সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের বিতর্কিত নির্বাচন বন্ধে আদালতে মামলা

কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবে গঠনতন্ত্র বিরোধী পাতানো নির্বাচন বন্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। বিতর্কিত ওই নির্বাচন বন্ধের জন্য ৩ নির্বাচন কমিশনার এবং প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছেন প্রেসক্লাবের সদস্য (নং-৫৪) হাবিবুল্লাহ বাহার।

মামলার আরজি সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সদরে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কালিগঞ্জ প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাব গঠনের কিছুদিন পর কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি প্রকৃত সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দ মত ব্যক্তিদের সদস্যভুক্ত করে নিজেদের পদ টিকিয়ে রেখেছেন। ব্যক্তিস্বার্থে তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সদস্য হওয়ার বিধান থাকলেও কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বেআইনিভাবে সদস্যভুক্ত করে নানা উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখেন তারা।

এরই ধারাবাহিকতায় বিগত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর ২০২২ সালে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য প্রেসক্লাবের সদস্যদের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। ওই যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য থাকে হাফিজুর রহমান শিমুলসহ ৩ জন। প্রেসক্লাবের বিধিবিধান অনুসরণ করে ৫৯ জন ভোটারের মধ্যে ৭ জনের দাখিলকৃত কাগজপত্র অসঙ্গতিপূর্ণ মর্মে গত ৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং তারা ওই ৭ জনকে চুড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বেইনিভাবে ত্রুটিযুক্ত সদস্যদের নিয়ে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেন এবং পরবর্তীতে নির্বাচন করার জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ৩ জনকে বাদ দিয়ে ৫৬ জনের ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন কমিশনার প্রেসক্লাবের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।

এ নিয়ে প্রেসক্লাবের প্রকৃত সাংবাদিকদের একাংশ ভোট বর্জন করে। প্রকৃত সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের লক্ষ্যে প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভপতিকে আহবায়ক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদককে যুগ্ম আহবায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহবায়ক কমিটি সঠিক ভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। অথচ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল বারী সফু ও সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাশ বাচ্চু ক্ষমতা কুক্ষিগত নিজেরা একটি প্যানেল গঠন করেন এবং তাদের দ্বারা গঠিত নির্বাচন কমিশনারগণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার অনেক আগেই তারা বিনাপ্রদ্বিন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিভিন্ন মহলে প্রচারণা শুরু করেছেন।

প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও প্রচুর সংখ্যক ভূয়া সাংবাদিকদের যুক্ত করে তৈরীকৃত ভোটারতালিকার মাধ্যমে নির্বাচন করার উদ্যোগ বন্ধ করতে প্রেসক্লাবের সদস্য ও সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সাতঘরিয়া পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার্স হাবিবুল্লাহ বাহার আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা বিবাদীরা হলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের মৃত কাজী আব্দুর রহিমের ছেলে কাজী মোফাখ্খারুল ইসলাম নিলু, সহকারী নির্বাচন কমিশনার চাম্পাফুল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মৃত লুৎফর রহমান মোড়লের ছেলে আব্দুল লতিফ মোড়ল, নির্বাচনী দপ্তর বিষয়ক কমিশনার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত নুর আলী গাজীর ছেলে গাজী মিজানুর রহমান, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজার গ্রাম এলাকার মৃত শেখ গোলাম বারীর ছেলে শেখ সাইফুল বারী সফু ও একই ইউনিয়নের বাজারগ্রাম রহিমপুর এলাকার মৃত কালীপদ দাশের ছেলে সুকুমার দাশ বাচ্চু।

বিজ্ঞ বিচারক শুনানী শেষে ৫ বিবাদীকে আগামী ১৬ আগস্ট আদালতে হাজির হয়ে জবাব প্রদানের সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী।
এদিকে ব্যাপক ত্রুটিপূর্ণ ভোটারতালিকা তৈরী ও সংবিধানের অনেক ধারা লঙ্ঘন করে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চক্রান্ত রুখতে কালিগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত কমিটির মাধ্যমে অসাংবাদিকদের বাদ দিয়ে এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের সদস্যভুক্ত করে কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য তারা জোর দাবি তুলেছেন বলে জানা গেছে।