ব্রাজিলে পালিত হলো শেখ রাসেল দিবস
ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ মর্যাদায় উদ্দীপনাপূর্ণ প্রাণবন্ত পরিবেশে বাংলাদেশী এবং ব্রাজিলীয় শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব- এর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিবস পালন করে। COVID-19 মহামারীর অন্যতম ক্ষতিগ্রস্থ দেশ ব্রাজিলের ভয়াবহ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের পর এই প্রথম ব্রাসিলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে দূতাবাস কোন জাতীয় দিবস পালন করে।
মঙ্গলবার (১৮ই অক্টোবর) বিকেল পাঁচটায় দূতাবাস প্রাঙ্গনে শুরু হওয়া মূল অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ব্রাসিলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী শিশুরা দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’-এর উপর চিত্রাংকন করে। ব্রাসিলিয়া প্রবাসী প্রায় সকল অভিবাসী বাংলাদেশী শিশু চিত্রাংকন পর্বে অংগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে ব্রাজিলে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মিজ সাদিয়া ফয়জুননেসা অনুষ্ঠানে আগত শিশুদের সাথে নিয়ে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর পবিত্র কুর’আন থেকে তিলাওয়াত, পবিত্র গীতা থেকে শ্লোক এবং পবিত্র বাইবেল থেকে কিছু স্তোত্র পাঠ করা হয়। শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডে নিহত বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এরপর শহীদ শেখ রাসেলের উপর নির্মিত বেশ কিছু আলেখ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। উপস্থিত সুধীবৃন্দ ও শিশু কিশোররা প্রদর্শিত ভিডিও চিত্রগুলো মুগ্ধতার সাথে উপভোগ করেন।
শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ব্রাসিলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী শিশুদের অংশগ্রহণে দেশাত্ববোধক কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের অন্যতম মূল আকর্ষণ ছিল ব্রাসিলিয়াস্থ Centro Cultural Escola do Mundo-এর শিল্পীগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা “কাপুয়েরা”- এর বিশেষ পরিবেশনা যা উপস্থিত সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। শেখ রাসেল দিবস-এর প্রতিপাদ্য সামনে রেখে মূলত ব্রাজিলীয় শিশুশিল্পীরা এই পরিবেশনাটিতে অংশ নেয়। উল্লেখ্য যে ‘কাপুয়েরা’ ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বে দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজ সাদিয়া ফয়জুননেসা তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, জাতির পিতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বই আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, লাল সবুজের পতাকা আর দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ। ব্রাজিলের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদানের প্রথম কর্ম দিবসেই শেখ রাসেল দিবস উদযাপনের সুযোগ পেয়ে রাষ্ট্রদূত নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে দাবি করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডকে ইতিহাসের নৃশংসতম ও বর্বরতম ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় নেতৃত্বের ফলে ঐ ঘৃণিত হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে । শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পলাতক খুনীদের অবস্থান ও সংশ্লিষ্ট যে কোন তথ্য দূতাবাসকে তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে দেশের প্রতি নিজ কর্তব্যপালনের অনুরোধ করে রাষ্ট্রদূত উপস্থিত সকলকে সদাসতর্ক ও সজাগ থাকার আহবান জানান।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের সাফল্যগাঁথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা বলেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশিত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান। বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারাবাহিকতাকে নিজেদের মধ্যে লালন করে যার যার অবস্থান থেকে বাংলাদেশ নামটিকে সদা গৌরবান্বিত রাখার জন্য ব্রাজিলে বসবাসকারী অভিবাসী ও প্রবাসী ভাই-বোনদের তিনি উদাত্ত আহবান জানান।
রাষ্ট্রদূত ফয়জুননেসা তাঁর বক্তব্যে শেখ রাসেল দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ অবলম্বনে শিশুদের আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত ফয়জুননেসা বলেন, আমাদের সন্তানরা শুধু স্ব স্ব দেশের নয় সমগ্র বিশ্বের ভবিষ্যত কর্ণধার, তাই তাদেরকে অসাম্প্রদায়িকতা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। প্রবাসী বাংলাদেশীদের তিনি নিজ নিজ সন্তানকে বাংলা ভাষা শেখানোর অনুরোধ করেন। সেই সাথে সন্তানদের বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু, ১৫ আগষ্ট-এর ঘৃণিত হত্যাকান্ড – তথা বাঙ্গালী জাতির সামগ্রিক ইতিহাস সম্বন্ধে জানানোর আহবান জানান। রাষ্ট্রদূত উপস্থিত প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন যে, প্রবাসী এবং অভিবাসী বাংলাদেশীরা আগ্রহী হলে দূতাবাস একটি সাপ্তাহিক বাংলা বিদ্যালয় চালু করার উদ্যোগ নিতে পারে, যেখানে আমাদের শিশুরা বাংলা ভাষা শেখার পাশাপাশি বাংলা গান, কবিতা আবৃত্তি এবং চিত্রাংকন শিখতে পারবে। দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং দূতাবাস পরিবারের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাংলা স্কুলে শিক্ষা প্রদান করবেন।
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে মান্যবর রাষ্ট্রদূত চিত্রাংকন ও আবৃত্তি পর্বে অংশ নেয়া সকল শিশু এবং ‘কাপুয়েরা’শিল্পীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন