বদলির ১০ মাসেও কর্মস্থল ছাড়ছেন না প্রকৌশলী, বদলি ঠেকিয়ে চলছে কমিশন বাণিজ্য

বদলীর ১০ মাস অতিবাহিত হলেও কর্মস্থল ছাড়েননি প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা। এর কারণ হিসেবে অবাধ ঘুষ বাণিজ্য থেকে বঞ্চিত হবেন এমন অভিযোগ রাজারহাটবাসীর। প্রতিটি নির্মাণ কাজে দুর্নীতিপরায়ণ প্রকৌশলীর নির্দিষ্ট কমিশন বাণিজ্য বন্ধের দাবি সাধারণ ঠিকাদারদের।

জানা গেছে, গত ২২ ফেব্রæয়ারি-২৪ইং তারিখে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আলি আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ সোহেল রানাকে পাশর্^বর্তী জেলা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে বদলী করা হয়।

কিন্তু তিনি অদৃশ্য কারণে বদলির অফিস আদেশ তোয়াক্কা না করে পূর্বের কর্মস্থল রাজারহাটেই অবস্থান করতেছেন। এ ঘটনায় সাধারণ ঠিকাদারদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

অনুসন্ধানে উঠে আসে আওয়ামী সরকারের কুড়িগ্রাম-২ আসনের স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার হামিদুর রহমানের মদদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকৌশলী সোহেল আহমেদের বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের তথ্য। সে সময় ওই এমপির সাথে গভীর সখ্যতার কারণে বদলির ১০ মাসেও তিনি বদলি হওয়া নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করে পূর্বের কর্মস্থল রাজারহাটেই ক্ষমতার খুঁটি পাকপোক্ত করে ঘুষবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের চাহিদা ভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়)’র আওতায় জোড়সয়রা হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ কাজের ৭২ লাখ ৯ হাজার ৩৯৯ টাকার কাজে ৩% কমিশন দাবি করে প্রকৌশলী সোহেল রানা। কাজটির প্যাকেজ নাম্বার-ব-ঞবহফবৎ/ঘইওউএচঝ/কটজ/জঅঔ/২০২৩-২৪/ ড১-.০৭.৪৬৭, যার টেন্ডার নাম্বার-৮৯৬৭০৮। কাজ শুরুর তারিখ ছিল ১৮ ফেব্রæয়ারি-২৪, কাজ সমাপ্তির তারিখ ছিল-১৫ নভেম্বর-২৪ইং।

সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, রাজারহাট এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মন্ডলের হাত দিয়ে প্রতিটি কাজের বিলে দুই থেকে তিন পার্সেন্ট কমিশন নিয়ে থাকে প্রকৌশলী সোহেল রানা।

রাজারহাটের ঠিকাদারী আরিফুল রহমান আরিফ বলেন, ‘ জোড়সয়রা হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজের সময় কমিশন দিতে রাজি না হওয়ায় তার বিল আটকে দেয়া হয় এবং তার ন্যায্য কাজের বিল আদায়ের জন্য ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয় তাকে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজারহাট উপজেলা এলজিইডি জনৈক ঠিকাদার বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার স্যার যেভাবে আমাদেরকে হয়রানি করে তা মনে হয় না অন্যকোন উপজেলাতে এরকম কোন ইঞ্জিনিয়ার করে। তিনি ছোট্ট সমস্যাকে তিলকে তাল বানিয়ে প্রতিটি বিল থেকে ২-৩% টাকা হাতিয়ে নেন। তা না দিলে মাসের পর মাস বিলের জন্য ঘুরতে হয়। একথাগুলো বললে ঠিকাদারদের নানারকম হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। যে কারণে কেউ মুখ খোলে না।’

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি রাকিবুল হাসান রনি বলেন, আমাদের কাছে অনেক ঠিকাদার ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের পর এমন ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ অপ্রত্যাশিত। আমরা দ্রæত তার অপসারণ দাবি করছি।’

এ ব্যাপারে কথা হলে রাজারহাট উপজেলা প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা বলেন, ‘আমার তিন বছর পূর্ণ না হওয়ায় আমি আমার কর্মস্থল ত্যাগ করি নাই। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়।’

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রাজারহাট উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানার অনিয়ম-দুর্নীতি ও বদলী ঠেকানোর বিষয়ে কথা বললে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কেএম জুলফিকার আলী বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের কোন ছাড় নেই। ঘুষ বাণিজ্যের প্রমাণ থাকলে তাকে আইনের আওতায় তুলে দিন। এছাড়া তিনি অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।