জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত জাকির একমাত্র পুত্র হারিয়ে অর্ধপাগল মা

ঢাকায় দিনমজুরির কাজ করতো নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের ২৫ বছর বয়সী জাকির হোসেন। গ্রামের বাড়িতে একটা ঘর তৈরির স্বপ্নে কষ্টের রোজগারের টাকায় এক খন্ড জমি কিনেছিলো সে। কোটা সংস্কারআন্দোলন চলাকালে বিগত ২১ জুলাই ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় জাকির। তাকে কবরস্ত করা হয় সেই জমিতেই।

নিহত জাকির হোসেনের বাড়ি দুর্গাপুরের পূর্ব বাকলজোড়া গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে সে। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে এখন পাগলপ্রায় মা মিছিলি বেগম।

মৃত জাকিরের মা মিছিলি বেগম জানান, রাজধানীর বাড্ডায় মাকে নিয়ে ভাড়া থাকতো জাকির হোসেন। ঘটনার আগের দিন ওয়াসার পানির লাইন মেরামতের কাজে চিটাগং রোড এলাকায় গিয়েছিলো সে। কাজ শেষে আন্দোলন আর কারফিউয়ের কারণে বাড্ডায় মায়ের কাছে ফেরা হলোনা তাঁর।

২১ জুলাই বিকেলে চিটাগং রোড এলাকার একটি দোকানে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সে নিহত হয়। পরে অন্য সহকর্মীরা জাকিরের লাশ নিয়ে আসে বাড্ডায়, তাঁর মায়ের কাছে। পরদিন গ্রামের বাড়িতে ঘর নির্মাণের জন্য কেনা জায়গায় শেষ শয্যা হয় জাকিরের।

গত রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, জাকিরের উপার্জনে কেনা জমিতে কবরের পাশেই একটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ঘরে থাকবেন তার গৃহহীন মা মিছিলি বেগম। ঘরের কাজ ৫০ ভাগের মতো হয়েছে, জাকিরের কবরের পাশেই বাঁশের বেড়া ধরে দাড়িয়ে আছেন মা, ভাবছেন ছেলের রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো।

মিছিলি বেগম বলেন, ছোট সময় ঢাকা গেছিগা কষ্ট করছি অনেক, ছেলেও বড় হয়ে টাকা কামাইয়া সব কষ্ট দূর করে দিছিলো কিন্তু এভাবে সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে ভাবছি না। এখন ঘর হইলেই কি-না অইলেই কি ? আমার বিলাসিতা সবই শেষ। স্বপ্ন আছিলো বড় ঘরে তুলে ছেলেরে বিয়ে করিয়ে বউ আনবো কিন্তু কিছুই হইলো না আমার সব কিছুই শেষ। এখন কোনোভাবে বেঁচে আছি আমি এই আরকি।

জাকিরের উপার্জনে কেনা জায়গা থাকলেও তার মায়ের থাকার মতো কোনো ঘর ছিল নাই। রাতে থাকতে হতো আশপাশের কিংবা স্বজনদের বাড়িতে। বর্তমানে তাকে সমাজকল্যাণ পরিষদের বরাদ্দের একটি ঘর নির্মাণ করা দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, জাকিরের মায়ের নিকটতম আত্মীয় স্বজন কেউ নেই। থাকার মতো ঘর ছিল না।

এ বিষয়টি আমাদের মান্যবর জেলা প্রশাসক স্যার জানার পরে জাকিরের মাকে একটি ঘর প্রদান করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে নেত্রকোনা জেলার জন্য যে ঘরের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে একটি ঘর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত দুর্গাপুরের জাকিরের মা মিছিলি বেগমকে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত মাস থেকে এই ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি যে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঘরটি আনুষ্টানিক ভাবে বুঝিয়ে দিতে পারবো।