বান্দরবানে লোঙ্গা খুমী নামে এক সাংবাদিক আটকস, পাহাড়ি গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ-ইউপিডিএফ
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমায় কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়া স্থানীয় সাংবাদিকসহ কয়েকটি গ্রামের পাহাড়িদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।
পার্বত্য বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট(কেএনএফ)-এর সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে লোঙ্গা খুমি(৪০) নামে জাতীয় দৈনিকের এক সাংবাদিককে আটক করেছে সেনাবাহিনী। আটক লোঙ্গা খুমী দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার রুমা উপজেলা প্রতিনিধি বলে জানা গেছে।
শুক্রবার(১৯শে মে ২০২৩) দুপুরে রুমা বাজার থেকে সেনাবাহিনী তাকে আটক করে বলে জানা যায়। তিনি বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার খোলাইন পাড়ার পিতা-ঙাচা খুমী, মাতা- আংলোচে খুমীর সন্তান। তার স্ত্রী রুমা উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে চাকুরিরত। তিনি রুমা গির্জা পাড়ায় বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন।
আটকের পরে তাকে রুমা থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তরের মাধ্যমে বান্দরবান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে বান্দরবান জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
আটক লোঙ্গা খুমী রুমা উপজেলার কুলাইন পাড়ার ঙাচা খুমীর ছেলে। বর্তমানে তিনি রুমা গীর্জা পাড়ায় বাড়ি নির্মান করে বসবাস করছেন। তিনি বান্দরবাানের খুমি জনগোষ্ঠির মধ্যে প্রথম স্নাতকোত্তর অর্জনকারী লেলুং খুমীর ছোট ভাই বলে জানা গেছে।
এছাড়া আরো জানা গেছে, কেএনএফ এর সাথে যোগাযোগ আছে এমন সন্দেহে বান্দরবানের দৈনিক গণকন্ঠের প্রতিনিধি রিচার্ড বম’কেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব আটক করেছে। এ নিয়ে বান্দরবানের আরো কয়েকজন সংবাদকর্মীও নজরদারিতে রয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, সাংবাদিকতার আড়ালে রাষ্ট্র বিরোধী ক্রিশ্চিয়ান জঙ্গী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির অন্যতম শীর্ষ নেতা লোঙ্গা খুমী নামে এক সাংবাদিককে আটক করেছে যৌথবাহিনী। লোঙ্গা খুমী একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার রুমা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও রাজনৈতিক পরিচয়ে তিনি রুমা উপজেলা বিএনপি(জেরি গ্রুপের )সহ সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির ব্যানারে তিনি গত ২০১৬সালে রুমা সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন এবং চাঁদাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। লোঙ্গা খুমী গত ২০০৮সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন(কেএনডিও) এর সহ-সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
সেনা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিকতার পরিচয়ের আড়ালে লোঙ্গা খুমী কেএনএফের সাথে জড়িত এমন অভিযোগের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী দীর্ঘদিন তাকে নানাভাবে নজরদারী করতে থাকে। এসময় তার বিরুদ্ধে কেএনএফকে নানাভাবে সহায়তার অভিযোগ পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে, কেএনএফের পক্ষে স্থানীয় উপজাতি জনগোষ্ঠীকে মটিভেশন করা, কেএনএফের পক্ষে স্যোশাল মিডিয়ার ছদ্মনামে লেখালেখি, কেএনএফের পক্ষে সক্রিয় বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়া আইডি, গ্রুপ ও পেইজে লেখা পাঠানো, নিরাপত্তা বাহিনীর অপারেশনাল গতিবিধি ও গমনাগমনের তথ্য পর্যবেক্ষণ ও কেএনএফকে পাচার করা, কেএনএফের ক্যাম্পে খাদ্য, ওষুধ ও রসদ পাঠানো, কেএনএফের পক্ষে গোয়েন্দাবৃত্তি প্রভৃতি অভিযোগ সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায়।
নিরাপত্তা বাহিনী সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি কেএনএফের ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু গোপন নথি উদ্ধার করা হয়। এসব নথির মধ্যে একটি নথিতে লোঙ্গা খুমীর নাম কেএনএফের সহকারী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দেখা যায়, যাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কেএনএফ প্রধান নাথান বমের নাম রয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই তাকে আজ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। লোঙ্গা খুমী ২০০৮সালে নাথান বমের নেতৃত্বে গঠিত কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন(কেএনডিও) এর সহ-সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কেএনএফের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলায়(মামলা নং- ১ ও ৩) তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা বৃহস্পতিবার(১৮ই মে ২০২৩) এক বিবৃতিতে অবিলম্বে উক্ত গ্রামবাসীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেছেন, কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদী দমনের নামে নিরীহ জনগণের জানমাল ও মানবাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা গ্রহণযোগ্য নয়।
স্থানীয় জনগণের বরাত দিয়ে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, ‘গত ১৫ই মে সুংসং পাড়া আর্মি ক্যাম্পের সৈন্যরা পাসিং পাড়া থেকে ১৭জন ও এমটিএস পাড়া থেকে ১৪জন গ্রামবাসীকে এবং তার পরদিন অর্থাৎ ১৬ই মে বাকলাই পাড়া আর্মি ক্যাম্পের সেনারা বাশিরাম পাড়া থেকে ২২জন ত্রিপুরা ও আরও কয়েকটি গ্রাম থেকে ত্রিপুরা ও মারমা গ্রামবাসীকে জোরপূর্বক নিয়ে যায় এবং কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামের একটি সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযানে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, ‘গতকাল উক্ত অভিযানে দুই সেনা সদস্য নিহত ও অপর দুই সেনা অফিসার আহত হওয়ার খবর আইএসপিআর জানালেও অভিযানে যেতে বাধ্য করা গ্রামবাসীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। তবে একটি অসমর্থিত খবরে জানা যায় উক্ত অভিযানে গ্রামবাসীদের মধ্যে জুয়েল ত্রিপুরা নামে একজন নিহত এবং অন্য একজন আহত হয়েছেন।
অংগ্য মারমা অবিলম্বে জোর করে কেএনএফ-বিরোধী অভিযানে নিয়ে যাওয়া গ্রামাবাসীদেরকে তাদের পরিবারের কাছে নিরাপদে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযানে নিরীহ লোকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকমাস আগে কেএনএফ এর সাথে যোগাযোগ আছে এমন সন্দেহে বান্দরবানের দৈনিক গনকন্ঠের প্রতিনিধি রিচার্ড বমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে র্যাব। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এমন অভিযোগে নজরদারিতে আছে বান্দরবানের আরো কয়েকজন সংবাদকর্মী।
সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, রুমা থানার মামলা নাম্বার ১ও ৩ নং মামলায় লোঙ্গা খুমীকে গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার বিকেলে রুমা থানা পুলিশ বান্দরবান চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে বান্দরবান জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন