রিজার্ভ বেড়েছে
আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন একটা সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা এই দেশটাকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা আমাদের নীতিমালাও নিয়েছি। আমরা চাই, আমাদের যে সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাচন পর্ষদ, এই নির্বাচন পর্ষদে ভবিষ্যতে যারা প্রমোশন পাবে তাদের আপনারা নির্বাচিত করবেন।’
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী পর্ষদ-২০২০ (১ম পর্ব) এর ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব দিকে নজর রেখে আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজিয়েছি এবং সেই ধরনের ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। সেই সঙ্গে বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছি, যাতে সবধরনের ট্রেনিং আমাদের সবাই পায়। বর্তমানে যেমন সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য আধুনিক পদ্ধতি অর্থাৎ ট্রেস ট্যাবুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কমপারেটিভ ইভালুয়েশনের মাধ্যমে আপনারা কারা প্রমোশন পাওয়ার উপযুক্ত সেই দক্ষতা কার কতটুকু আছে এর তুলনামূলক মূল্যায়ন করে আপনারা সিদ্ধান্ত নেন।’
তিনি বলেন, ‘সেই সঙ্গে এটাও দেখতে হবে- শুধু খাতা-কলমে বেশি নম্বর পাওয়া নয়, যারা ফিল্ডে ভালো কাজ করতে পারে, কমান্ড করতে পারে বা নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা আছে কি না বা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো ক্ষমতা আছে কি না- সেগুলো আপনাদের বিচারে আনতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেশ স্বাধীন করেছি, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে যারা বিশ্বাসী, যারা বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী নিশ্চয়ই তাদের আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। দেশপ্রেমিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী হবে তারাই যেন দায়িত্ব পায়। যাতে সঠিক পথে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘যে সব অফিসার সামরিক জীবনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ্য নেতৃত্ব প্রদানে সফল হয়েছেন পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের আপনারা অবশ্যই বিবেচনা করবেন। সেটা আমি চাই।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেকোনো একজন অফিসার বা কর্মকর্তার পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের পেশাগত মান, তাদের যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাদের দক্ষতা বিবেচ্য বিষয় হবে, সেটা অগ্রাধিকার আপনারা দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আর যেহেতু একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী তাই যারা পদোন্নতি পাবে তারা সবসময় যেন একটা শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতে পারে। কারণ শৃঙ্খলাটাই হচ্ছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটা মেরুদণ্ড। কাজেই শৃঙ্খলা সম্পর্কে যারা যথেষ্ট সচেতন, অনুগত- তারা যেমন উপরে থাকবে তাদের প্রতি অনুগত থাকবে আবার অধস্তনদের বিষয়েও দায়িত্ববান হবে। এ বিষয়টাও দেখতে হবে, তাদের প্রতিও সহনশীল ও দায়িত্বসম্পন্ন হতে হবে। সেই ধরনের অফিসার আপনারা নিয়ে আসবেন। যারা সততা, বিশ্বস্ততা এবং আনুগত্য- কারণ সততা এবং বিশ্বস্ততা যদি না থাকে এবং আনুগত্য যদি না থাকে তাহলে কখনও ভালো লিডারশিপ দিতে পারে না, ভালো দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে না। কাজেই সেটা অত্যন্ত জরুরি। সেদিকে আপনারা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন যারা সৎ, ভালো গুণাবলিসম্পন্ন তাদের।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বোর্ডে বসে আপনাদের উপযুক্ত যারা তাদের নিয়ে আসবেন। যাতে আগামী দিনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আরও সুদক্ষ হয়। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয় এবং আমরা যেন সব সময় গর্ববোধ করতে পারি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেভাবে গড়ে তুলবেন সেটাই আমরা চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদে আপনারা সব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা একত্রিত হয়েছেন, আপনাদের প্রজ্ঞা, আপনাদের বিচার বুদ্ধি, আপনাদের ন্যায়পরায়ণতার ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। আমি এইটুকু অনুরোধ করব, এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে উপযুক্ত কর্মকর্তারা যাতে প্রমোশনটা পায়। আপনারা ন্যায়নীতির ভিত্তিতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই প্রমোশন দেবেন। যাতে সবার ভেতরে একটা আস্থা আসে। আমি জানি, অনেক উপযুক্ত থাকে সবাইকে দেয়া যায় না। কারণ পদটা সীমিত। তারপরও আপনারা অবশ্যই দেখবেন, যারা সত্যিকার উপযুক্ত তারা যেন প্রমোশন পায়।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দফতরের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা, সেনা প্রধান আজিজ আহমেদসহ তিন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আল্লাহর রহমতে আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে
তিন বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খুবই প্রয়োজনীয় ছাড়া অন্য ব্যয়গুলো আমরা আপাতত স্থগিত রাখব। যদি সুদিন আসে তখন আমরা করব। সত্যি কথা বলতে, জানি না ভবিষ্যতে আমরা কতটুকু করতে পারব। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, খুব স্বাভাবিকভাবে আমরা যে বাজেট দেই সেভাবে কিন্তু বাজেটটা দিয়েছি। বাজেটটা দিয়ে আমরা লক্ষ্য স্থির রেখেছি। এর ভেতরে যতটুকু অর্জন করতে পারি। অনেকে মনে করেছে, রিজার্ভ আমরা ধরে রাখতে পারব না। আল্লাহর রহমতে রিজার্ভ আমাদের বেড়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে যতটুকু সহযোগিতা দেয়া যায় আমরা সেটা করে যাচ্ছি। যার জন্য বাজেটে কিন্তু আমরা টাকা-পয়সা কম দেইনি। কিন্তু ব্যয় করার সময় সকলকে একটু সীমিতভাবে ব্যয় করতে হবে। এই কারণে বাজেটে আমরা বরাদ্দ ধরে রেখেছি। কিন্তু এই অর্থনৈতিক অবস্থায় কতটুকু অর্থ আমরা সংগ্রহ করতে পারব আর কতটুকু ব্যয় করতে পারব সেখানে আমাদের এখন থেকে হিসাব করে চলতে হবে। সেই অনুরোধটা আমি সকলকে করব।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে থেকে মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ। সেই কাজগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আপনারা করে যাচ্ছেন। আজকে করোনার জন্য সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে। খাদ্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা কতগুলো পদক্ষেপ নিচ্ছি, কারণ আমরা শুরু থেকে খুব সজাগ ছিলাম। যা-ই হোক আমাদের দেশের খাদ্যের অভাব যেন না হয়। কৃষিকাজ এবং কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া, সব রকম সহযোগিতা করা এবং খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য আমরা সব রকম ব্যবস্থা নেই। এই একটা দিক থেকে আমরা নিশ্চিন্ত আছি যে আমাদের খাদ্যে কোন সঙ্কট হবে না- আল্লাহর রহমতে। সেই সঙ্কট আমরা হতে দেব না।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেজন্য আমি ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি, এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে বা কোনো জলাভূমি যেন পড়ে না থাকে। ফলে আজকে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে দ্বিতীয়। চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে আছি।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তাটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কথায় বলে পেটে খেলে পিঠে সয়। সেই খাদ্য নিরাপত্তাটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন সচল থাকে এজন্য আমরা বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। করোনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের বাজেট আমরা দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি বিশ্বব্যাপী মন্দা চলতেই থাকে বা খারাপ হয় তাহলে হয়তো পারব না। কিন্তু পারব না বলে আমি পিছিয়ে যেতে রাজি নই। আমাদের আয়োজন থাকবে, প্রস্তুতি থাকবে এবং যতটুকু পারি আমরা করব এটাই আমাদের লক্ষ্য। মুজিববর্ষে আমাদের লক্ষ্যই ছিল- বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করব। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আমরা ৮.২ ভাগ অর্জন করব এটা আমাদের লক্ষ্য ছিল। এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমরা ৭.৮ ভাগ অর্জনও করেছি। কিন্তু করোনার ধাক্কায় সেটা ৫.৮ ভাগে নেমে এসেছে। তারপরও আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেছে, রিজার্ভ আমরা ধরে রাখতে পারব না। আল্লাহর রহমতে রিজার্ভ আমাদের বেড়েছে। ৩৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার আমাদের এখন রিজার্ভ। আমাদের রেমিট্যান্সও যথেষ্ট আসছে। সেখানে আমরা প্রণোদনা দিয়েছি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন