খুলনার কয়রায় লবণাক্ত জমিতে রকমিলন ও তরমুজ চাষে কৃষকের সফলতা

দুর থেকে দেখে মনে হতে পারে মাচায় ঝুলছে লাউ-কুমড়া। কিন্তু না কাছে গিয়ে একটু ভালো করে দেখলে দেখা যাবে এগুলো লাউ বা কুমড়া নয়। বসত বাড়ির ক্ষেতের মাচার উপর ঝুলছে রকমিলন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল নদী ও সুন্দরবন বেষ্টিত খুলনার কয়রায় লবণাক্ত জমিতে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজির পাশাপাশি অসময়ে উৎপাদিত প্রথম বার রকমিলন চাষ করে সাড়া ফেলেছেন খুলনার কয়রার ১০ কৃষক।

এটি ব্যাপক উপকারিতা একটি ফল। সাধারণত এটি খুবই কম চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে কয়রায় প্রথমবার এই ফলের চাষাবাদ শুরু করেই ভাল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। নতুন ফসলের এই প্রযুক্তি ভাসমান বেডে মাচা তৈরি করে ফলটি চাষে সাফল্যের দেখা পেয়েছে কৃষকরা। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের ইকরা প্রকল্পের সহায়তায় অসময়ে রকমিলন চাষ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন উপকূলীয় এই কৃষকরা। কম খরচে বেশি ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তারা।

শুধু রকমিলন চাষ নয় ঐ প্রকল্পের মাধ্যমে অসময়ে তরমুজ চাষের পাশাপাশি মাছ চাষ সহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করছেন ঐ ১০ পরিবারের সদস্যরা। তাদের দেখাদেখিতে এই এলাকার অনেক কৃষকই এই ঘেরের রাস্তায় কিংবা বসত বাড়ির ক্ষেতে রকমিলন ও তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মাদারবাড়ি গ্রামের স্বামীহারা নমিছা খাতুন বলেন, আমার স্বল্প ভিটেবাড়িতে মাছ চাষের পাশাপাশি মাচার উপর রকমিল চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছি।

প্রথমবার এই ফসল উৎপাদন করে ভাল ফলন পাওয়ায় বাজারে বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আনতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের ইকরা প্রকল্পের মাধ্যমে আমাকে এই চাষাবাদে সহযোগিতার পাশাপাশি উৎসাহ জাগানো হয়। বর্তমানে আমার ঐ বসত বাড়ির সমন্বিত সবজি মাছ চাষাবাদ করে আমি খুবই খুশি। ভেটকি চাষে প্রচুর মাছ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে বিভিন্ন শাকসবজি বিক্রি করতে পারছি। হলুদ বর্ণের অসময়ে তরমুজ বাজারে বিক্রি করে অনেক দাম পেয়েছি। তিনি এ ধরনের প্রকল্প আরও বাস্তবায়ন করার দাবি জানান। একই এলাকার তরমুজচাষি

নুর ইসলাম সরদার বলেন, আমি প্রতিবছর মাছ চাষের পাশাপাশি ঘেরে পাড়ে বেগুন, পটোল, ঢ্যাঁড়স, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য শাকসবজির আবাদ করি। এই বছর প্রথম মে মাসের শেষের দিকে ইকরা প্রকল্পের সহযোগিতা নিয়ে তাদের পরামর্শে ৩ বিঘা মৎস্য ঘেরের পাড়ে ১ শ টি তরমুজের চারা রোপণ করেছিলাম।

বিগত তিন মাসে গাছে রোগবালাইও নেই, ফলনও ভালো হয়েছে। সবুজ ও হলুদ বর্ণের তরমুজ ১ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। এ সকল তরমুজ বাজারে বিক্রি করে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। ইসলামিক রিলিফের ফিল্ড সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. বাশারুল ইসলাম বলেন, কয়রা উপজেলার কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের তাদের প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাদারবাড়ি, দশহালিয়া ও মহারাজপুর গ্রামের ১০ পরিবারকে রকমিলন, অসময়ে তরমুজ চাষ, মৎস্য ঘেরে ভেটকি মাছ চাষ সহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করতে সহযোগিতা করা হয়েছে।

তারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। অনেকেই তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আনতে পেরেছে। এ ছাড়া অনেক পরিবারের মাঝে হাইড্রোনিক্স ও লবণ সহনীয় ঘাস চাষ, বস্তায় আদা চাষ, মিষ্টি আলু চাষের জন্য ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের ইকরা প্রকল্পের উদ্যোগে ও ইউএসএআইডি অর্থায়নে সহযোগিতার পাশাপাশি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্যাহ আল মাহমুদ বলেন, কয়রায় সর্ব প্রথম রকমিলন চাষ করে কৃষকরা ভাল পেয়েছে। তাদের দেখাদেখি অনেকেই এ ধরনের চাষাবাদে ঝুঁকি পড়েছে। এ ধরনের প্রকল্প চলমান রাখার দাবি জানিয়েছেন তিনি। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের কয়রার অফিস ইনচার্জ মো. জ্হিদুর হাসান বলেন, প্রচারিত ফসলের পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করার জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়েছে। জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রদর্শনী বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। কৃষকদর ভাগ্য পরিবর্তনের পরবর্তীতে অনেক কৃষকদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে আরও সহযোগিতা করা হবে।