চা বিক্রেতা থেকে প্রধানমন্ত্রী, মোদির হ্যাটট্রিক
এক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদিই রেকর্ড তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
একজন চা বিক্রেতা থেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ নেতা বনে যাওয়ার গল্পটা আন্দোলিত করে সাধারণ মানুষকে।
বলা হয়, বিশ্বমঞ্চে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারতের উত্থানের নেপথ্যে তিনি। শক্তিশালী নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক কৌশলের ফলে পশ্চিমাদের কাছেও হয়ে উঠেছেন অতি কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব।
তবে সমালোচনা-বিতর্ক পিছু ছাড়েনি মোদির। তার বিরুদ্ধে আছে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগও।
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার পার করতে না পারায় জোটসঙ্গীদের ওপর ভর করে সরকার গঠন করছে বিজেপি। গত ১০ বছরে অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্য দেখালেও এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। দর-কষাকষি আর ভাগ-বাটোয়ারার ফলে হঠাৎ গ্যাঁড়াকলে গেরুয়া শিবির। কঠিন বাস্তবতার মুখে নরেন্দ্র মোদি নিজেও।
সব ছাপিয়ে শরিক দলগুলোর সমর্থন নিয়েই টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশটির মসনদে বসতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।
যদিও নানা নাটকীয়তায় ঘেরা মোদিকে একদিকে উন্নয়নের কারিগর বলা হলেও অন্যদিকে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
গত বছরই গুজরাটের দাঙ্গায় মোদির ভূমিকা নিয়ে ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নামে বিবিসির দুই পর্বের তথ্যচিত্র প্রকাশের পর পরিস্থিতি অনেকটাই তার প্রতিকূলে চলে যায়।
রূপকথাকেও হার মানায়
একেবারে সাধারণের কাতার থেকে রাজনীতির শীর্ষে তার আরোহণ যেন রূপকথাকেও হার মানায়। তার এমন উত্থান ও সফলতা বিস্মিত করে অনেককেই।
১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গুজরাটের ভাদনগরের এক দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারে জন্মগ্রহণ নেন মোদি। ছোটবেলায় বাবার দোকানে চা বিক্রিতে সহায়তার মধ্যদিয়ে তার কর্মজীবনের শুরু। ১৯৭০ সালে তিনি নাম লেখান বিজেপির মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে (আরএসএস)। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সায়েন্সে স্নাতক এবং গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করা মোদির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় মূলত ১৯৮৫ সালে বিজেপিতে যোগ দেয়ার মধ্যদিয়ে।
তিন বছরের মাথায় তিনি গুজরাট বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯৫ সালে কেন্দ্রীয় বিজেপির সম্পাদক মনোনীত হয়ে তিনি দিল্লি, হরিয়ানা ও হিমাচলের দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে কেশুভাই প্যাটেল অসুস্থতার জন্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দিলে তার স্থলাভিষিক্ত হন নরেন্দ্র মোদি। এর মাত্র এক বছরের মাথায় গুজরাটে ঘটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। এ দাঙ্গার জন্য দায়ী করা হয় মোদিকে। এতে নিহত হয় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
ওই পরিস্থিতিতেও ২০০২ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও রাজ্যটিতে ক্ষমতায় আসেন মোদি। মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন পরের দু’দফাতেও। এ সাফল্যই তাকে ২০১৪’র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে সাহায্য করে।
এতে একজন চা বিক্রেতা থেকে ভারতে ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে বসেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি।
আগে অজানা থাকলেও আর সেই বছরই জানা যায়, মোদি বিবাহিত। বারানসিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময় যশোদাবেন নামের এক নারীকে স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
শক্তিশালী নেতৃত্ব
এরপর টানা এক দশক ক্ষমতায় থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বচ্ছ ও আধুনিক ভারত গড়তে তার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়। ভারতকে বিশ্বের পঞ্চম অর্থনৈতিক শক্তি করে তোলার কৃতিত্ব দাবি করেন নিজেই। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলেও ব্যাপ্তি ছড়িয়েছেন তিনি। প্রতিবেশীসহ পরাশক্তিদের সঙ্গে কৌশলী হয়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন। যদিও কানাডা, মালদ্বীপ ও চীনের সঙ্গে মনোমালিন্যের খবর প্রায়ই শিরোনাম হতে দেখা যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতকে প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার পেছনে মোদির অবদান অনস্বীকার্য। শক্তিশালী নেতৃত্ব ও নিপুণ কূটনৈতিক কৌশলের ফলে সময়ের পরিক্রমায় বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা হয়ে উঠেছেন নরেন্দ্র মোদি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন