ইচ্ছাকৃত নম্বর কমানোর অভিযোগ কুবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে মিড-টার্ম পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের দাবি, সেশনজট কমাতে আন্দোলন করাতেই তাদের নম্বর ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। এছাড়া ঐ নম্বরপত্রের ছবি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ার পর অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এর ব্যাপক সমালোচনা করেন।
জানা যায়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ৮ম সেমিস্টারের ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড হেরিটেজ ম্যানেজমেন্ট’ কোর্সটি পড়ান বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক মুর্শেদ রায়হান। গত ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত মিড-টার্মের ঐ নম্বরপত্রে দেখা যায়, দ্বিতীয় মিড-টার্ম পরীক্ষায় দশ নম্বরে এক নম্বরের নিচে পেয়েছেন তিন জন। যাদের দুইজন পেয়েছেন ০.৬৭ ও একজন ০.৩৩। এছাড়াও দুই নম্বরের নিচে ১৩ জন, তিন নম্বরের নিচে ১৭ জন এবং চারের নিচে পেয়েছেন ৪ জন শিক্ষার্থী। নম্বর দেয়ার এই প্রক্রিয়া নিয়েই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী একই ব্যাচের অষ্টম সেমিস্টারের পরীক্ষা ২০২২ সালের জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঐ শিক্ষকের নির্ধারিত কোর্স সময়মতো শেষ না হওয়ায় প্রায় ১ মাস পর সেপ্টেম্বর মাসে এই সেমিস্টার শেষ হয়। এছাড়া ০.৩৩, ০.৬৭ দেওয়ার মাধ্যমে স্পষ্টতই ব্যক্তিগত ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের উপর প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি, আমাদের এতটুকু শিখা হয়েছে যে কোন প্রশ্নের উত্তর কীভাবে লিখতে হয়। আমরা এমন কোনো উত্তর লিখিনি যার জন্য ০.৩৩ বা ০.৬৭ পাবো। গতবছর আমরা বিভাগের সেশনজট নিরসনে আন্দোলন করেছিলাম যার জন্য আমাদের শোকজ করা হয়েছিল। আর সেই কারণে ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই আমাদের সাথে এমন করা হয়েছে।
এই বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হান বলেন, শিক্ষার্থীরা যা লিখেছে সে অনুযায়ী নম্বর পেয়েছে। প্রশ্নপত্রে চাওয়া উত্তরের সাথে তাদের খাতার উত্তরের মিল নেই। এ বিষয়ে যদি তাদের কোন অভিযোগ থেকেও থাকে তাহলে বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান, কোর্স টিচার আছে। একাডেমিকভাবে এর সমাধান হতে পারতো।
তিনি আরো বলেন, মিডটার্মের খাতাগুলো চাইলে ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড হেরিটেজ ম্যানেজমেন্ট’ কোর্সে অভিজ্ঞ কোনো শিক্ষককে দিয়ে পুনঃনিরীক্ষণ করা যাবে। তাহলেই বোঝা যাবে কীভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘আমার মনে হয় না কোন শিক্ষক ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ শিক্ষার্থীর উপর নিবে। তবে কোর্স টিচারের অধিকার আছে তিনি শিক্ষার্থীদের কেমন নম্বর দিবেন। শিক্ষার্থীরা যেরকম লিখেছে হয়তো সেরকম নম্বর পেয়েছে। এ সম্পর্কে কোর্স টিচারই ভালো বলতে পারবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ রশিদুল ইসলাম শেখ এই বিষয়ে বলেন, ‘এরকম কাজে শিক্ষক হিসেবে আমি নিজেই বিব্রত বোধ করছি। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের কোন কোর্সে এরকম নম্বর দেওয়া যায় তা আমার জানা ছিলো না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করতে পারে। বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সাথে নিচ্ছি। পরীক্ষার খাতাগুলো জব্দ করে গোপনীয়তার সাথে তৃতীয় কোনও পক্ষকে দিয়ে পুনঃর্মূল্যায়ন করতে দেওয়া হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে, ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেশনজট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে আন্দোলন করেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে এসময় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেশনজটের বিরুদ্ধে লিখালিখি করে। এতে ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ৪০ জন শিক্ষার্থীকে বিভাগ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন