শতাধিক আসনে নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্রের লড়াই
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শতাধিক আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লড়াই হবে। ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২২১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অন্তত ৩৮২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের বড় অংশই আওয়ামী লীগের নেতা, যারা ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বর্তমান সংসদের ২৮ জন এমপি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করছেন।
গতকাল চাঁদপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শক্তি ও সামর্থ্য আছে বলেই নির্বাচনে নেমেছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাই ও ইসির আপিলে বাদ পড়াদের অনেকে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। ভোটের আগ পর্যন্ত আরও কেউ কেউ প্রার্থিতা ফিরে পেতে পারেন।
জানা গেছে, এবার তুলনামূলক স্বতন্ত্র প্রার্থী বেশি বগুড়ায়। এই জেলার সাতটি আসনের ছয়টিতে স্বতন্ত্র আছেন মোট ১৮ জন। এর মধ্যে বগুড়া-১ ও ৩ আসনে চার জন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। এবারের নির্বাচনে প্রায় ৪০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর রেকর্ড হয়নি। এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ছিল ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ঐ নির্বাচনে ৪৮৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
এর মধ্যে ছয় জন জিতেছিলেন। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। এর আগে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপি। সেবার ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা। তখন এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছিল। এবার যাতে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী না হন, সেদিকে সতর্ক ছিল আওয়ামী লীগ। সেজন্য দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থী দিয়েছে হঠাৎ করে নিবন্ধন পেয়ে আলোচনায় আসা তৃণমূল বিএনপি। ১৩৩টি আসনে দলটির প্রার্থী আছে। এর বাইরে ১০০টির বেশি আসনে প্রার্থী আছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি)। তারা ১২২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে রাজনীতি বা ভোটের মাঠে এই দলের তেমন কোনো প্রভাব নেই।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি-জেপি ১৩ আসনে, জাসদ ৬৪ আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬ আসনে, তরীকত ফেডারেশন ৩৮ আসনে, সাম্যবাদী দল চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এর বাইরে অন্য দলগুলোর মধ্যে ইসলামী ফ্রন্ট ৩৯ আসনে, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ আসনে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২৯ আসনে, গণফোরাম ৯ আসনে, গণফ্রন্ট ২১ আসনে, জাকের পার্টি ২১ আসনে, বিকল্পধারা ১০ আসনে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭ আসনে, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৯৫ আসনে, কল্যাণ পার্টি ১৬ আসনে, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১ আসনে, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি পাঁচ আসনে, বিএনএম ৫৪ আসনে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পাঁচ আসনে, বিএনএফ ৪৫ আসনে, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ চার আসনে, সুপ্রিম পার্টি ৭৯ আসনে, সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট ৬৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ইসি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই দলগুলোর কোনোটিই আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার সামর্থ্য রাখে না।
তবে এবারে নির্বাচনের নতুনত্ব হচ্ছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্তত ১২৭টি আসনে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজ দলের নৌকার প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন