জয়শঙ্করকে পাল্টা জবাব
ভারতকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কেমন সম্পর্ক চায়


ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের একটি বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ‘বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়’—জয়শঙ্করের এমন মন্তব্যের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়।
আশপাশ থেকে দু’চারজন কী বললো না বললো সেটাতে মনোযোগ না দিয়ে আমরা বরং আমাদের সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করি।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জয়শঙ্করের বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন তিনি।
গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নয়াদিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য উৎসবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ বিষয়ে নানান কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নয়াদিল্লির সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক চায়। এই দুই প্রতিবেশী দেশ খুবই বিশেষ ইতিহাস ধারণ করে, যার শিকড় ১৯৭১ সাল।
মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, তিনি ( জয়শঙ্কর) বলেছেন, কেমন সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ, সেটা বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। একইভাবে ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। এটা দুই পক্ষেরই বিষয়, এটা বলাতে দোষের কিছু নেই।
নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের সিদ্ধান্তের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমার মনে হয়, আমাদের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত আছে এ ব্যাপারে। আমরা ভারতের সঙ্গে গুড ওয়ার্কিং রিলেশনস, সেটা চাই এবং একটা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ; যার যার আগ্রহের বিষয় আছে। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো অস্পষ্টতা নেই।
তৌহিদ হোসেন বলেন, তবে তিনি (জয়শঙ্কর) বলেছেন যে, বাংলাদেশের বিভিন্নজন বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলছে, সরকারের ভেতর থেকে। আমি এটা নিয়ে ন্যায়-অন্যায় উচিত-অনুচিত বিচার করতে চাই না। কিন্তু আমার কথা হলো, এ রকম কথা আমাদের এখান থেকে বলছে, ওনাদের ওখান থেকেও বলছে।
পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ওনাদের মুখ্যমন্ত্রী তো পারলে এখানে জাতিসংঘের ফোর্স পাঠায় দেয়। ওনাদের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অহরহ বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো চলতে থাকবে ধরে নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি, সম্পর্ক ভালো করা যায় কিনা, কাজেই আমোদের অবস্থান সেটাই। আশপাশ থেকে দু’চারজন কী বললো না বললো সেটাতে মনোযোগ না দিয়ে আমরা বরং আমাদের সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করি।
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সম্পর্ক ভালো করতে গেলে বরং আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যে ওখানে ভারতীয় আতিথেয়তায় থেকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন, এগুলো আসলে সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। ওনার বক্তব্য আগুনে ঘি ঢালছে, এটা তো স্বীকৃত ব্যাপার, এটা সবাই জানে।
ভারতের ভিসা প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভিসা তাদের অধিকার। তারা কাউকে ভিসা না দিলে আমাদের কিছু বলার নেই। যখন ভিসা দেওয়া হচ্ছে না তখন আমরা তো বিকল্প খুঁজে নিবই। কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের বিকল্প দেখতেই হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংখ্যালঘু নিযাতনের অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্পর্কে উনি আবার বলেছেন। এই অভিযোগ প্রধানত ভারতীয় মিডিয়া যে তথ্যপ্রবাহ সৃষ্টি করেছে তার ভিত্তিতে এইগুলো বিভিন্নজন বিভিন্নখানে বলে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ভারতের বিষয় হতে পারে না। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বাংলাদেশের বিষয়। ভারতের সংখ্যালঘুর বিষয়টি আবার তাদের বিষয়। কাজেই এ ব্যাপারটি অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন