যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প ভূত আর গর্ভপাত আইন আটকে দিল রিপাবলিকান ‘লাল ঢেউ’
নানা কারণে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমে গেছে, সঙ্গে বিশৃঙ্খল আর্থ-সামজিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের উপরে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে এসব কিছুই রিপাবলিকানদের পক্ষে যাওয়ার কথা ছিল।
জনমত জরিপগুলোতেও ৮ নভেম্বরের ভোটে রিপাবলিকানদের ‘লাল ঢেউ’ ওঠার আভাস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি।
যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত মধ্যবর্তী নির্বাচনে হোয়াইট হাউজে যিনি থাকেন তার দলের খারাপ করার প্রবণতা থাকে। সেখানে এবার পরিস্থিতি অনুকূলে থাকার পরও কী কারণে রিপাবলিকানরা আশানুরূপ ফল করতে পারেনি তা বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি।
যদিও ভোটের পর কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির অবস্থান আরও শক্ত হচ্ছে। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে দলটি জয়ের পথে রয়েছে। সিএনএন এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেনেটে তারা একটি আসনে এখনও এগিয়ে আছে।কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সেনেট তাদের লড়াইটা হচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি। ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচনের প্রত্যাশার চেয়েও ভাল ফল করছে।কিন্তু কেন?
অর্থনীতিই সব কিছু নয়:
মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনীতি – ধরে নেওয়া হয়েছিল, ভোটারদের কাছে এই দুটো বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে, যার প্রভাব পড়বে ৮ নভেম্বরের ভোটে। কিন্তু বাস্তবে ওই দুটো বিষয় ডেমোক্র্যাটদের যতটা ক্ষতি করবে বলে ভাবা হয়েছিল, এমনকী ডেমোক্র্যাটরাও যতটা ক্ষতির আশঙ্কা করেছিল, তেমনটা হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি কমতে শুরু করছে, কিন্তু তারপরও হতে পারে ভোটারদের মনে হয়েছে এটি এখনো তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর অবস্থায় রয়েছে। যার প্রতিফলন ভোটে দেখা গেছে।যদিও যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছেই, তবে প্রবৃদ্ধিও অব্যাহত আছে এবং বেকারত্বের হারও এখনও কমই আছে।
ইপসোস এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস জ্যাকসন বলেন, ‘‘জনগণ বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে পছন্দ না করলেও তাদের কিন্তু বেকার হয়ে পড়তে হচ্ছে না। তারা ছাঁটাই হচ্ছে না, তাদের আয় অব্যাহত আছে। ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেও গর্ভপাত সুরক্ষা আইন বাতিল, অভিবাস নীতির মত বিষয়গুলো জনগণের ভাবনার মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
‘‘ফলে ভোটের আগের শেষ কয়েক সপ্তাহে এ বিষয়গুলো দেশের অর্থনীতি থেকে জনগণের নজর বেশ ভালোভাবে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।”
অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ দেশের মেরুকরণেও প্রতিফলিত হয়। যদিও এ বছর ডেমোক্র্যাটদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্ধকারচ্ছন্নই ছিল। তারপরও তারা রিপাবলিকান ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তুলনায় গর্ভপাত, জলবায়ু, বর্ণবৈষম্যের মত বিষয়গুলোতে নিজেদের অনেক বেশি ইতিবাচক দেখাতে সক্ষম হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভূত এই ইস্যুগুলোকে সক্রিয় রেখেছে, যা ভোটারদের গণতন্ত্রের ভিত্তিতে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
জ্যাকসন বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে আমরা যা বলতে পারি তা হল, এই নির্বাচন চক্রে রিপাবলিকানরা-বিশেষ করে ট্রাম্পের রিপাবলিকানরা তাদের নিজস্ব পথপরিক্রমা থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি। তারা মূল্যস্ফীতি ও অর্থনীতির মত বিষয়গুলোকে প্রধান আলোচ্য বিষয় করে তুলতে পারেননি। যেটা পারলে তাদের অর্জন আরও বড় হত।”
গর্ভপাত অধিকার আইন বাতিল:
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক এলাকায় এবার মধ্যবর্তী নির্বাচনে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ভোট পড়ছে। আংশিকভাবে হলেও এমনটা হওয়ার বাস্তব কারণ একটি গণতান্ত্রিক ভিত্তি। যা তরুণ প্রজন্মকে প্রজননের অধিকারের মত বিষয়গুলো দিয়ে চালিত করেছে।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জন টেইলর বলেন, ‘‘জেনারেশন-জেড ভোটাররা মূলত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।
‘‘সুপ্রিম কোর্ট গত জুনে ১৯৭৩ সালে দেওয়া রো বনাম ওয়েড মামলার (গর্ভপাত মামলা) রায় পাল্টে না দিলে; অপরাধ, অভিবাস ও মূল্যস্ফীতির মত বিষয়গুলোর দাপটের কারণে ডেমোক্র্যাটরা তরুণ ভোটারদের উৎসাহিত করতে এ বিষয়টিকে কাজে লাগানোর সুযোগ পেত না।‘‘এটি আসলে লাল ঢেউ ঠেকিয়ে দিতে ডেমোক্র্যাটদের জন্য সহায়ক হয়েছে।”
তরুণ প্রজন্ম মনে করছে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে গর্ভপাত করানোর মত সাংবিধানিক অধিকার বাতিল হয়ে যাওয়ার অর্থ সাংবিধান তাদের অন্যান্য যেসব অধিকার দিয়েছে সেগুলোও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়া এবং যেকোনো সময় সেগুলো বাতিল হয়ে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছে।
ডনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গণভোট:
এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং রিপাবলিকান পার্টির উপর তার অব্যাহত প্রভাবের অগ্নিপরীক্ষা ছিল।
অধ্যাপক টেইলর মনে করেন, অনেক ভোটার যারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না তারা হয়ত রিপাবলিকান দলের উপর ট্রাম্পের অব্যাহত প্রভাব ধ্বংস করতে দলটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘তাই এবারের ভোট অন্য যেকোনা কিছুর চাইতে অনেক বেশি ডনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গণভোট ছিল কিনা তা নিয়ে একটি বিতর্ক হতেই পারে।
‘‘এবং আপনি যদি ওইসব প্রার্থীদের দিকে তাকান যাদের ট্রাম্প সমর্থন দিয়েছিলেন, বিশেষ করে যারা গভর্নর, সেনেটর অথবা সেক্রেটারি অব স্টেট পদে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই হেরে গেছেন।”
অধ্যাপক টেইলর যে কথা বলেছেন ঠিক একই কথা বলেছেন জর্জিয়ার ৩১ বছর বয়সের ভোটার অ্যালেক্স হেইড।
তিনি বলেন, তিনি কাকে ভোট দেবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। তবে তিনি ট্রাম্পের প্রভাব বিস্তার ‘সত্যিই বন্ধ করতে’ চেয়েছিলেন।
ভোট দেওয়ার আগে তিনি বিবিসি-কে বলেছিলেন, ‘‘আমি সবকিছুতে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে একমত নই। তবে আমার মনে হয় তারা রিপাবলিকানদের তুলনায় অনেক বেশি স্থিতিশীল।”
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন