কুড়িগ্রাম পৌরসভার সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম, বিল উত্তোলনে ঠিকাদারের তড়িঘড়ি
কুড়িগ্রাম পৌরসভার সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পৌর কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিন্মমানের কাজ সম্পন্নের মাধ্যমে বিল উত্তোলনের পাঁয়তারা করছে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ সম্পন্ন করায় বছর না যেতেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে পৌর এলাকার অধিকাংশ সড়কগুলি। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ পৌরবাসী। তারা এজন্য দায়ী করছে পৌর কতৃপক্ষকে। দীর্ঘদিন যাবত নি¤œমানের কাজ সম্পন্নের ঘটনায় তথ্য পেতেও সাংবাদিকদের হতে হয় হয়রানির শিকার এবং রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুড়িগ্রাম পৌরসভার ভকেশনাল মোড় থেকে নীলারাম বিদ্যালয় মোড় পর্যন্ত ১২৬২ মিটার সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন শীতল কনস্ট্রাকশন। যার প্যাকেজ নং-এলজিসিআরআরপি/কুড়/২৩-২৪/ডব্লিউ-০৬। কাজটির প্রাক্কলিত মোট মূল্য ছিল ৭৮ লাখ ৮১ হাজার ২শত আশি টাকা।
দ্বিতীয় অংশের চুক্তিমূল্য ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার পাঁচশত তেত্রিশ টাকা। প্যাকেজটি দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। দ্বিতীয় অংশের একাংশ বিজিবির দক্ষিণ-পূর্ব গেট থেকে নীলারাম স্কুল পর্যন্ত স্টিমেট অনুযায়ী ১২ মিলিমিটার এবং ৬ মিলিমিটার পাথর ও পাথরের গুড়ার মিশ্রণ করে বিপিসি (৬০/৭০) বিটুমিন ১৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ১৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্লান মেশিনে মিশ্রণ করে ৮-১০টন রোলার মেশিন দিয়ে ১৫ মিলিমিটার পূরত্বের সড়ক সংস্কার করার কথা থাকলেও সেখানে ৭-৮ মিলিমিটার পূরত্বের সড়ক নির্মাণ করে উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিল উত্তোলনের পায়ঁতারা করছে।
ব্যাপক দুর্নীতির কারণে অল্প কিছুুদিনের মধ্যে পুনরায় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
অপরদিকে, উক্ত কাজের ভকেশনাল মোড় থেকে বিজিবি দক্ষিণ গেট পর্যন্তও সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। যেমন-রাস্তার কুঁজ, পথচারী ক্রসিং, লেন লাইন, সতর্কীকরণ লাইন, বাঁধা রেখা, প্রান্তরেখা, জিগ-জ্যাগ লাইন, গিভ-ওয়ে মার্কিং পেইন্ট (লাইন, ড্যাশ, তীর ইত্যাদি) প্রদান এবং প্রয়োগ করার কথা থাকলেও প্রকৌশলী ইনচার্জের দিকনির্দেশনা অনুসারে সম্পূর্ণ হয়নি।
এছাড়াও স্টিমেট অনুযায়ী সংস্কারকৃত সড়কের পূরত্ব ও (ডাবিøউবিএম) সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি। নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পৌরসভার অসাধু প্রকৌশলের ইশারায় মনগড়া নি¤œমানের কাজ সম্পন্ন করেছেন।
নীলারাম এলাকার মাহবুবুর রহমান ও সাজু মিয়া বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন চলাচলের অনুপযোগী হয়েছিল। এতে আমরা ব্যাপক দূর্ভোগের শিকার হয়েছিল। কাজটি সংস্কারে বাজেট আসায় আমরা খুঁশি। কিন্তু ঠিকাদার মনগড়া কাজ করেছেন। সড়কটির পুরনো খোয়া উল্টে দেয়া (হালচাষ) করার কথা ছিল তা মোটেও করেনি।
পাথর ফেলানোর কথা থাকরেও একটা পাথরও ফেলায়নি। যেকারণে রাস্তাটি টিকবে না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কুড়িগ্রাম পৌরসভার নিয়োজিত একাধিকার বলেন, পৌরসভায় বিভিন্ন স্তরে টাকা দিয়ে বিল পাশ করতে হয়। যেকারণে ঠিকাদারদের কাজে কারচুপি করা ছাড়া উপায় থাকে না। এজন্য আমরা অনিয়ম করতে বাধ্য হচ্ছি।
তবে এ বিষয়ে নিয়োজিত শীতল কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি ইশতিয়াক সোহাগ কাজে অনিয়মের ঘটনা স্বীকার করে বলেন-অনিয়ম হয়েছে তবে সেটা স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক কিছু হয় নাই। শুধু আমার কাজে অনিয়ম হয়েছে তা সঠিক নয়, পৌরসভার অন্যান্য কাজ আমার কাজের চেয়ে কয়েকগুণ নি¤œমানের। সেগুলো বিল তুলে খাচ্ছে।
সেগুলোও নিউজ করেন। তার কাজটির অনিয়মের নিউজ করলে তার অনেক ক্ষতি হবে। তিনি নিউজ না করার জন্য এই প্রতিনিধিকে অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে কথা বললে কুড়িগ্রাম পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি কাজটি এখনো সমাপ্ত হয়নি। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এখন মিটিংয়ে আছে পরে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন।’
এব্যাপারে কুড়িগ্রাম পৌরসভা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উত্তম কুমার রায় জানান, ‘সাংবাদিকরা অনিয়ম পেলে নিউজ করবেন। আমাকে জানাবেন। তবে আমাকে বিবৃতকর পরিস্থিতিতে ফেলবেন না। কোনো কাজে অনিয়মের সুযোগ নেই। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন