দিনাজপুরের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
দিনাজপুরে বিআইডব্লিউটিএ’র অফিস ভবন, তুলাই নদীতে রাবার ড্যাম, পুনর্ভবা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দিনাজপুরের বিরলের ধর্মপুর, কামদেবপুর থেকে ঢেপা ও পুনর্ভবা নদীর তীরে ২৬ কিলোমিটার বাঁধ যা ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত চলে গেছে, সেটিতে রিভারওয়ে তৈরি করা হবে। ২৬ কিলোমিটার বাঁধের উপর রাস্তা তৈরির জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। এ নদীর পাড় শুধু দিনাজপুর নয়; বাংলাদেশের সবচেয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত নদীর পাড় হবে। কারণ এ নদীর পাড়ে ভারতবর্ষের পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাচীনতম ‘কান্তজি মন্দির’ আছে। যে মন্দির দেখার জন্য সমগ্র পৃথিবী থেকে মানুষ আসে। ইতিহাসের অমরস্বাক্ষী ‘রাজবাড়ী’ আছে। পুনর্ভবা ও ঢেপা নদীর দু’পাড় সুন্দর করে সাজাবো। কান্তজির সেই আগমন যেন দু’পাড়ের মানুষ উপভোগ করতে পারে। সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসবিদ ও দর্শনার্থী তারা স্মরণ করবে-বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসকে সম্মান করতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ, দিনাজপুরের মানুষ তাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে, আমরা সেভাবে সাজাতে চাচ্ছি। একইভাবে দিনাজপুরের রামসাগর, সুখ সাগর, আনন্দ সাগরসহ যে প্রাচীনতম পুকুরগুলো আছে সে পুকুরগুলো অপরূপ সাজে সজ্জিত করা হবে যেন দিনাজপুর একটি সুন্দর দর্শনীয় জেলায় পরিণত হয়। দিনাজপুরের লিচু পৃথিবীর বিখ্যাত। চাঁদপুরে ‘ইলিশের বাড়ি’ করা হয়েছে; দিনাজপুরে ‘লিচু বাড়ি’ করা যায় কিনা সেই পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা দেশের জন্য কাজ করে, তাদের সামনে অনেক বাধা। তাদের মৃত্যুঝুঁকি নিতে হয়। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঝুঁকি নিয়েছিলেন। “তিনি জানতেন, তাঁর জন্য ফাঁসি অপেক্ষা করছে, তাঁকে হত্যা করতে পারে। বাংলার মানুষের প্রতি তাঁর বিশ্বাস ছিল। তাঁর দুরদর্শিতা ও সাহসিকতার কারণে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। তাঁকে হত্যা করতে পারত, মৃত্যুদণ্ড দিতে পারতো, তিনি কিন্তু ভয় করেন নাই। তিনি সাহস নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে সর্বশেষ। ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, শ্রীলংকার বন্ধরনায়েক, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণকে হত্যা করা হয়েছে। কারণটা কি? তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেন নাই। ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা বলেছিল, আমরা যেভাবে বলবো সেভাবে চলতে হবে। তারা বলেছিল, আমরা জাতীয়তাবাদী নেতা। আমাদের জনগণ যেভাবে বলবে সেভাবে চলবো।’ তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকে বাংলাদেশকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করেছেন। বাংলাদেশকে তিনি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। যিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য সফল হয়েছেন- তাঁকে আজকে বার বার টেনে ধরতে চায়, তাকে আটকে ধরতে চায়, তাকে বিভিন্ন ভাবে দাবিয়ে রাখতে চায়। বিশ্বব্যাংক আইএমএফ, বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী আমেরিকা, ইউরোপ বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিতে চায় যেন শেখ হাসিনাকে কাবু করতে পারে। শেখ হাসিনা কি কাবু হবার লোক! না তিনি কাবু হবেন না। কারণ তিনি বাংলার মানুষের ভালোবাসায় ঋণী। আমেরিকা বলেন, ইউরোপ বলেন, পশ্চিমা বলেন- কেউ শেখ হাসিনাকে কাবু করতে পারবে না। শেখ হাসিনা বাংলার মানুষকে ভালোবাসেন। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা করেছেন। শেখ হাসিনা স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা দিয়েছেন। যারা শেখ হাসিনা কে কাবু করতে চায়-আগামী নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে এ সকল ষড়যন্ত্রের জবাব দিব।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিআইডব্লিউটিএ’র সদস্য (প্রকৌশল) ড. এ কে এম আজাদুর রহমান, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ এবং প্রকল্প পরিচালক মোঃ. সাইদুর রহমান।
রংপুর বিভাগের নদীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় বিআইডব্লিউটিএ’র অফিস ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য ব্যয় হবে আট কোটি ৮৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। তুলাই নদীতে দু’টি রাবারড্যাম, একটি ওয়্যার (পাকা স্ট্রাকচার) ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণে ব্যয় হবে তিন কোটি দু’ লক্ষ টাকা। এছাড়াও পুনর্ভবা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। তুলাই নদীর ৬৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নাব্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য পাঁচটি লটের মাধ্যমে নভেম্বর ২০২০ হতে খনন কাজ শুরু করা হয় যা ইতোমধ্যে ৯৫% ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ২৬.২৫ লক্ষ ঘনমিটার খনন করা হয়েছে এবং ব্যয় ৪২.৬১ কোটি টাকা। নদীটি সর্বনিম্ন ২০ মিটার হতে সর্বোচ্চ ৩০ মিটার প্রস্থে এবং ২.০৫ হতে ৩ মিটার গভীরতায় খনন করা হয়েছে। তুলাই নদীর খননকৃত অংশে পানি ধরে রাখতে দু’টি রাবারড্যাম ও একটি ওয়্যার (পাকা স্ট্রাকচার) নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে।
পুনর্ভবা নদীর ৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নাব্যতা পুনরুদ্ধারে ১৪৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সাতটি প্যাকেজের মাধ্যমে ৮৯.১৯ লক্ষ ঘনমিটার খননের লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারি ২০২২ হতে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৯.৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২.২৯ লাখ ঘনমিটার খননের মাধ্যমে পুনর্ভবা নদীর ৪৭.১৩ কিলোমিটার অংশ নাব্য করা হয়েছে। নদীটি সর্বনিম্ন ৮ মিটার হতে সর্বোচ্চ ৯০ মিটার প্রস্থে এবং ১.০৫ হতে ৩.০০ মিটার গভীরতায় খনন করা হচ্ছে।
আগামী জুন ২০২৪ এ খনন কাজটি সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যায়। পুনর্ভবা নদীর কাঞ্চন সেতু এলাকায় নদীর দু’পাশে জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন