আসল লড়াইয়ের আগে বাংলাদেশ ৮৪তে অলআউট

মহেন্দ্র সিং ধোনি রাগ দেখাতেই পারেন। একে তো ব্যাটিং পাননি, তাঁর চেনা জায়গায় ফিল্ডিংও; ইচ্ছে করে ক্যাচটা যে ফেললেন, সেই উদ্দেশ্যও তো পূরণ হলো না! হার্দিক পান্ডিয়ার করা ইনিংসের ২৪তম ওভারের প্রথম বলে শর্ট থার্ড ম্যানে ধোনি ক্যাচটা ধরলেনই না। যেন বোলারদের আরও অনুশীলনের সুযোগ দিতে চান, শরীরী ভাষায় সেটাই স্পষ্ট হলো। অথচ পান্ডিয়ার ওই ওভারের পঞ্চম বলে রাহানে ক্যাচ নিয়ে খেলাটাই শেষ করে দিলেন!

বাংলাদেশের ‌‘পরিকল্পনা’ অবশ্য সফল হলো। বাংলাদেশ যে ঠিক করেছিল ভারতের বোলারদের ঠিকমতো অনুশীলন করতে দেবে না! না হলে ৩২৪ রানের জবাবে ২৪ ওভারে ৮৪ রানে অলআউট হওয়ার আর কোনো ব্যাখ্যা তো মেলে না। হ্যাঁ, ভারতের পেসাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছে। তাদের প্রশংসায় যত শব্দই খরচ করা হোক না কেন, কমতি থেকে যায়। কিন্তু তার পরও এমন ব্যাটিং-ধসের ব্যাখ্যা মেলা কঠিন।

বিনা উইকেটে ১১। স্কোর ১১-তে আটকে থাকতে একে একে তিন উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। স্কোর ২১ থেকে ২২-এ গড়াতে গড়াতে হারাল আরও তিন! এরপর সপ্তম ও অষ্টম উইকেটে ২৫ ও ৩০ রানের দুটি জুটি হলো। আটে নেমে মেহেদী মিরাজের ইনিংস সর্বোচ্চ ২৪, আর নয়ে নামা সানজামুলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮। এ ছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেনই কেবল মুশফিক। তাঁর ১৩ ছাড়া বলার মতো স্কোর কেবল অতিরিক্ত খাতে! ১২! চার ব্যাটসম্যানের নামের পাশে শূন্য।

এই ম্যাচের কোনো রেকর্ড থাকবে না। স্রেফ প্রস্তুতি ম্যাচ। তাতে নির্দিষ্ট একাদশও খেলে না। তবে ২৪০ রানে হেরে যাওয়ার মানসিক একটা ধাক্কা তো আছেই। এই ধাক্কা নিয়েই এক দিন পর টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ১ জুন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি আবার এ মাঠেই!

২১ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের শুরুতে ভারতকে ভালোই চেপে রেখেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শুরুটাও হলো প্রায় একই রকম। ১১ রানে ২ উইকেট নেই। ভারতকে ওই অবস্থা থেকে বের করেছিল ধাওয়ান-কার্তিকের জুটি। কিন্তু বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেট জুটি এক রানও যোগ করল না। চতুর্থ উইকেট জুটিটাও শেষ হলো ১০ রান যোগ করে। শূন্য রানে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহও। ২১ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ভারতীয় পেসের ধারে যখন ফালা-ফালা, যন্ত্রণা আরও বাড়ালেন উমেশ যাদব। ২২ রানে নেই আরেক উইকেট।

বলা হচ্ছে, ভারত এবার ট্রফি জিতলে তাদের পেসের ধারেই জিতবে! ৮ ওভারের ভুবনেশ্বর আর উমেশ যাদব বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে ফেললেন তিনটি করে উইকেট নিয়ে। ৩২৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ভীষণ চাপে। এক দিন বিরতি দিয়ে আসল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাংলাদেশ বড় ছন্দপতনের মুখে।

সৌম্যের আউটটি নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন থাকছে। বল উইকেটকিপারের গ্লাভসে যাওয়ার আগে ব্যাটের ছোঁয়া পেয়েছিল কি না। দুই বল পরেই সাব্বির যেভাবে জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে বোল্ড হলেন, তাতে প্রশ্ন উঠল তাঁর তিন নম্বর জায়গায় ব্যাট করার সামর্থ্য নিয়েও। স্কোরকে ১১তেই রেখে ফিরলেন অন্য ওপেনার ইমরুল। এই অবস্থা থেকে দলকে বের করতে পারতেন সাকিব। ৭ বলে সমান রান করে ফিরলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। ওই ওভারে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহও।

উমেশ যাদবই বা কেন পিছিয়ে থাকবেন ভুবনেশ্বরের চেয়ে! অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসেই শিকার করলেন মোসাদ্দেককে। ৪ ওভারে ১১ রান দিয়ে ভুবনেশ্বরের ৩ উইকেট। সমান ওভারে সমান রান দিয়ে সমান উইকেট যাদবেরও! ম্যাচ সেখানেই শেষ। মাত্র ৮ ওভারেই!

বাকি ১৬ ওভারে যা হলো, তা আসলে ভারতের বাকি বোলারদের শেষ চার উইকেট নিয়ে ভাগাভাগির লড়াই। মোহাম্মদ শামি, জসপ্রীত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিলেন একটি করে উইকেট। ৯টি উইকেটই পেসারদের!

এই ম্যাচে খেলেননি তামিম ইকবাল। ছিলেন না নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফিও। তবে বাংলাদেশের এমন ব্যাটিংয়ের কোনো ব্যাখ্যা এই দুজনের অনুপস্থিতিতে খোঁজার চেয়ে খড়ের গাদায় সুচ খোঁজাই ভালো।

বরং ভারতকে তো বোলিং অনুশীলন করতে দেইনি—এই আপ্তবাক্য বেশি যৌক্তিক শোনায়!