চুয়াডাঙ্গায় শীতজুড়েই মৌ মৌ গন্ধ খেজুরের গুড়-পাটালীর বাজার
শীত আসলেই বাড়তি জীবিকা নির্বাহ তৈরী হয় চুয়াডাঙ্গার গাছিদের। বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলেও শীতকালে এ পেশার ওপর বেশি চাপ দিয়ে থাকে গাছিরা। কিন্তু শীতকে ঘিরেই পরিচর্যা শেষ হয়েছে খেজুর গাছের।
এখন শুধু গাছে গাছে বসানো ভাড়ের কাণায় কাণায় ভরে যাচ্ছে রস। আর সেসব রস থেকে মাঠের সমান ফাঁকা স্থানে বা গাছিদের বাড়িতে বাড়িতে গুড় জ্বালিয়ে পাটালী তৈরীর ধুম শুরু হয়েছে অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই। কিন্তু কার্তিক মাসের শুরু থেকে শহরপর্যায়ে শীতের আবহমান কিছুটা কম থাকলেও গ্রামপর্যায়ে পরিপূর্ণ শীতের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। তাই খেজুর গাছ পরিচর্যা শেষে শীতের সাত সকালে রস সংগ্রহ করতে মাঠে মাঠে যাচ্ছে গাছিরা।
আর সেই রস থেকে ভেজালমুক্ত গুড় ও তা থেকে সুস্বাদু পাটালী তৈরীর কাজে ব্যস্ত চুয়াডাঙ্গার গাছিরা। বাজারে বাজারে ভরে যাচ্ছে ভেজালমুক্ত গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে পাটালি। আগামী দিনগুলিতে আরও বাড়বে বলেও বলছে বাজারের ব্যবসায়ীরা। তবে তৈরী করা এ গুড় বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৫০ টাকা এবং পাটালি বিক্রি করা হচ্ছে ২৬০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত।
প্রতিদিন একটি খেজুর গাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০ ভাড় রস সংগ্রহ করছে গাছিরা। আর তা থেকে গুড় তৈরি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ কেজি। আর কয়েকদিন পর থেকে আরো বেশি গুড় উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলেও বলছে এ অঞ্চলের গাছিরা।
তবে চুয়াডাঙ্গার খেজুরের ভেজালমুক্ত গুড় তৈরী হওয়ার সুনাম সারা দেশজুড়েই রয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারীরা গুড় কিনতে আসে চুয়াডাঙ্গার বড় গুড়ের হাট সরোজগঞ্জে। শুধু তাই নয় এ উৎকৃষ্টমানের গুড়ের স্বাদে বিদেশীদের মনে স্মরণ করিয়ে দেয় বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার গাছিদের কথা। এ গুড় থেকে শীতভরেই চলবে নানা আয়োজন। প্রায় প্রতিটি পরিবারের রস গুড় আর পাটালীর সংমিশ্রণে তৈরী করা হবে বিভিন্ন পিঠা পুলি পায়েসসহ সুস্বাদুমানের ক্ষির।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার এ জেলায় খেজুর গাছ রোপণ করা হয়ে ২ লাখ ৬৬ হাজার। এ থেকে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আড়াই হাজার মেট্রিক টন। যে লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরিভাবে অর্জন হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের গুড় উৎপাদনকারি মফিজ আলী বলেন, এখন আমরা গুড় তৈরি করছি। আমাদের গুড়ের সাথে চিনি কিংবা অন্য কোন দ্রব্য মেশানো হয় না। আর এ কারণেই চুয়াডঙ্গায় ভেজালমুক্ত সুস্বাদু গুড়ের সুনাম রয়েছে। প্রতিবছর আমাদের গুড়ের চাহিদা অনেক। তাই শীত আসলেই আমরা গুড় তৈরিতে বেশি বেশি শ্রম দিয়ে থাকি। এতে শীতকাল জুড়ে রস গুড় আর পাটালী উৎপাদনে আমরা অন্যসময়ের তুলনায় ভালো মুনাফা তৈরী করতে পারি। মানুষকে খাওয়াতে পারি ভেজালভুক্ত গুড় পাটালী।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, আমাদের চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা গুড় তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিবারের মত এবারও আমাদের ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি হচ্ছে। একইসাথে তৈরি হচ্ছে উৎকৃষ্ঠমানের পাটালি। এ জেলার গুড়ের চাহিদা থাকে ব্যাপক। তাই প্রতিবারই চাহিদা মেটানোর জন্য সক্ষমতা পূরণ হয়ে যায়। এই গুড় উৎপাদন করে যে টাকাটা পায় কৃষকরা অন্যসময়ের তুলনায় কিছুটা হলেও বাড়তি আয়েশে সংসার চালাতে পারে। আর কয়েকদিন পর থেকে গুড় উৎপাদন আরো বাড়বে বলে আশা করা যায়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন