প্রশিক্ষণের নামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে জামায়াতী কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
অভিযোগ রয়েছে শিবির সমর্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি বিগত ১৩-১৪ সালে শহরের কামালনগরের একটি ভাড়া বাড়িতে গোপন বৈঠকসহ জামায়াতী কার্যক্রম চলতো। খরব পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল কামালনগরের মহিউল আলম মুকুলের একতলা ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে থাকা তিয়ানশি নামক প্রতিষ্ঠানে হানা দেয়। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় অসংখ্য গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে ৬জন গুলিবিদ্ধ হয় এদের মধ্যে ২জনের মরদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে। সেসময়ে নিহতদের একজন ছিলেন শিবিরের জেলা কমিটির সভাপতি। এঘটনায় একাধিক মামলা হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতা সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকে।
স্থান পরিবর্তন করে সেই তিয়ানশি এখন ঠান্ডা মাথায় নতুনভাবে মাঠে নেমেছে দলের কার্যক্রমের পাশাপাশি রুটি রুজির ব্যবসা।
এদিকে, এই প্রতিষ্ঠানের মুল দায়িত্বে রয়েছেন মফিজুল ইসলাম, তিনি পরিচালক ও প্রশিক্ষক হিসেবে আছেন। এখানে আরো দায়িত্বে আছেন আব্দুল্যাহ, শাহিন, শফিকুলসহ বেশ কয়েকজন। দায়িত্বরতরা আবার প্রত্যেকে সাংবাদিক। তাদের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলে বড় বড় করে লেখা আছে প্রেস। কথায় কথায় যাকে তাকে বলে আমরাও কিন্তু সাংবাদিক। সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে ওষুধ বিক্রি করে রুটি রুজি আর দলের কাজ করাই হল এই প্রতিষ্ঠানের মুল লক্ষ্য।
প্রতিষ্ঠানে ঝুলানো একটি সাইনবোর্ডে দেখা গেছে, মেসার্স ইউনিক ট্রেডার্স, তিয়ানশি গ্রুপের একটি সাইনবোর্ড ঝুলানো। পাশে দৈনিক আজকের সারাদেশ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের নাম দেখা গেছে। এভাবেই সাংবাদিকতার সাইন বোর্ড, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে বোর্ড ঝুলিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষের সাথে প্রতারণা অব্যহত আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে যখন রোগির চাপ থাকে বা প্রশিক্ষণ চলে তখন নীচে একজন পাহারাদারকে রাখা হয়। তিনি সার্বক্ষণিক চতুরমূখী নজর রাখেন ও কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার গ্রামের মানুষ নামক রোগিদের কাছে ওষুধ বিক্রির নামে দলীয় বৈঠক-প্রশিক্ষণ চলে।
আর রাতে প্রত্যহ ৪/৫ জন মহিলা ও পুরুষদের গভীরভাবে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিতে দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানান এ প্রতিবেদককে।
তবে এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তেমন কোন খোজ খবর না রাখলেও খোজ নেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে দুটি গোয়েন্দা সংস্থা এই প্রতিষ্ঠানের উপর নজরদারি করছেন এমনটি জানিয়ে বলেন তাদের গতিবিধি আরও গভীরভাবে দেখা হচ্ছে।
শফিকুল ইসলাম নিজেকে তিয়ানশির প্রশিক্ষক ও চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে বলেন, সাতক্ষীরা তিয়ানশি অফিসে হোমিওপ্যাথি অথবা এ্যালাপ্যাথি চিকিৎসা দেওয়া হয় না। এখানে ন্যাচারাল ফুড সাপ্লিমেন্ট খাওয়ানো হয়ে থাকে। হোমিওপ্যাথি অথবা এ্যালাপ্যাথির পাশাপশি যে কেউ খেতে পারেন। পুষ্টি ঘাটতির কারণে শরীরে যে অঙ্গগুলোতে সমস্যা হয় সেই অঙ্গগুলো সেই পুষ্টিগুলো দেওয়া হয়। যারা অভিজ্ঞ তার এই পোডাক্টগুলো লিখে ক্যালসিয়াম ঔষুধ, থেরাপি মেশিনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, কামালনগরে আমাদের অফিস ছিলো এবং সেসময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এখন কেউ নেই। জামায়াত-শিবিরের সাথে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
সাতক্ষীরার তিয়ানশির পরিচালক ও প্রশিক্ষক মফিজুল ইসলাম বলেন, তিয়ানশি চায়না কোম্পানি। এটি পোডাক্ট নিয়ে কাজ করে। এটি ড্রাগ বা ওষুধ না। আর কিছু বিয়ামের মেশিন নিয়ে কাজ করি। আমাদের কোন ডাক্তার বা ডক্তারী জাতীয় কোন কার্যাক্রম নেই। পুরোটাই পোডাক্ট বেশ করি। দেশের চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি আমরা পরামর্শ দেই চাইলে আমাদের ফুড সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। আমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমিও সাংবাদিক। দৈনিক আজকের সারাদেশ ব্যুরো প্রধান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন