সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন জামাই-শ্বশুর!

সিরাজগঞ্জ-৫ (চৌহালী-বেলকুচি) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচন করতে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আলহাজ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একই আসনে সংসদ নির্বাচন করতে বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের জামাতা আলহাজ নুরুল ইসলাম সাজেদুল।

বুধবার (২৯ নভেম্বর) সকালে মনোনয়নপত্র উত্তোলনের তথ্যটি নিশ্চিত করে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। আব্দুল লতিফ বিশ্বাস সিরাজগঞ্জ-৫ (চৌহালী-বেলকুচি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ২০০৮ সালের নির্বাচনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর পর ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন দেয়া হয় শিল্পপতি আব্দুল মজিদ মন্ডলকে। ২০১৮ সালে এই আসন থেকে মনোনয়ন পান আব্দুল মজিদ মন্ডলের ছেলে আব্দুল মমিন মন্ডল। এবারও মমিন মন্ডলকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় নেতাকর্মী ও নির্বাচনী এলাকার জনগণের চাপে আমি সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই কারনে আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে গতকাল মঙ্গলবার পদত্যাগ করে আজ সকালে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক বরাবর মনোনয়নপত্র দাখিল করবো।

নূরুল ইসলাম সাজেদুল ২০১৯ সালের ১০ মার্চ দেশের প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর সিরাজুল ইসলাম। এ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েই বেলকুচি উপজেলাকে মডেল উপজেলা পরিষদে পরিণত করতে দিনরাত কাজ করেছেন। শুধু তাই নয়, উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ সকল প্রকার উন্নয়নে তিনি নিবেদিত হয়ে কাজ করেছেন। বিশেষ করে মহামারি করোনার সংকটের সময় অনেক জনপ্রতিনিধি ঘরে বসে থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেলকুচি উপজেলার কর্মহীন, অসহায়-দরিদ্র মানুষের পাশে থেকেছেন চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল। সমাজের যেসব মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, কিন্তু লোক লজ্জায় কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারেননি তাদেরও গোপনে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সাজেদুল।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম সাজেদুল বলেন, সংসদ সদস্য নির্বাচন করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেছি। আজ জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে চৌহালী-বেলকুচি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছি।

প্রসঙ্গত, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ৩৮১ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৮০ জন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন মোট চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে জয়ী হন নৌকার প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। এরপর ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মোট ছয় জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত আব্দুল মমিন মন্ডল। নির্বাচনে মমিন মন্ডল (নৌকা) পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬১ ভোট ও মো. আমিরুল ইসলাম খাঁন (ধানের শীষ) পান ২৮ হাজার ৩১৭ ভোট।