খাগড়াছড়িতে ঈদের ছুটিতে ৯টি উপজেলা ভ্রমণে দেখতে পাবেন মনোরম পরিবেশে উপভোগ করা
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ঈদের টানা ছুটিতে ৯টি উপজেলা ভ্রমণে যা দেখতে পাবেন মনোরম পরিবেশে উপভোগ করা। বাংলাদেশের এক-দশমাংশ ভূমি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান নিয়ে এ বিশাল এলাকা। বৈচিত্রের ভরা ও রূপময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এ তিন জেলায় বসবাসরত বিভিন্ন জাতিসত্তার বর্ণিল ও বৈচিত্রময় জীবনধারা, ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। পার্বত্যাঞ্চলকে দান করেছেন অনন্য বৈশিষ্ট্য। ফেনী, চেঙ্গী, মাইনি, কাচালং, সাঙ্গু ও মাতামুহুরীসহ অসংখ্য ছোট-বড় নদী, অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া ও ঝরনা বিধৌত এ অঞ্চলের মানুষের জীবনেও রয়েছে জীবিকায়নের বৈচিত্র, বহুমাত্রিকতা। তাইতো এবার ঈদ-উল-ফিতরের টানা ছুটিতে খাগড়াছড়ি বেড়াতে এসেছেন বিপুল সংখ্যক পর্যটক।
খাগড়াছড়ির এ জনপদের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিস্তৃত সংরক্ষিত বনাঞ্চল, উপত্যকা, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঢেউ খেলানো পাহড়ের সৌন্দর্য, ঝরনা-ঝিরি দেশ-বিদেশের অনেক আকর্ষণীয় স্থানকেও হার মানাতে পারে।
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির চারদিক ঢেউ খেলানো সবুজের উঁচু-নিচু পাহাড়, পাহাড়ের বুক চিড়ে আঁকাবাঁকা সর্পিল সড়ক ভ্রমণে বাড়তি আনন্দ দেয়। এখানকার দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রিছাং ঝর্না, আলুটিলার রহস্যময় গুহা, জেলা পরিষদের ঝুলন্ত সেতু, দেবতার পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক, তৈদুছড়া ঝরনা, তারেং চুমুই, মায়াবিনী লেক ও শান্তিপুর অরণ্য কুঠির, রামগড়ে সোয়া দুইশো বছরের বিডিআর স্মৃতিসৌধ, রামগড় চা বাগান ও রামগড় লেক, রামগড় চা বাগান। এছাড়া বাড়তি যোগ হয়েছে সাজেক। কারণ মেঘের রাজ্য সাজেক যেতে হলে খাগড়াছড়ির উপর দিয়ে যেতে হবে। এ কারণে খাগড়াছড়ি এখন পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ।
রহস্যময় সুড়ঙ্গ:
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। এর অন্যতম আকর্ষণ রহস্যময় সুড়ঙ্গ। গা ছমছম করা অনুভূতি নিয়ে পাহাড়ি সুড়ঙ্গপথ বেয়ে পাতালে নামা কল্পনার হলেও আলুটিলার সুড়ঙ্গ কল্পনা নয় বরং বাস্তব। পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলেই সেই স্বপ্নীল সুড়ঙ্গমুখ। আলুটিলা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬০ফুট। ভুতুড়ে অন্ধকার এ সুড়ঙ্গে আগুনের মশাল নিয়ে ঢুকতে হয় কিছুটা সাহসের সঙ্গেই। সুড়ঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করলে ভেসে ওঠে এক অপরূপ প্রতিচ্ছবি। ভেতরে হাজার হাজার বাদুর ঝুলে থাকার দৃশ্যও চোখে পড়ার মতো।
রিছাং ঝরনা:
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র ও রহস্যময় গুহা থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে রিছাং পাহাড়ি ঝরনা। স্থানীয় ভাষায় এ ঝরনাকে তৈরাংতৈ কালাই বলা হয়। শিরশির ছন্দে হিম শীতল ঝরনার বহমান স্বচ্ছ পানি যে কাউকেই কাছে টানবে খুব সহজেই। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের মাটিরাঙ্গা উপজেলার মাঝপথেই এ ঝরনা। গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা পথ হেঁটে স্বপ্নের রিছাং ঝরনা। এখানে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রবেশমুখে একটি গেট নির্মাণসহ পর্যটকদের জন্য সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে চেঞ্জিং রুম। এছাড়া বিশ্রামের জন্য করা হয়েছে গোলঘর। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পুলিশ পাহারাও। পর্যটকদের সুবিধার্থে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে।
ঝুলন্ত সেতু:
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্ক খাগড়াছড়িকে আসা পর্যটকদের অন্যতম আর্কষণ। খাগড়াছড়ি শহরে প্রবেশমুখ জিারো মাইলে অবস্থতি পার্কটি এখন জেলার অন্য পর্যটন স্পটের পাশাপাশি লেক, পাহাড় ও ঝুলন্ত সেতুসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পার্কটি দেখতে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। প্রায় ২২একর জায়গা নিয়ে দুই পাহাড়ের ভাঁজে অবস্থিত পার্কটি এখন জেলার জনপ্রিয় স্পট। পার্কটির ভেতরে আছে কৃত্রিম লেক, লাভ পয়েন্ট, কিডস জোন, ঝুলন্ত সেতু, লেকে আছে নৌকা চড়ার সুবিধা। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে পুরো পার্কটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। দিনের মতোই অপরূপ রাতের দৃশ্য।
দেবতা পুকুর(মাতা পুথিরী):
খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকরে কাছে অন্যতম পর্যটন স্পর্ট হলো দেবতা পুকুর। জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের কোলঘেঁষে মাইসছড়ি এলাকার নুনছড়ি মৌজার আলুটিলা পর্বতশ্রেণি থেকে সৃষ্ট ছোট্ট নদী নুনছড়ি। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০০ফুট উপরে ৫একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত হ্রদটি দেবতার পুকুর নামে পরিচিত। দেবতার পুকুরের অনেক বৈশিষ্ট্য। পুকুরের চতুর্দিকে মালভূমি দ্বারা বেষ্টিত বলে পাহাড়ে দাড়িয়ে তার সঠিক উচ্চতা অনুভব করা কঠিন। পাহাড়ের চূড়ায় দেবতা পুকুর রূপকথার দেবতার আশীর্বাদের মতোই সলিল বারির স্রোতহীন সঞ্চার।
মায়াবিনী লেক:
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার ভাইবোনছড়ার কংচাইরি পাড়ায় পাহাড়ের মাঝে অসাধারণ পর্যটক কেন্দ্র মায়াবিনী লেক। পাহাড়ের উঁচু-নিচু ৪০একর জায়গায় ১৫একর লেকের মাঝখানে দ্বীপের মতো গড়ে উঠেছে এ পর্যটন স্পটটি। শীতল স্বচ্ছ জল, স্বচ্ছ জলে ভেসে বেড়ায় মাছ। চারদিকে বিস্তৃত অরণ্যঘেরা। পাহাড়ের মাঝে হ্রদ। হ্রদের মাঝে মাঝে মাঝখানেও রয়েছে টিলা। পড়ন্ত বিকেলে লেকের চারদিকে নৌকায় করে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে মন চঞ্চল হয়ে উঠে। এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে হাঁসের পাশাপাশি দেখা যাবে সাদা বক। বড় বড় মাছের লাফালাফি মন কেড়ে নেবে।
তৈদুছড়া ঝর্ণা:
তৈদুছড়া ঝর্ণা খাগড়াছড়ির আরো একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। তবে তৈদুছড়া নামে এই ঝর্ণা নামটি প্রচলিত থাকলেও এখানে ঝর্ণা শব্দটির ব্যবহার নেই। স্থানীয়দের ভাষায় তৈদু অর্থ পানির দরজা বা জানালা। আর ছড়া মানে ঝর্ণা। তাই স্থানীয় ত্রিপুরা ত্রিপুরা স¤প্রদায় এ ঝর্ণাটির নাম রেখেছেন তৈদুছড়া। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে প্রায় ২০/২১কিলোমিটার ও দীঘিনালা উপজেলার জামতলী থেকে প্রায় ১২কিলোমিটার দূরে তৈদুছড়া ঝর্ণার অবস্থান।
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দূরত্ব ৩১৬কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে ১০৯কিলোমিটার। ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কলাবাগান, গাবতলি থেকে সরাসরি এসি/নন এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। ঢাকা থেকে আপনাকে জনপ্রতি সাড়ে ৭শ থেকে ১৮শ টাকা ভাড়া গুনতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে জনপ্রতি ২৭০টাকা টাকা ভাড়া গুনতে হবে।
খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে বিশেষভাবে খাগড়াছড়ি বেড়াতে আসার আগে অন্তত: এক মাস আগে হোটেল-মোটেল বুকিং ও আসা-যাওয়া গাড়ির টিকেট নিশ্চিত করে আসতে হবে। অন্যথায় পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়তে হবে বিপাকে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন