উপকূলে সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে গ্রামবাসীর মানবেতর জীবনযাপন
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2023/02/IMG-20230206-WA0006-900x450.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
দেশের সর্ব দক্ষিণের সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদ কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা এলাকার বাসিন্দারা একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এলাকাবাসী বাসি জানান, এই সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেন কয়রা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম বাহারুল ইসলাম। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ওই গ্রামের প্রায় দেড়শ পরিবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ৩১ জানুয়ারী এলাকাবাসী ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে দক্ষিণ বেদকাশী চোরামুখা গ্রামে মানববন্ধনও করেন৷
লিখিত অভিযোগ ও মানবন্ধনে গ্রামবাসীরা জানান, এই এলাকার মানুষ এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। প্রত্যেক বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ভিটেমাটি সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এর মধ্যেই একটি বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। কিছু বললেই তুলে নিয়ে করেন মারধর। দেখান মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি। আলোচিত, সমলোচিত ও একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বাহারুলের ওই বাহিনী এই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নিরীহ জনসাধারণের প্রতি তারা পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে অত্যাচার-নির্যাতন।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলার পর তাদের জমি-জমা নদীর পানির প্রবল স্রোতে ভিন্ন রূপ নিয়েছে। কোথাও ধানের জমি গহীন খালে পরিণত হয়েছে। এমন একটি খাল চরামুখা। যেখানে তাদের গ্রামের দেড়শত পরিবারের প্রায় ৪ শত বিঘা জমি রয়েছে। অতীতে যেখানে মৎস্য চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা। কিন্তু গত কয়েক বছর রিজভী, মাসুদ রানা নামের দুই ব্যক্তি বিভিন্ন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে ওই খালটি জবর দখল করায় তারা অর্থনৈতিকভাবে এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।
তারা আরও বলেন, কৌশলে ওই দুই ব্যক্তি এখন এলাকার কতিপয় বেকার যুবকদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলেছেন। ওই বাহিনীর ভয়ে এলাকাবাসী মুখ খুলতে সাহস পান না। এমন কি তাদের জমির বাৎসরিক ভাড়া (হারি) চাইতে গেলেও আটকে রেখে মারপিট করা হয়। তারা এলাকায় হরিণ শিকার চক্র নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, মাদক সেবন ও বিকিকিনিসহ নানা অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত।
ওই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য প্রশান্ত কুমার মন্ডল বলেন, কয়রা সদরের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম বাহারুল ইসলাম এর সহযোগিতায়, রিজভী, হরি মণ্ডল ও মাসুদ রানা কিছু বখাটেদের সাথে নিয়ে আমাদের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। সম্প্রতি নদী থেকে বালু উত্তোলনকালে পাইকগাছার রাড়ুলীর মোকসেদ গাজীর একটি কার্গো ৩ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে মারপিট করে কপোতাক্ষ নদে ডুবিয়ে দিয়েছে। পরে মামলা হলে জেলও খাটেন তারা। জেল থেকে বেরিয়ে আবারও বেপোরোয়া এই বাহিনী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিত কুমার মন্ডল জানান, দেশ স্বাধীন করেও আমরা স্বাধীন হতে পারলাম না। অস্ত্রের মুখে জীবননাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের দেড়শ’ পরিবারের জায়গা দখল করে রিজভী, হরি ও মাসুদের নেতৃত্বে। তার বাহিনী জমির হারির টাকা না দিয়ে মৎস্য চাষ করছে। এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করলে বাড়ি এসে জীবননাশের হুমকি দেয়। যে কারণে জীবনের ভয়ে কেউ মুখ খুলে না।তাদের সকল শেল্টার দিয়ে থাকেন কয়রা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল।
মেদের চর এলাকার দেবাশীষ মন্ডল জানান, ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের পর এই এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। সেই থেকে এলাকার মানুষ নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছেন। মানুষের আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। তারপরও গ্রামের খাল ও জলাশয়গুলো এই সন্ত্রাসী বাহিনী দখল করে মাছ চাষ করায় তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে কয়রা থানার ওসি (তদন্ত) ইব্রাহিম আলী জানান, শুনেছি খাল নিয়ে একটা ঝামেলা চলছে। মাদক, সন্ত্রাস ও কোন অপরাধ কর্মকান্ডে কেউ জড়িত থাকলে আমাদের জানালে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পুলিশ সুপার মাহবুব হাসান (বিপিএম) এর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (০১৩২০-১৪০১০০) ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন